ভরা চৈত্রের খরা। নওদার দুধসর গ্রামের রাস্তার ধারে মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন জাহানারা বিবি। সস্তার সুতির কাপড়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে তাঁর আক্ষেপ, “মড়ক লেগে পেঁয়াজ পাতা কালো হয়ে গিয়েছে। ফলন খুব কম।” মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে আপন মনেই আওড়ালেন, ‘‘বাজার অবশ্য চড়া। গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দরে বিকোচ্ছে পেঁয়াজ।’’ লাভের অঙ্ক কষতে ব্যস্ত চাষি।
গতবারের স্মৃতি ভুলে যাঁরা পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন, তাঁরাই লাভবান হয়েছেন। চাষিদের কথায়, “ফি বছর বিঘা প্রতি মোটামুটি ৭০ থেকে ৮০ কুইন্টাল পেঁয়াজ হয়। কিন্তু চলতি বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ কুইন্টালে।’’ তবে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজ গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। এই বছর তা বিকোচ্ছে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায়। এক বিঘা জমির পেঁয়াজ বেচে চাষির ঘরে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আসবে।
কৃষকদের কথায়, এক বিঘা জমিতে চাষের খরচ মোটামুটি হাজার দশেক টাকা। নিচু জমিতে বর্ষার জল থাকে। সেক্ষেত্রে চাষের খরচ বিঘা প্রতি দু’হাজার টাকা কমে যায়। কী রকম? চাষিরা জানাচ্ছেন, ওই জমিতে আগাছা কম হয় ও অনেক রকম রোগ থেকেও পেঁয়াজ মুক্ত থাকে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজ বেচে বিঘা প্রতি প্রায় তিরিশ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন চাষিরা। তাঁদের মুখে তাই এখন থেকেই লেগেছে চওড়া হাসি।
মুর্শিদাবাদ জেলার উদ্যানপালন দফতরের সহ অধিকর্তা শুভদীপ নাথ বলেন, “জেলার সবচেয়ে বেশি চাষ হয় নওদায়। এ ছাড়া সাগরদিঘি, বহরমপুর, হরিহরপাড়াতেও কমবেশি ভাল চাষ হয়।’’
এ বছর ফলন কেমন? তিনি জানান, ‘‘গতবারের চেয়ে কিছুটা কম। বাতাসে আর্দ্রতার অভাবে গাছের আগা শুকিয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে চিরুনি পোকার আক্রমণের ফলে এই সমস্যা বলে আমাদের অনুমান।’’ শুভদীপবাবুর সংযোজন, ‘‘ফলন কম হলে কী হবে? দাম বেশ ভালো। গতবারের তুলনায় চাষি প্রায় দ্বিগুণ দাম পাচ্ছেন।” দামের রহস্যটা কী? তিনি বলেন, “উৎপাদন কম। কিন্তু চাহিদা অপরিবর্তিত। তাই অথর্নীতির নিয়ম মেনেই বাজার চড়া।”
সরকারি হিসেবে বহরমপুর সদর মহকুমা এলাকায় ৪১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। তার মধ্যে ৩১০০ হেক্টরই নওদা ব্লকের আওতায়। এত পেঁয়াজ যায় কোথায়? দুধসরের কৃষক সিনারুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা বিক্রি করি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। সেই পেঁয়াজ লরি ভর্তি হয়ে পড়শি রাজ্য বিহার, অসম, ওড়িশা এবং কলকাতায় পাড়ি দেয়।’’ |