তিন দিন ধরে পানীয় জল নেই। শুকিয়ে গিয়েছে এলাকার জলাশয়গুলোও। আসানসোল উত্তর থানা এলাকার ধাদকার বাসিন্দারা জলের দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করলেন সোমবার। সকাল ১১টা থেকে ধাদকা মেন রোড অবরোধ করেন তাঁরা। দুপুর ২টো নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন আসানসোলের ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি পানীয় জলের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
আসানসোল পুরসভার ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত তিনদিন ধরে প্রবল পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন তাঁরা। পুরসভার জল সরবরাহ কেন্দ্রের পাইপ লাইনেও জল মিলছে না। এলাকার অধিকাংশ জলাশয়ও শুকিয়ে কাঠ। ফলে পানীয় জলের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু মেটাতেও নাভিশ্বাস উঠছে বাসিন্দাদের। রাতের অন্ধকার থাকতেই কয়েক কিমি পথ উজিয়ে গিয়ে অন্যত্র থেকে পানীয় জল বয়ে আনতে হচ্ছে তাঁদের। আবার অন্য পাড়া থেকে পানীয় জল আনতে গিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দাদের রোষের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। ফলে তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা এ দিন ধাদকা মেন রোড অবরোধ করেন। আচমকা অবরোধের ফলে এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানজটও হয়। সমস্যায় পড়েন এলাকার বাসিন্দারাও। |
ধাদকা রোডে চলছে অবরোধ। শৈলেন সরকারের তোলা ছবি। |
তবে অসুবিধে সত্ত্বেও এই অবরোধকে স্বতস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের যুক্তি, প্রতি বছরই গরমের শুরুতেই এই অঞ্চলে প্রবল পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়। সমস্যা মেটাতে পুর কর্তৃপক্ষকে ট্যাঙ্কে করে জল সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু তাতেও প্রয়োজন মেটে না। ফলে বর্ষা না আসা পর্যন্ত কার্যত এলাকার বাসিন্দাদের নির্জলা থাকতে হয়। সমাধানের রাস্তা খুঁজতে বাসিন্দারা পথ অবরোধ বিক্ষোভ কর্মসূচীও নেন। কিন্তু তাও পুর কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সমাধানের কোনও চেষ্টা করেনি বলে অভিযোগ তাঁদের।
এ দিনও প্রায় দু’ঘন্টা অবরোধ চলার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (সেন্ট্রাল) অজয় প্রসাদ। পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু অনড় বাসিন্দারা তাঁর কোনও আবেদনেই সাড়া দেননি। এসিপির সামনেই অবরোধ কর্মসূচী চালাতে থাকেন তাঁরা। এরপরে ২টো নাগাদ অবরোধস্থলে আসেন আসানসোলের ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। অমরনাথবাবু বলেন, “বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে জল সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তবে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে।” ডেপুটি মেয়র বাসিন্দাদের আশ্বাস দেন, এই এলাকাতেও আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। প্রয়োজনে ট্যাঙ্কে করেও জল সরবরাহ করা হবে। তাঁর আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেন বাসিন্দারা।
এ দিকে প্রতি বছর এই অঞ্চলে জলের প্রবল সঙ্কট এবং তার ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুর কর্তৃপক্ষ কেন জল সরবরাহের স্থায়ী সমাধানের রাস্তা বের করতে পারছে না তা জানতে চাওয়া হলে পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম জানান, পুরসভার নতুন জল প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সামান্য টানাপোড়েন চলবে। তাঁর দাবি, জল প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। |