নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
অপহরণের অভিযোগের আড়াই মাস পরেও স্বামী উদ্ধার না হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী। সোমবার প্রধাননগরের জংশন এলাকায় বাপের বাড়িতে বসে ওই গৃহবধূ সুনীতা দাগা জানান, গত ২০১২ সালের ৫ মার্চ থেকে তাঁর স্বামী কমল দাগা নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি সন্দেহ করছেন, তাঁর কাছ থেকে দূরে সরানোর জন্য কমলবাবুকে তাঁর পরিবারের সদস্যরাই অপহরণ করে আটকে রেখেছেন। তিনি বলেন, “সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকে আমার উপরে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। স্বামীও আমার উপরে অত্যাচার করতেন। এর পরেই একদিন বাড়ি থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। স্বামীকে অপহরণ করে আটক করে রাখা হয়েছে বলে আমার সন্দেহ।”
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার জানান, এক বছর ধরে কমলবাবু নিখোঁজ হয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তির খোঁজ করা হচ্ছে।” সুনীতাদেবীর শাশুড়ি মানকিদেবী অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি অসুস্থ মানুষ। এক বছর ধরে আমার ছেলে কোথায় আছে তা জানি না। কেন এ সব অভিযোগ করা হচ্ছে তা জানি না।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রধাননগরের বিআরআই কলোনির বাসিন্দা সুনীতা দেবীর সঙ্গে প্রকাশনগরের কমলবাবুর বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় সুনীতা অন্তঃসত্ত্বা হন। তা নিয়েই বিরোধের সূত্রপাত বলে সুনীতার দাবি। তিনি অভিযোগ করে জানান, স্বামী সহ পরিবারের সকলেই গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দেয়। তিনি বলেন, “শ্বশুরবাড়ির কেউই সন্তান নিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু আমি গর্ভপাত করাতে রাজি ছিলাম না। বাপের বাড়ির সবাইকে বিষয়টি জানাই। শেষে আমাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সন্তান জন্মের পর স্বামী নিয়মিত আসতেন। পরে আমি সন্তানকে নিয়েই স্বামীর বাড়িতে যাই। সে সময় আমার উপরে ফের অত্যাচার শুরু হয়। কিন্তু আচমকাই কয়েকদিন পরে স্বামী সেখান থেকে বেপাত্তা হয়ে যান। আর ফেরেননি।”
তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, কমলবাবুরা চার ভাই। তাঁদের শিলিগুড়িতে একটি বাড়ি থাকার পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের ঘুমেও একটি বাড়ি রয়েছে। দু’জায়গাতেই ব্যবসা রয়েছে তাঁদের। সুনীতা দেবীর অভিযোগ, ঘুমে ইকমলবাবুকে আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমানে এক বছরের সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে রয়েছেন সুনীতা দেবী। তাঁর বাবা অসুস্থ। কোনও রকমে সংসার চলে তাঁদের। তিনি বলেন, “এ ভাবে কত দিন চলবে বুঝতে পারছি না।’’ দার্জিলিং জেলার একটি আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনের তরফে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের আশা, পুলিশ ওই ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। |