ফের কালনা হাসপাতালে সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ হল সোমবার। তবে এ বার আর রোগীর পরিবার বা আত্মীয়েরা নন, বিক্ষোভ দেখিয়েছেন খোদ হাসপাতালের কর্মীরা। গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি, নার্স, ব্লাড ব্যাঙ্ক, প্যাথলজি-সহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা এ দিন বিক্ষোভে সামিল হন। তাঁদের দাবি, হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনায় চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। তার জেরে বার বার বহিরাগতেরা হাসপাতালের উপর চড়াও হচ্ছেন। বিনা দোষে মার খেতে হচ্ছে তাঁদের। পরে বিক্ষোভ মেটার পরে একটি বৈঠক হয় হাসপাতালে। হাজির ছিলেন কালনার ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক চিরন্তন প্রামাণিক, বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষ মণ্ডল, সুপার অভিরূপ মণ্ডল-সহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা। |
সুপারকে ঘিরে চলছে বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র। |
গত বৃহস্পতিবার কালনা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন হুগলির এক যুবক। শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সে দিন তাঁর পরিবার ও পরিজনেরা হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এক চিকিৎসক-সহ চার স্বাস্থ্যকর্মী মার খান। এ দিন বেলা ১টা নাগাদ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে সুপার অভিরূপবাবুকে ঘেরাও করেন কর্মীরা। তাঁদের প্রশ্ন, বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না করে কেন গত শুক্রবার ও শনিবার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে ছেড়ে দেওয়া হল। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে ফোন করে ডেকেও হাসপাতালে নিয়ে আসা যায় না বলে অভিযোগ। কারণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রাতে এলাকার বাইরে থাকেন। তখন সাধারণ চিকিৎসককে দিয়ে কাজ মেটাতে হয়। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, হাসপাতালে দু’জন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ থাকলেও সোমবার তাঁদের এক জনও কাজে যোগ দেননি। ফলে এই বিভাগে কোনও রোগীকে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। প্যাথলজি বিভাগের কর্মীদের সপ্তাহে ছ’দিন হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও সপ্তাহে মাত্র দু’দিন তাঁরা হাসপাতালে আসেন। খানিকক্ষণ থেকে বেরিয়ে যান। পরিষেবা না পেয়ে হয়রান রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা তাদের উপর রাগ উগরে দেন। মার খেতে হয় তাঁদের। এক নার্স বলেন, “১৫ বছর হাসপাতালে কাজ করছি। এত জঘন্য পরিষেবা কখনও দেখিনি।” বিক্ষোভ চলাকালীন হাসপাতালে পৌঁছন সুভাষবাবু। তাঁকেও বিক্ষোভ দেখান কর্মীদের একাংশ।
এর পরে হাসপাতালের ওই বৈঠকে চিরন্তনবাবু সুপারকে জানান, প্রয়োজনে বিষয়গুলি স্বাস্থ্য দফতরের ঊর্ধ্বতন আধিকারিক থেকে জেলাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মহলে জানাতে হবে। ঠিক মতো ‘ডিউটি’ করতে না পারলে পরিষেবা বিধি ভাঙার অভিযোগও উঠতে পারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও মহকুমাশাসকের বক্তব্য, কোনও কারণে এক জন চিকিৎসক ছুটি নিলে, অন্য কাউকে কাজে বহাল থাকতেই হবে। সুপার জানান, নির্দেশগুলি মেনে চলবেন তাঁরা। বিশ্বজিৎবাবু জানান, “মেডিসিন বিভাগে স্থায়ী চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্র নিজে স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে বিষয়টি জানাব।” |