ভুক্তভোগীদের চেষ্টায় বাড়ছে
অটিজম সচেতনতা
ছেলেটা কথা বলতে শিখছে না। খেলতেও চায় না। চেনা পরিবেশের বাইরে কিছুতেই বেরোতে চায় না। বরং নিজেকে গুটিয়ে রাখে। জোর করলে রেগে যায়।
বাবা-মা ভেবেছিলেন, এটা নিছকই খামখেয়ালিপনা। বছর কয়েক বয়স হওয়ার পরেও যখন স্বভাবটা বদলাল না, তখন তাঁরা ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার বললেন, ভিটামিনের ঘাটতি। ওষুধ লিখে দিলেন। তাতেও না সারায় তন্ত্র-মন্ত্র, তাবিজ-কবচ কিছুই বাকি থাকল না। কিন্তু কিছুতেই লাভ হল না। কৈশোর পেরনোর পরে ধরা পড়ল সমস্যাটার নাম ‘অটিজম’। ছেলেটার পরিবারের কেউ ওই শব্দটা আগে শোনেনইনি।
এ হল সিঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প। চারপাশের মানুষের সচেতনতার অভাবের মাশুল গুনেছে সিঞ্জন। মাশুল গোনে তার মতো আরও অনেকেই। আর তাই তাদের প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা শুরু হয় দেরিতে। সমাজের মূল স্রোতে মানিয়ে নিতে যে প্রশিক্ষণ একান্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু তা সময়মতো না পাওয়ায় অধিকাংশ সময়ই পিছিয়ে পড়তে হয় তাদের।
অটিজম নিয়ে সচেতনতা তৈরি বা প্রশিক্ষণের কাজে এখনও পর্যন্ত ভরসা শুধু কিছু ভুক্তভোগী পরিবার। নিজেদের তাগিদ থেকেই যারা এই কাজটা শুরু করেছে। যেমন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের শিক্ষিকা মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ছেলে অটিজমের শিকার। ছেলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে গিয়েই তিনি টের পান, পরিকাঠামো বলে আসলে কিছুই নেই। তখনই জন্ম নেয় একটা সংগঠন গড়ে তোলার তাগিদ। ২০০০ সালে আরও কয়েকজন অটিস্টিক শিশুর বাবা-মায়ের সহায়তায় তৈরি করেন একটি সংগঠন। মল্লিকাদেবী বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সমস্যাটা ধরা পড়ে ততই সুবিধা। আমার ছেলের ১০ মাস বয়সে প্রথম টের পাই। কিন্তু মায়ের মন তো, গোড়ার দিকে নিজেই মানতে চাইনি। বছর দু’য়েক বয়স হওয়ার পরে নিশ্চিত হই। তার পর থেকে লড়াইটা চলছে।” সম্প্রতি অটিজম নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন তাঁরা, যাতে অংশ নিয়েছে অটিস্টিক শিশু ও কিশোররাই। গবেষক অমৃতা পান্ডা জানিয়েছেন, ওই তথ্যচিত্রটি যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখানো যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছেন তাঁরা।
অটিজম থাকলে প্রথম তিন বছরের মধ্যে তা বোঝা যায়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, প্রতি ১০০ জনে এক জন এই সমস্যায় আক্রান্ত। অথচ এমন একটা সমস্যা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনও তরফেই তেমন কোনও প্রচার নেই। আর সেই কারণেই অভিভাবকরা অনেক দেরিতে সমস্যাটা ধরতে পারেন। রাজ্যের প্রতিবন্ধী কমিশনার মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামের অবস্থা ভয়াবহ। আমরা ঠিক করেছি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক, অঙ্গনওয়াড়ি এবং আশা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেব, যাতে প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে তাঁরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম এক ধরনের স্নায়ুগত সমস্যা, যা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে কিছু মানসিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। শিশুটি সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না, নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না, অন্যের বক্তব্য বুঝতেও চায় না। ‘অটিজম সোসাইটি অব ওয়েস্টবেঙ্গল’-এর প্রতিষ্ঠাত্রী ইন্দ্রাণী বসুর কথায়, “রোগ নির্ণয়ের পরেও মূল সমস্যাটা বুঝতে সময় লাগে। সেই কারণেই অটিস্টিকদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াটা জরুরি।” তিনি জানান, বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরাও সমস্যাটা গোড়ায় ধরতে পারেন না। কথা শিখতে দেরি হলে ‘ও কিছু নয়, ঠিক হয়ে যাবে’ বলে ছেড়ে দেন। এতে কিন্তু সময় নষ্ট হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অটিজমের মাত্রাভেদ থাকে। কম মাত্রায় থাকলে সেই শিশু সাধারণ স্কুলে আর পাঁচ জনের সঙ্গেই পড়াশোনা করতে পারে। কিন্তু মাত্রা বেশি হলে অনেকেই তা পারে না। তাদের জন্য প্রয়োজন ‘স্পেশ্যাল স্কুল’। কিছুটা হলেও স্বাভাবিক মানের জীবনযাত্রা তারা পেতে পারে, যদি সামাজিক সমর্থনটা পাওয়া যায়। সমাজ এখনও অটিজমের ব্যাপারে কম জানে, তাই সহানুভূতি বা সহমর্মিতা এখনও অনেক কম।
শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, নিয়মিত তাঁদের কাছে অটিজমের উপসর্গ নিয়ে প্রচুর শিশু আসছে। তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের যা উচিত, তা হল নিজের হাতে না রেখে শিশু মনোবিদ বা এই ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া।”
এখানেও সমস্যা। এমন সংগঠনের সংখ্যা এখনও এতই কম, যে বহু বাবা-মায়েরই সঠিক জায়গায় পৌঁছনো হয়ে ওঠে না। স্রেফ অন্ধকারে হাতড়ে যান তাঁরা।

উপসর্গ
কী করবেন
• দেরিতে কথা বলা

• মেলামেশায় অনীহা

• স্বাভাবিক খেলাধুলো না করা

• ইশারা বুঝতে না পারা

• স্বভাবে একগুঁয়েমি

• ইন্দ্রিয় অনুভূতির ক্ষেত্রে
অতিরিক্ত সংবেদনশীল
• শিশু চিকিৎসক ও মনোবিদের পরামর্শ নিন

• অটিজম স্ক্রিনিং করান

• প্রশিক্ষণ দেয় এমন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন

• সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন

• বাড়িতে কেমন ব্যবহার করবেন,
প্রশিক্ষকের থেকে শিখে নিন

• আশপাশের লোকজনকেও বোঝান



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.