দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে শহরের ২৪০টি বাজার। সম্প্রতি কলকাতার সব ক’টি বাজারের সমীক্ষা করে এমনই তথ্য পেয়েছে পুর-প্রশাসন। ওই রিপোর্ট থেকে আরও জানা গিয়েছে, অন্তত ১৪৫টি বাজারে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের হাল খারাপ। আগুন লাগলে বেরোনোর রাস্তা নেই ২৪২টি বাজারে। আর ৮০ শতাংশ বাজারেই রাতে শুয়ে থাকে লোকজন। রিপোর্ট দেখে দিশাহারা পুর-প্রশাসন। আজ, মঙ্গলবার মহাকরণে টাস্কফোর্সের সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে ওই রিপোর্ট দেওয়া হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় বাজার সুরক্ষায় নিযুক্ত পুর-কমিটি।
সম্প্রতি শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় ২১ জনের। তার পরেই অন্য বাজারের হাল জানতে সমীক্ষার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমীক্ষার রিপোর্ট পুলিশ, দমকল ও সিইএসসি-র কাছে পৌঁছে গিয়েছে। দমকলের এক অফিসারের কথায়, “ওই রিপোর্ট ধরে কাজ করতে গেলে অধিকাংশ বাজারের ঝাঁপ এখনই বন্ধ করতে হবে। অগ্নি-নির্বাপণ বিধি মেনে ব্যবস্থা করতে বাধ্য করতে হবে তাদের।”
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে বাজারের সংখ্যা ৩৫৮। তার মধ্যে পুরসভার নিজস্ব বাজার ৪৬টি। পুরসভার নেতৃত্বে গঠিত একাধিক দল বাজারগুলিতে সমীক্ষা চালায়। বাজারে দমকলের অনুমতি আছে কি না, অগ্নিবিধি মানা হয় কি না, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ঠিকঠাক কি না, আগুন লাগলে বেরোনোর রাস্তা আছে কি না, বাড়িটির হাল কেমন এবং পুরসভার লাইসেন্স আছে কি না এ সব খতিয়ে দেখার জন্যই হয় ওই সমীক্ষা।
প্রায় সব ক্ষেত্রেই রিপোর্ট ভাবিয়ে তুলেছে পুর-প্রশাসনকে। কোনও বাজারে আগুন লাগলে জলের জোগান কেমন, তা জানতে বলা হয়েছিল ওই বিশেষজ্ঞ-দলকে। রিপোর্ট মিলেছে ২১৩টিতে জলের প্রায় কোনও ব্যবস্থাই নেই। ওই তালিকায় আছে নিউ মার্কেট, বৈঠকখানা, পাতিপুকুর, শ্যামবাজার, পোস্তা, কাঁকুড়গাছি, মল্লিকঘাট, মেছুয়া এবং পোদ্দার কোর্টের মতো জনবহুল বাজারও। বৈঠকখানা বাজারের এক ব্যবসায়ীর কথায়, “এখানে তো ২৪ ঘণ্টাই বাজার খোলা। রাতে লোকও থাকে। জলের জোগান একেবারেই কম। আগুন লাগলে কী হবে, জানি না।”
পুরসভার বাজার দফতরের এক অফিসারের কথায়, “বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের পিছনে বৈদ্যুতিক তারে গোলমালের কারণই প্রধান। সাম্প্রতিক সমীক্ষাও বলছে, অধিকাংশ বাজারেরই বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা খুব খারাপ। তার মধ্যেই চলছে ব্যবসা।”
ওই অফিসার জানান, ল্যান্সডাউন বাজার পুরসভার নিজস্ব। সেই বাজারেই ব্যবহৃত দু’টি ইলেকট্রিক মিটার ওভারলোডে চলে। যার থেকে যে কোনও সময়ে শর্ট সার্কিট হয়ে যেতে পারে।
কতগুলি বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে, তা দেখতে বলা হয়েছিল পুর-অফিসারদের। সমীক্ষার রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ১৯৬টি বাজারের তথ্য দিতে পারেননি তাঁরা। একই ভাবে ২৩৭টি বাজারের ভবন বাণিজ্যিক না বসতবাড়ি হিসেবে লাইসেন্স পেয়েছে, তা-ও জানাতে পারেননি ওই অফিসারেরা। অর্থাৎ, পুরসভার রেকর্ডেও তার কোনও রকম হদিস পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহের বক্তব্য, “এত দিন বাজারগুলির হাল জানা ছিল না। এ বার তা জানা গেল।” ওই সমীক্ষার প্রেক্ষিতে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান ও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দিন কয়েক আগে পুরসভায় একটি বৈঠক হয়। সোমবার দমকলমন্ত্রী বলেন, “এই হাল তো এক দিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নজর না দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে সমাধানও ধীরে ধীরে করতে হবে।” |