পরিচর্যায় ‘গাফিলতি’, পা পুড়ল রোগিণীর
ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ আকছার ওঠে। কিন্তু এ বার অস্ত্রোপচারের পরে পরিচর্যার অভাবে রোগিণীর বড় ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ উঠল একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। বেসরকারি হাসপাতালের উপরে সরকারের যে কার্যত নিয়ন্ত্রণই নেই, এই ঘটনায় সামনে এল সেই প্রসঙ্গও।
অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পরে পায়ে ‘হটপ্যাড’ লাগানো হলেও তা সময়মতো খুলতে ভুলে গিয়েছিলেন হাসপাতালকর্মীরা। তার জেরে ওই রোগিণীর দু’টি পা-ই ঝলসে গিয়েছে। কবে তিনি সুস্থ হবেন, তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। কিন্তু এমন গাফিলতির অভিযোগ সামনে আসার পরেও স্বাস্থ্য দফতর রুটিন মাফিক ‘তদন্ত হবে’ বলে দায় এড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, রোগী পরিচর্যায় গাফিলতির অভিযোগ জমা পড়লে তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেকটা হাসপাতালকেই সঠিক পরিচর্যার নিয়মাবলী দেওয়া থাকে। রোগী-সুরক্ষায় সেই নিয়মাবলী হাসপাতালের মেনে চলা উচিত।”
কিন্তু নিয়ম না মানলে সরকার কি তাদের বাধ্য করতে পারে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বীকার করে নেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রণের কোনও ক্ষমতাই কার্যত স্বাস্থ্য দফতরের নেই।
কোনও ভাবে হাড় ভেঙে হাঁটু ‘লক’ হয়ে গিয়েছিল ডানলপের বাসিন্দা স্বপ্না দত্তের। অস্ত্রোপচার করালে দিন কয়েকের মধ্যেই তিনি আবার আগের মতো চলাফেরা করতে পারবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন চিকিৎসক।
রোগিণীর পুড়ে যাওয়া পা।
সেইমতো অস্ত্রোপচারও হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর পায়ে লাগানো ‘হটপ্যাড’ খুলতে কর্তব্যরত নার্স ‘ভুলে’ যাওয়ায়, তাঁর দুটি পা-ই ঝলসে যায় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমনই যে, এক রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন অন্য রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে জেরবার হয়ে যাচ্ছেন ওই রোগিণীর পরিবারের লোকেরা। কবে তিনি পুরো সুস্থ হবেন, সেটাও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না কোনও চিকিৎসকই।
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল, দমদম থানা ও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন স্বপ্নাদেবীর স্বামী সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি জানান, কিছু দিন ধরেই হাঁটুর সমস্যায় ভুগছিলেন স্বপ্নাদেবী। অস্থি বিশেষজ্ঞ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় ১৬ জানুয়ারি দমদমের এক বেসরকারি হাসপাতালে হাঁটুর অস্ত্রোপচার করেন। সেখানেই ওই ঘটনা ঘটে।
সতেন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, অস্ত্রোপচার ঠিকঠাক হলেও পরবর্তী কোনও যত্নই হাসপাতাল নেয়নি। অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর স্ত্রীর দু’পায়েই ‘হট প্যাড’ লাগানো হয়। কিন্তু তা সময়ে খোলা হয়নি। স্বপ্নাদেবী যন্ত্রণায় ছটফট করছেন দেখে ‘হট প্যাড’ খোলা হয়। আর তখনই নজরে পড়ে তাঁর দু’পায়ের পিছনের অংশ পুড়ে কালো কাঠের মতো হয়ে গিয়েছে। দু’পা জুড়ে ফোসকা পড়ে তা ফেটে গিয়ে বিছানার চাদরও ভিজে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, অস্ত্রোপচারের জন্য স্বপ্নাদেবীর দুটি পা-ই অসাড় করা হয়েছিল। ফলে পা যে পুড়ে যাচ্ছে, তা বহুক্ষণ পর্যন্ত তিনি বুঝতেই পারেননি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বপ্নাদেবীর এই অবস্থার কথা জানলেও তারা কোনও গুরুত্ব দেয়নি বলে সত্যেন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ। অভিযোগ, ড্রেসিং করলে পুড়ে যাওয়া জায়গাটা সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যাবে এই আশ্বাস দিয়ে স্বপ্নাদেবীকে কয়েক দিন পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়। এমনকী হাসপাতালের ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’-এ হাসপাতালের গাফিলতিতে পা পুড়ে যাওয়ার বিষয়টারও কোনও উল্লেখ ছিল না বলে সত্যেন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছেন। প্রায় সপ্তাহ তিনেক পরে স্বপ্নাদেবীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অন্য এক প্লাস্টিক সার্জেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি দেহের অন্য অংশ থেকে চামড়া নিয়ে স্বপ্নাদেবীর পুড়ে যাওয়া অংশে প্রতিস্থাপন করেন।
সতেন্দ্রনাথবাবুর আক্ষেপ, হাসপাতালের শুধুমাত্র একটি গাফিলতির কারণেই স্বপ্নাদেবী এখনও চিকিৎসাধীন, অথচ সেই দায় নিতে অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই হাসপাতালের ম্যানেজার তাপস মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম। রোগী পরিচর্যার বিষয়ে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.