|
|
|
|
সঞ্চালনায় নেই
তবে মাঠে আছি |
|
|
হ্যাঁ সত্যিই আমি আইপিএল ৬-এর সঞ্চালক হিসেবে থাকছি না।
তবে ভাল খবর এটাই যে আমি কিন্তু স্টেডিয়ামেই থাকছি। খেলার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আগের মতোই মজবুত থাকবে। আর হবে নাই বা কেন? গত কয়েক বছর ধরে আইপিএল আমাকে আমার জীবনের সেরা কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়েছে।
আইপিএল-এর শোগুলো সঞ্চালনা করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। দু’বছর ধরে তা করেছি। এমন অনেক সময় এসেছে যখন প্রায় কানের পাশ দিয়ে বল বেরিয়ে গিয়েছে। একটুর জন্য জখম হইনি।
|
গৌরব কপূর |
একটা আইপিএল সিজনের কথা মনে আছে। আমি তখন মাঠে। বীরেন্দ্র সহবাগ মাঠে প্র্যাকটিস করছেন। আর সেটা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। হঠাৎ একটা বল, বীরুর ব্যাট ছুঁয়ে প্রায় আমার মাথায় এসে লাগছিল। একচুলের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম সে দিন। বলটা যে আমার চুল ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল তাও অনুভব করতে পেরেছিলাম!
আর এক বারের ঘটনা বলি। যুবি একটা শট মারে। আর বলটা এসে সোজা আমার কাফ মাসলে লাগে। খেয়ালই করিনি যে ডেঞ্জার জোনে দাঁড়িয়ে আছি। তবে টেলিভিশনে আমাকে দেখে কেউ কিন্তু বুঝতেই পারেনি যে আমি আহত!
সঞ্চালনার সব থেকে কঠিন দিকটা হল, মাঠে সব সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। আর নিজেকে প্রতি মিনিটে তৈরি রাখতে হয়। ক্রিকেটাররা খুব স্বাভাবিক ভাবেই খেলার মাঠের উত্তাপটাতে অভ্যস্ত হয়ে যান। চেন্নাই, হায়দরাবাদ বা কলকাতার মতো শহরে ম্যাচ হলে, ওই ভয়ঙ্কর রোদের মধ্যে লাইভ অনুষ্ঠান করা বড়ই ক্লান্তিকর। সান্ত্বনা একটাই, ওই পরিস্থতিটা আরও ২২ জন খেলোয়াড়কে সামাল দিতে হয়। তবে পার্থক্যটা হল, ক্রিকেটারদের কাছে যে জিনিসটা খুব স্বাভাবিক, সঞ্চালকদের কাছে অতটা নয়। তার ওপর সঞ্চালকদের মাথায় সব সময় নিজেকে গ্ল্যামারাস দেখানোর একটা বাড়তি চাপ থাকেই। তাই কাজটা বেশ কঠিন তো বটেই।
সব চেয়ে খটমট ব্যাপারটা ঘটে খেলার সরাসরি সম্প্রচার থাকলে। কানের পাশে পনেরো সেকেন্ডের কাউন্টডাউন চলে। স্বীকার করতেই হবে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যায় কখনও কখনও। ঠিক কখন কাউন্টডাউন শেষ হবে আর সম্প্রচার শুরু হবে, কাজটা করতে করতে সে ব্যাপারে একটা সূক্ষ্ম বোধ তৈরি হয়ে যায়।
|
|
|
‘‘একটা লাইভ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে গিয়ে সব থেকে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হয়
সামনের বক্তাকে এটা বোঝানো যে তাঁর কথা বলার সময় শেষ!’’ |
|
একটা লাইভ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে গিয়ে সব থেকে ইন্টারেস্টিং ব্যাপারটা হল সামনের বক্তাকে এটা বোঝানো যে তাঁর কথা বলার সময় শেষ! এটা বোঝাতে গিয়ে আপনাকে রূঢ় হলে কিন্তু একেবারেই চলবে না। আর কারও বক্তব্যকে কেটে ছেঁটে ছোট করারও প্রশ্ন আসছে না। এ সব সামলেও খেলা সম্পর্কে আলোচনাটা এমন ভাবে চালিয়ে যেতে হবে যাতে প্রত্যেকে সমান ভাবে বলার সুযোগ পায়। কাজটা করতে বেশ খানিকটা কৌশলের প্রয়োজন।
এটার জন্য আমি নিজের মতো করে একটা ফন্দি বের করেছিলাম। কোনও বক্তার সময় যে শেষ সেটা বোঝানোর জন্য আমার আঙুলের একটা ভঙ্গি করতাম, যাতে তিনি বোঝেন যে সময় শেষ। এ বার অন্যের কথা বলবার পালা। তবে নভজ্যোত সিংহ সিধুকে কথা বলা থেকে বিরত করাটা বেশ কঠিন! যদিও আমি সেটাও করেছি! শো-এর অতিথিদের সঙ্গে এই সংযোগটা তৈরি করে নিতে হয় যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়।
এক বার শো-তে সুনীল গাওস্কর এসেছিলেন। সময় শেষ হয়ে গেলে ওঁকেও আমি একই ভাবে থামার ইঙ্গিত করি। তবে হ্যাঁ, গোটা ঘটনায় যাতে সামনের মানুষটি ক্ষুণ্ণ না হন সেটা দেখার দায়িত্ব অবশ্যই সঞ্চালকের। আমি সেটা মাথায় রাখতাম আর কখনওই কাউকে এটা নিয়ে বিব্রত হতে দিইনি।
তবে কখনও কখনও ছোটখাটো ভুল-ত্রুটিও হয়েছে। যেমন ধরুন হঠাৎ স্ক্রিনে টেলিকাস্টটা বন্ধ হয়ে গেল। বা কোনও অডিও যোগাযোগ বিগড়ে গেল। অনেক সময় ব্রেক নিতে গিয়ে আমি উল্টে ‘স্টুডিও’ বলে ফেলেছি। তবে গৌরব আর সমীর কিন্তু খুব সতর্ক থাকত। আর এ রকম কিছু হলেই ওরা ঠিক সামলে নিত। সেটা সম্ভব হত কারণ আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব ভাল ছিল। |
|
‘‘বীরু প্র্যাকটিস করছেন। হঠাৎ একটা বল বীরুর ব্যাট ছুঁয়ে আমার প্রায়
মাথায় এসে লাগছিল। একচুলের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম সে দিন’’ |
|
সমীর খুব ঠান্ডা মাথার আর বেশ ধীর-স্থির। হিন্দি আর ইংরেজি দু’টো ভাষাতেই বেশ স্বচ্ছন্দ ও। ওকে দেখেছি মাঠে খানিকটা সময় নিজের মতো চুপচাপ কাটাত। ওই সময়টাতে, শো-তে কী বলবে না বলবে ভিতরে ভিতরে সেটার একটা প্রস্তুতি নিত।
অন্য দিকে গৌরবের মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার রয়েছে। তবে ওর সময়জ্ঞান কিন্তু অসাধারণ! সঞ্চালকদের সাধারণত অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই পৌঁছে
|
সমীর কোচার |
যেতে হয়। তবে গৌরব কোনও দিনই নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে উঠতে পারেনি। প্রযোজক, পরিচালক— চিন্তায় সবার অবস্থা শোচনীয়। এ রকম অবস্থায় হাতে পনেরো মিনিট বাকি থাকতে গৌরব এসে পৌঁছবে। তবে ওর সব চেয়ে বড় গুণ হল, যে মুহূর্তে এসে পৌঁছল, তখনই ও কাজের জন্য তৈরি। কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই নিজের সেরাটা দেয়। প্রত্যেক বার দেখেছি, একটু আগেও যাঁরা ওর দেরি করে আসার জন্য মাথার চুল ছিঁড়ছিলেন, তাঁরা ওর কাজ দেখে দেরির ব্যাপারটাই ভুলে যাবেন।
বলা বাহুল্য পুরনো কথা মনে করলে অনেক রকম স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আইপিএল-কে খুব মিস করব এ বার। তবে আমি যে পুরোপুরি টুর্নামেন্টটা থেকে বাইরে তা নয়। কলকাতাতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়াটা প্রথম থেকেই আমার জন্য ‘মাস্ট’ ছিল। একটি ট্রাভেল পোর্টালের জন্য হায়দরাবাদ সানরাইজারস-এর দলের কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে একটা বিজ্ঞাপন শু্যট করলাম। তা ছাড়া, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস-এর ম্যাচগুলোতে আমি থাকব। গত বছর আমাকে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস-এর তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে আমি ওদের লাকি ম্যাসকট। আমাকে পয়া মনে করে বলেই ওরা চায় এ বছরও আমি ওদের জন্য মাঠে থাকি। |
|
|
|
|
|