সম্পাদকীয় ২...
অপরিবর্তনীয়
র কয়েক দিন বাকি। নূতন বঙ্গাব্দের সূচনা হইবে। এখনও যাঁহারা বাড়িতে বাংলা ক্যালেন্ডার রাখিবার অভ্যাসটি ত্যাগ করিতে পারেন নাই, তাঁহাদের দেওয়ালে নূতন ক্যালেন্ডার ঝুলিবে। পশ্চিমবঙ্গ অবশ্য বদলাইবে না। তাহার অন্ধকার অনপনেয়। সম্প্রতি হলদিয়া সেই অন্ধকারের কেতাবের পৃষ্ঠা উল্টাইল। সেখানে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থা জুসকো এবং মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে হলদিয়া ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট কম্পানি লিমিটেড নামক একটি সংস্থা জল সরবরাহের কাজ করিত। ২০০৮ সালে সংস্থাটি দায়িত্ব নেয়। পঁচিশ বৎসরের চুক্তি। তাহার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ সময় কাটিয়াছে। তাহারই মধ্যে সংস্থাটি ব্যবসা গুটাইয়া লইল। কারণ, তাহাদের লাভ হইতেছিল না। এক অর্থে কারণটি আজকের পশ্চিমবঙ্গে ব্যতিক্রমী ব্যবসা গুটাইবার পিছনে কোনও রাজনৈতিক তাণ্ডব নাই, এমন দৃষ্টান্ত বিরল হইয়াছে। কিন্তু বর্তমান কারণটি পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে মর্মান্তিক। হলদিয়ায় যথেষ্ট জলের চাহিদা নাই, কারণ সেখানে যথেষ্ট শিল্প নাই। সেখানে শিল্প নাই, কারণ পশ্চিমবঙ্গে শিল্প আসে না। ভবিষ্যতেও আসিবে না, সেই আশঙ্কা প্রবল। নচেৎ, কুড়ি বৎসর বাকি থাকিতে কেহ ব্যবসা গুটাইয়া লয় না। ২০০৮ সালে যখন সংস্থাটি হলদিয়ায় জল সরবরাহের ব্যবসায় আসিয়াছিল, সেই বৎসরই পশ্চিমবঙ্গ হইতে টাটা ন্যানোকে কুলার বাতাস দিয়া বিদায় করিয়াছিলেন আজকের শাসকরা ইহা কি সমাপতনমাত্র? এই হলদিয়া হইতেই একটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সংস্থাকে শাসক দলের স্নেহধন্যরা কার্যত মারিয়া তাড়াইয়াছেন, তাহাও কি নিছক সমাপতন? না কি এইগুলি পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যের শোকগাথার ছিন্নপত্র?
পশ্চিমবঙ্গে শিল্প সম্ভব নহে, এই বিশ্বাসটির বয়স বর্তমান শাসক দলের তুলনায় ঢের বেশি। ফলে, এই বিশ্বাসের ঐতিহাসিক দায় বহন করিবার বাধ্যবাধকতা তৃণমূল নেতৃত্বের ছিল না। তাঁহারা স্বেচ্ছায় এই উত্তরাধিকার গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহাকে পরম যত্নে লালন করিতেছেন। শিল্পের জন্য যাহা প্রয়োজন, তাহার কিছুমাত্র তাঁহারা করেন নাই, করিবেন বলিয়া ভরসাও নাই। বরং যে পরিস্থিতিতে শিল্প বিমুখ হয়, তাহার ষোলো আনা প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। রাজ্যের প্রশাসকরা সম্ভবত কিছু না দেখিবার, কিছু না শুনিবার শপথ লইয়াছেন। নচেৎ, শিল্পমহল হইতে বারংবার যে বার্তা আসিতেছে, তাহার পর ভ্রান্তি বুঝিতে সমস্যা হইবার কথা নহে। গত শনিবারও ইনফোসিস-কর্তা শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বলিয়া গেলেন, শিল্প গড়িবার দায় রাজ্য সরকারের। বার্তাটি স্পষ্ট: শিল্পমহল যাহা চাহিতেছে, তাহা অন্তত আংশিক ভাবে না পাওয়া গেলে বিনিয়োগ আসিবে না। গন্তব্যের তো অভাব নাই। কিন্তু শিল্পমন্ত্রী নিজের অচলায়তনে অনড়। তবুও নাকি তাঁহার আশা, আলোচনার মাধ্যমে পথ খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে। মন্ত্রিবর কাহাকে প্রবোধ দিতেছেন? তাঁহার দোষ নাই। সিদ্ধান্ত করিবার মালিক যে তিনি নহেন, তাহা সকলেরই গোচর। নেত্রী কোন কল্পান্তরে বাস্তব বুঝিবেন, তাহারই প্রতীক্ষা। না বুঝিলে, ফের ক্যালেন্ডার পাল্টাইবে, পশ্চিমবঙ্গের অন্ধকারের পরিবর্তন হইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.