ফেল করেও পাশ, প্রতিবাদে পদত্যাগ সোমনাথের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
তিন তিনটি বিষয় মিলিয়ে কলেজের টেস্টে পাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় ৪৫ নম্বরও তুলতে পারেননি
বোলপুর পূর্ণিদেবী চৌধুরী মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ২৫ জন ছাত্রী। অভিযোগ, সম্প্রতি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আন্দোলনের চাপে পড়ে ফেল করা ছাত্রীদের পাশ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কতৃর্পক্ষ।
সোমবার প্রতিবাদে চিঠি দিয়ে ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বোলপুরে প্রাক্তন সাংসদ তথা লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ওই কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সোমনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, “রাজ্য জুড়ে নৈরাজ্য চলছে। ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের পাশ করানোর দাবি উঠছে। সেই দাবি মেনেও নেওয়া হচ্ছে। কলেজের এই সিদ্ধান্ত আমি মানতে পারছি না।” তাঁর আরও সংযোজন, “এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার। দেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষা-ব্যবস্থার সামনে একটি বড় বিপদ। বাইরে কোথাও এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, কিন্তু যে কলেজের জন্মলগ্ন থেকেই আমি জড়িয়ে সেখানে এমনটা হবে তা আমি মেনে নেব না। তাই ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, স্নাতক স্তরের প্রায় ৩০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জন ছাত্রী তিনটি বিষয়ে মোট ৪৫ নম্বর তুলতে পারেননি। এমনকী ওই পরীক্ষার্থীদের খাতার মান এতই খারাপ ছিল যে, কলেজের অধ্যক্ষ সুনীলবরণ মণ্ডলের নির্দেশে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তিন-তিন বার খাতা দেখেও তাঁদের নম্বর বাড়াতে পারেননি! সুনীলবাবু বলেন, “স্বাভাবিক ভাবে পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ২৫ জনকে ফর্ম ফিল আপ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত শুক্রবার ফেল করা ছাত্রীরা পাশ করানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় কিছু বহিরাগতও।” কলেজের একটি সূত্রের দাবি, ওই বহিরাগতেরা আসলে ৫০০ মিটার দূরত্বে থাকা বোলপুর কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু নেতা-কর্মী। তাঁরা কলেজে তালা ঝোলানোর সঙ্গে সঙ্গে অধ্যক্ষকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। জঙ্গি-আন্দোলনের হুমকির মুখে পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যত বাধ্য হয়েই ওই পড়ুয়াদের পাশ করানোর দাবির বিষয়টি পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করেন। অধ্যক্ষের দাবি, “এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা করে ওই ২৫ জন ছাত্রীকে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ফাইনালে ফেল করলে ওই পড়ুয়াদের কলেজ ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকেরা সেই মর্মে মুচলেকাও দিয়েছেন।”
যদিও কলেজ কতৃর্পক্ষের এই সিদ্ধান্তে একমত হননি সোমনাথবাবু। তাই সোমবারই নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন কলেজে। এ দিন চিঠি পেয়েই শান্তিনিকেতনে সোমনাথবাবুর বাড়িতে ছুটে যান অধ্যক্ষ এবং পরিচালন সমিতির কিছু সদস্য। সোমনাথবাবুকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদনও জানান। কলেজ পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, “সোমনাথবাবুর ইস্তফা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা তাঁর কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন করেছি।” দিন দুয়েকের মধ্যেই এ নিয়ে পরিচালন সমিতির একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হবে বলেও সুনীলবাবু জানিয়েছেন।
এ দিকে ঘটনার দায় অস্বীকার করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বীরভূম জেলা সভাপতি সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “ওই কলেজের আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি।” যদিও এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক শতদল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূল ও তাদের ছাত্র নেতাদের গুণে ফেল করা পড়ুয়াদের পাশ করানোর আন্দোলন সংক্রামকের চেহারা নিয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে বোলপুরেও।” অন্য দিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিচালন সমিতির এক সদস্যের দাবি, “পরিচালন সমিতির তৃণমূল প্রভাবিত এক সদস্যই টিএমসিপিকে দিয়ে ওই আন্দোলন করিয়ে পড়ুয়াদের পাশ করিয়েছেন।”
কলকাতার সন্তোষপুরের একটি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করা ছাত্রীদের পাশ করানোর দাবিতে দীর্ঘ সময় ঘেরাও চলেছিল। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিতর্কিত ভূমিকার জেরে তারপরে রাজ্যের একের পর এক স্কুলে ফেল করা পড়ুয়ারা পাশ করানোর দাবি তুলেছিলেন। দিন কয়েক আগেই একই দাবিতে টিএমসিপি নেতাদের উপস্থিতিতে রাতভর ঘেরাও হতে হয়েছিল শ্রীরামপুর কলেজের অধ্যক্ষকেও। তিনি সেই চাপে নতি স্বীকার না করলেও ব্যতিক্রম দেখা গেল বোলপুরের কলেজে। |