একপশলা বৃষ্টির জন্য হা-পিত্যেশ করছেন আরামবাগ মহকুমার তিল চাষিরা।
গত শুক্রবার ও শনিবার আশা জাগিয়েও শেষমেশ মাটি ভেজার মতোও বৃষ্টি হয়নি। একমাস থেকে দেড়মাস বয়সের তিল চারার খেত শুকনো খটখটে। মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “তিল চাষের ক্ষেত্রে অধিকাংশ চাষি কালবৈশাখীর উপর নির্ভরশীল। অথচ উন্নত ফলনের জন্য বীজ বোনার ২৫ দিনের মাথায় সেচ জরুরি। কিন্তু অনাদরই তিল চাষে রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে।”
মহকুমা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগে অধিকাংশ তিল চাষের জমি সেচ ব্যবহারের মধ্যে নেই। যেগুলি সেচের আওতায় আছে, সেখানেও জল অমিল। কারণ নদীগুলি প্রায় শুকিয়ে এসেছে। অধিকাংশ গভীর নলকূপে জলস্তর নেমে গিয়েছে। অবশ্য তিল চাষের ক্ষেত্রে কৃষকেরা ওই সব সেচ ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ আগ্রহীও নন। তিল বাঁচাতে সেচের দাবিতে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভও নেই, যেমন থাকে বোরো ধান চাষের ক্ষেত্রে।
কালবৈশাখীর উপরে নির্ভর করেই তিল চাষের গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে কেন সরে আসছেন না চাষিরা?
আরামবাগের বাতানলের চাষি সজল মণ্ডল বলেন, “তিল হেলাফেলার চাষ বলেই বরাবর পরিচিত। ধান বা আলু চাষ যেমন প্রধান অর্থকরী ফসল হিসাবে গণ্য হয়, তেমনি তিলের কদর নেই। তা ছাড়া, বাদাম, সরষে, সূর্যমুখীর মতো তৈল বীজ নিয়ে কৃষি দপ্তর যেমন প্রচার চালায় তিলের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয় না।” খানাকুলের পাতুল গ্রামের চাষি সরিফুল ইসলাম বলেন, “ভোজ্য তেল হিসাবে তিলের কদর নেই। আমন ধানের পর আলু কিংবা সর্ষে উঠলে একই জমিতে তৃতীয় চাষ হিসাবে তিল চাষ করা হয়। কার্যত বিনা খরচ ও পরিশ্রমেই এই ফসল পাওয়া যাচ্ছে বলে ধরে নেন চাষিরা। তাই সেচ, সার ইত্যাদি নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।” সালেপুরের বিদ্যাপতি বাড়ুইয়ের বক্তব্য, “গত বছর তিলের দাম ৪৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা কুইন্ট্যাল পর্যন্ত দাম পাওয়া গিয়েছে। শুনছি প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুতের ক্ষেত্রে তিল তেলের ব্যবহার বাড়তেই দাম বেড়েছে। এই গতি বজায় থাকলে অনাদরে তিল চাষ বন্ধ হবে।”
তিল চাষে সার লাগে খুব কম। আলু চাষের পর তিল চাষ করলে সার না দিলেও চলবে। নিয়ম বীজ বোনার ১৫-২০ দিন পরে আগাছা মুক্ত করে চারা পাতলা করে দিতে হয়। প্রাক খরিফ মরসুমে তিনটি সেচ দিলেই চলে। জমি ভিজিয়ে বীজ পোঁতার ২০-২৫ দিন পর সেচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর ২০-২৫ দিন পরে আরও একটি সেচ দরকার। কিন্তু চাষিরা ওই সেচের জন্যই কালবৈশাখীর প্রত্যাশা করেন। এ দিকে গত কয়েক বছর ধরেই কালবৈশাখী বেপাত্তা। কিংবা খুবই অনিয়মিত। |