নেই স্থায়ী চিকিৎসক, ব্যতিব্যস্ত হাসপাতাল
খনও বিক্ষোভ, সুপারকে নিগ্রহ। কখনও বা হাসপাতালে ঢুকে দেদার ভাঙচুর, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধর। বিশৃঙ্খলার এমন পরিবেশে কার্যত বিপর্যস্ত মহকুমা স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রধান কেন্দ্র কালনা হাসপাতালের। অথচ মেডিসিন বিভাগে কোনও স্থায়ী চিকিৎসক ছাড়াই দিনের পর দিন চলছে এই হাসপাতাল। শনিবারই মহকুমা হাসপাতালে রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘চিকিৎসায় গাফিলতি’র অভিযোগ ওঠে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এক চিকিৎসক-সহ পাঁচ জনকে মারধর করেন মৃতের পরিবার ও বন্ধুরা। ভাঙচুর করা হয় হাসপাতালের জিনিসপত্র, কম্পিউটার, আলমারি। মৃতের দাদা বিশ্বজিৎবাবু অভিযোগ করেন, সামান্য বমি ও পায়খানা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁর ভাই। অথচ কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই তাঁকে দেখেননি। এমন কী, তাঁকেই তাঁর ভাইকে স্যালাইন দিতে হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিভাগ এমনিতেই অস্থায়ী দুই চিকিৎসককে দিয়ে চালানো হচ্ছে। ওই দু’দিন যে চিকিৎসকের উপর বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তিনি আচমকা ছুটি নিয়েছিলেন। হাসপাতালের এক কর্তা জানান, ওই চিকিৎসক অন্য আর এক জনকে বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। তাঁকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
ভাঙচুর, মারধরের ঘটনায় আতঙ্কিত এই হাসপাতালের কর্মী-ডাক্তারেরা।—নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বছর দুয়েক ধরেই এই হাসপাতালের পরিষেবার মান নিম্নগামী। তার জেরে প্রায়ই বিশৃঙ্খলা চরমে উঠছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিসিন বিভাগেই এই হাসপাতালে সব থেকে বেশি রোগী ভর্তি হয়। অথচ এই বিভাগে বর্তমানে কোনও স্থায়ী চিকিৎসক নেই। দু’বছর আগে অমিত সরকার ও জয়ন্ত বিশ্বাস থাকাকালীন এই বিভাগের সুনাম ছিল। কিন্তু কিছু দিন পরে অমিতবাবু অন্য হাসপাতালে বদলি হয়ে যান। জয়ন্তবাবুর মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই অস্থায়ী চিকিৎসকদের দিয়ে এই বিভাগ চালানো হচ্ছিল। তাঁরাও প্রথম দিকে রাতে পরিষেবা দিতেন না। অনেক রোগীকেই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হত হাসপাতাল। এমন কী, নোটিশ দিয়েও মেডিক্যাল বিভাগের অসহায়তার কথা জানানো হয়েছিল। এর পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি খানিকটা বদলায়। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি বলেই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিসিন বিভাগে রোগীর অনুপাতে কম পক্ষে তিন জন চিকিৎসক প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে মাত্র দু’জন অস্থায়ী চিকিৎসকদের দিয়ে কাজ চালানো হয়েছে। দুর্গাপুর থেকে তাদের এক জন আসেন। আর এক জন আসেন নবদ্বীপ থেকে। ফলে এক জন কেউ না আসতে পারলেই সমস্যা তৈরি হয়। অন্য বিভাগের চিকিৎসককে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতেই অনেক ক্ষণ সময় লেগে যায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মেডিসিন বিভাগের ওই দুই অস্থায়ী চিকিৎসক নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে সপ্তাহে তিন দিন করে হাসপাতালে আসেন। বাকি এক দিন অন্য বিভাগের সাধারণ চিকিৎসককে দিয়ে কাজ চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রমেন সরকার নামে এক যুবকের কথায়, “মাঝে মধ্যেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় না। গোটা হাসপাতালে মেডিক্যালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা সমস্যায় পড়েন।” একই অবস্থা শিশু বিভাগেরও। সেখানেও তিন জন চিকিৎসক থাকলেও মাত্র দু’জন অস্থায়ী চিকিৎসককে দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। মেডিসিনের মতো এখানেও পালা করে পরিষেবা দেন তাঁরা। প্যাথলজি বিভাগের অবস্থাও তথৈবচ।
পরিষেবার খামতির কথা স্বীকার করেছে দু’পক্ষ। সুপার অভিরূপ মণ্ডল বলেন, “উপযুক্ত পরিষেবা দিতে হলে স্থায়ী চিকিৎসক ও তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” তাঁর আরও দাবি, মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে পরিষেবা চেয়েও কোনও লাভ হয়নি। এক জন প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি অপারগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘যে সমস্ত চিকিৎসক এলাকায় থাকছেন না, তাদের হাউস রেন্ট আমরা আইনত কাটতে পারছি না। পরিষেবা না দেওয়ায় ‘শো কজে’র চিঠি দেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। ফলে অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছেন।” তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অনেক চিকিৎসকই এলাকার বাইরে থাকেন। তাঁরা অতিরিক্ত কাজ করতে চান না। ফলে চিকিৎসক কাজে না এলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হাসপাতালের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে লোকবল বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্থায়ী চিকিৎসকের যাতে ব্যবস্থা করা যায়, তার চেষ্টা চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.