পরীক্ষার দিনেই কিছু ক্ষেত্রে ফের পরীক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দফার পরীক্ষার জন্য কী ভাবে প্রার্থী বাছাই হবে, সেই বাছাই আইনসঙ্গত হবে কি না এই সব প্রশ্ন জোরদার হয়েছে।
রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে সোমবার জানানো হয়, অনিবার্য কারণে যে-সব প্রার্থী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং প্রশাসনের কাছে পরীক্ষার দিনেই সেটা নথিভুক্ত করিয়েছেন, শুধু তাঁদের জন্যই ফের পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। এই ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হবে না বলে মনে করছে পর্ষদ।
পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় নানান ত্রুটি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফার পরীক্ষার জন্য আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছেন। যে-সব সংস্থা বড় আকারের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের কোনও পরীক্ষা দ্বিতীয় দফায় নেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল কি না, সংগ্রহ করা হচ্ছে সেই তথ্য।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রবিবারেই জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। যদিও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে বলে মনে করছে সরকার। মহাকরণ সূত্রের খবর, এর জন্য সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্রাত্যবাবুর প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকার দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার আয়োজন করতে চাইছে। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী কী করে সুষ্ঠু পরীক্ষা হয়েছে বলে মনে করছেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএম বলছে, এই পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থ। কার বা কাদের জন্য এটা হল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি।
ওই দিন সাড়ে ছ’হাজার কেন্দ্রে ৪৫ লক্ষ প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল পর্ষদ। কিন্তু নানা বিপত্তিতে অনেক প্রার্থীই সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। কোনও কোনও প্রার্থীকে পর্ষদ পরীক্ষা কেন্দ্রের ভুল ঠিকানা দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে, কোথাও লরি উল্টে বা রেল অবরোধের জেরে নাকাল হয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। পর্ষদ-সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য রবিবারেই জানান, অনিবার্য কারণে যাঁরা পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি, তাঁদের ফের পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
পর্ষদ সূত্রের খবর, বহু প্রার্থীই অনিবার্য কারণে পরীক্ষা কেন্দ্রে দেরিতে পৌঁছনোর কথা স্থানীয় থানা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় তাঁদেরই সুযোগ দিতে চায় রাজ্য। তবে এ ভাবে বাছাই করা কিছু প্রার্থীর ফের পরীক্ষা নেওয়া কতটা আইনসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ব্রাত্যবাবু বা মানিকবাবু এই বিষয়ে এ দিন মন্তব্য করতে চাননি। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন নয়া পরীক্ষার জন্য আটকে থাকবে না বলে সরকারি সূত্রের খবর।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর অভিযোগ, রবিবার টেট-এর প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। ১টা থেকে ২টো পরীক্ষার কথা থাকলেও অনেকে সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছতে পারছেন না বলে খবর পেয়ে সময়সীমা এক ঘণ্টা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বিকেল ৪টে, ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলেছে বলে অভিযোগ। বিমানবাবু বলেন, “১টা ৫ মিনিটে যে-প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়েছে, ২টো ৫, এমনকী ৪টে ৫ মিনিটেও পরীক্ষা হল সেই প্রশ্নপত্রেই। এখন সকলের কাছে মোবাইল ফোন থাকে। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। এই পরীক্ষার আর কোনও মাথামুন্ডু রইল কি?” তাঁর অভিযোগ, লরির উপরে ‘মালের মতো চড়ে’ পরীক্ষা দিতে গিয়েছেন অনেকে। তা সত্ত্বেও সকলে পরীক্ষা দিতে পারেননি। জয়েন্ট এন্ট্রান্স থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন সব পরীক্ষার ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার নাজেহাল হচ্ছে।
টেট-বিভ্রাটের প্রতিবাদে এ দিন ডিওয়াইএফ-সহ বাম যুব সংগঠনগুলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। ডিওয়াইএফের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুরে গোলমালের খবর নেই। তাই ওই জেলা বাদে সর্বত্র বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।” পরীক্ষা-বিভ্রাটের প্রতিবাদে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও এ দিন কলেজ স্কোয়ার থেকে কলেজ স্ট্রিট মোড় পর্যন্ত মিছিল এবং ১৫ মিনিট পথ অবরোধ করে। |