পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাম নেতাদের নানা মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে আরামবাগে।
সম্প্রতি দু’টি ঘটনায় তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। প্রথম ঘটনাটি গত ২৫ মার্চের। ওই দিন বিকেলে আরামবাগ বয়েজ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জগন্নাথ শাসমল স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হন।
অভিযোগ, তাঁর মোটরবাইক থামিয়ে ঘিরে ধরে তৃণমূলের কয়েকশো লোক। আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ তুলে ওই সিপিআই নেতাকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তৃণমূলের লোকজন তাঁর কাছ থেকে কিছু অস্ত্রও ‘উদ্ধার করে’ তুলে দেয় পুলিশের হাতে। আরামবাগের আরও ২২ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধেও সম্প্রতি নানা অভিযোগ তুলে পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েছে তৃণমূল। জগন্নাথবাবুর দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেওয়ায় উদ্যোগী হওয়ার জন্যই তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে তৃণমূল।
|
“পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল নিচুমানের রাজনীতি করছে।”
প্রিয়রঞ্জন পাল, সিপিআই নেতা |
“আমরা এবং আমাদের সরকারের পুলিশ সর্বদাই সজাগ আছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করছে।”
দিলীপ যাদব, তৃণমূল নেতা |
|
দ্বিতীয় ঘটনায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘বাম-ঘেঁষা’ বলে পরিচিত একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কয়েক জন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের কাজেই আরামবাগের পুটন গ্রামে যান। তাঁদের গাড়ি আটকে তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর, মারধর করে বলে অভিযোগ। কেড়ে নেওয়া হয় ক্যামেরা। পুলিশ পরে ক্যামেরা উদ্ধার করে। সাংবাদিকেরা একটি জেনারেল ডায়েরি করেন। এ দিকে, শনিবার সকালে তৃণমূলের তরফে পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। তাতে বলা হয়, কিছু বহিরাগত লোকজনকে নিয়ে হামলা চালায় সিপিএম। তাদের সঙ্গে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল।
অভিযুক্তদের তালিকায় ছিলেন আরামবাগের শীর্ষস্থানীয় সিপিএম নেতা তথা সাংসদ শক্তিমোহন মালিক, জেলা কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হোসেন, অশোক পাত্র-সহ ১৫ জন। রবিবার সকালে আরামবাগ ৪ নম্বর লোকাল কমিটির সদস্য তথা নৈসরাই নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক পাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোজাম্মেলের দাবি, ওই ঘটনার সময়ে তাঁরা জেলা কমিটির বৈঠকে চুঁচুড়ায় ছিলেন। সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। সোমবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন অশোকবাবু।
সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে অনেক ক্ষেত্রে যে ভাবে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা সাজাচ্ছে, তাতে পঞ্চায়েত ভোটে যোগদান করা তো দূরের কথা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোই বিধ্বস্ত।” পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমন আচরণের অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সুদর্শনবাবু। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রিয়রঞ্জন পাল বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই পুলিশকে নিয়ে তৃণমূল নিচুমানের রাজনীতি করছে আরামবাগে।” একই অভিযোগ ফব-র জেলা সম্পাদক নরেন দে-র।
অন্য দিকে, জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদবের কথায়, “বামপন্থী, বিশেষত সিপিএম সন্ত্রাস-খুনের উপরে দাঁড়িয়ে এত দিন সরকার চালিয়েছে। ফের সেই পথ নিতে চাইছে। আমরা এবং আমাদের সরকারের পুলিশ সর্বদাই সজাগ আছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করছে।”
এ বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি আরামবাগের এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র। |