পিঠোপিঠি অবস্থান আজ
ভোট চেয়ে পথে বাম, পাল্টা নামছে তৃণমূলও
ঞ্চায়েত ভোট কবে হবে, ঘোরতর অনিশ্চিত। এই বিলম্ব নিয়েই এ বার পরস্পরের বিরুদ্ধে ময়দানে নামছে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী শিবির!
তৃণমূল নিজেদের স্বার্থেই পঞ্চায়েত ভোট পিছোতে চাইছে বলে সরব বিরোধীরা। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরকারের সংঘাত আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় সেই প্রচার আরও গতি পেয়েছে। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নেতৃত্বে বাম নেতারা সোমবার দ্বারস্থ হন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের। ঠিক সময়ে ভোট না-হলে মেয়াদ উত্তীর্ণ পঞ্চায়েত আর কেন্দ্রীয় অর্থ পাবে না এবং তাতে উন্নয়ন আটকে যাবে এই কথা বলে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামেরা। ঠিক সময়ে পঞ্চায়েত ভোটের দাবিতে আজ, মঙ্গলবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে। বিরোধীদের প্রচার ভোঁতা করতে সক্রিয় হয়েছে তৃণমূলও। রাতারাতি শাসক দলের সিদ্ধান্ত, পঞ্চায়েত ভোটের দাবিতে আজই ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে দুপুর ২টো থেকে ৫টা পর্যন্ত পাল্টা অবস্থান করবে তারা!
বামেদের কর্মসূচি ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে এ দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “অবিলম্বে পঞ্চায়েত ভোট করার দাবিতে এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন, কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএমের অশুভ আঁতাঁতের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে নামছি।” তৃণমূলের মূল তির অবশ্যই কমিশনের দিকে।
রাজ্যপালকে লেখা চিঠি হাতে বিমান বসু। পাশে ক্ষিতি গোস্বামী। —নিজস্ব চিত্র
মেট্রো চ্যানেলের মঞ্চ থেকেই আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায় ঘোষণা করা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য ওই অবস্থানে যোগ নেওয়ার কর্মসূচি নেই। প্রসঙ্গত, মমতা-সরকারের জমানায় মেট্রো চ্যানেলে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয় না কোনও রাজনৈতিক দলকে। কিন্তু তৃণমূল বা তার কোনও শাখা সংগঠন চাইলে যে কয়েক
ঘণ্টায় মেট্রো চ্যানেলের ব্যবস্থা হয়ে যায়, এই ঘটনাতেই তা স্পষ্ট বলে বিরোধীদের অভিমত।
আলিমুদ্দিনে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে বিমানবাবু অভিযোগ করেন, “তৃণমূল প্রার্থীদের নিয়ে দলের মধ্যে বিবাদ মেটাতে না-পেরেই পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দেওয়া হল!” বিকালে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন, “এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যার জন্য পঞ্চায়েত ভোট সময়ে করা যেত না। আমরা রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি, যাতে ঠিক সময়ে নির্বাচন করা যায় সে জন্য তিনি হস্তক্ষেপ করুন।”
পরে সন্ধ্যায় বরাহনগরে এক অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতা মুকুলবাবুর নাম না-করে বিমানবাবু মন্তব্য করেন, “দু’জন নন্দী-ভৃঙ্গী কাজ করছেন! এক জন মন্ত্রিসভা থেকে বিষয়টা গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন! আর এক জন বাইরে থেকে মে মাসে ভোট হলে লোক মারা যাবে বলে গুলিয়ে দিচ্ছেন! পশ্চিমবঙ্গে তো দু’টি পঞ্চায়েত ভোট বাদ দিয়ে বাকি সব ভোট মে মাসেই হয়েছে! গরমে তো তা হলে সব মানুষই মরে যেত! এখানে তো এখনও সুইৎজারল্যান্ড হয়নি!” তাঁর আরও অভিযোগ, নির্বাচিত পঞ্চায়েতের পরিবর্তে মহকুমাশাসক, বিডিও, জেলাশাসকদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে, অর্থাৎ প্রশাসক বসানোর চক্রান্ত করতেই রাজ্য সরকার কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে গিয়েছে। এই ‘চক্রান্তে’র কথা রাজ্যবাসীকে জানাতেই আজ কলকাতায় অবস্থান করবে বামেরা। কাল, বুধবার প্রতিটি জেলায় গ্রাম থেকে ব্লক, মহকুমা পর্যন্ত প্রচার করা হবে।
বামেদের সুরেই সরকারকে দুষছে কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ দিল্লিতে বলেছেন, “তৃণমূল দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার আতঙ্কেই পঞ্চায়েত ভোট এড়াতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য কলকাতায় বলেন, “ভোট যে বিলম্বিত হল, এটা তৃণমূলেরই ষড়যন্ত্র!”
এ দিন কমিশন আদালতে যে পিটিশন দায়ের করেছে তার প্রতিলিপি চেয়েছে কংগ্রেস। দলের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষের ব্যাখ্যা, “এমন কোনও কথা হয়তো সেখানে থাকল, যেটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে যেতে পারে। তখন আমাদেরও তো কিছু করণীয় আছে। তাই প্রতিলিপি চেয়েছি।”
বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন দুর্গাপুরে বলেন, “সরকার চাইছে, সিঙ্গুরের মতো মামলার জটে পঞ্চায়েত ভোট যাতে পিছিয়ে যায়। তাতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নতুন কমিশনারের আমলে ভোট হবে।”
বিরোধীদের হাতে প্রচারের এই হাতিয়ার কি তৃণমূলই তুলে দিল না? তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, “আমরা ভোট এগোতে চেয়েছিলাম, পিছোতে নয়! পঞ্চায়েত ভোট করার জন্য সঠিক সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সুষ্ঠু আলোচনার যে প্রক্রিয়ার দায়িত্ব কমিশনের ছিল, তা পালন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।”
বিরোধীরা দুষছে শাসককে। শাসক দুষছে কমিশনকে। ভোট-বিলম্বেও জমে উঠছে ভোট-রঙ্গ!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.