কুড়িতম জন্মদিন সেলিব্রেট করেছেন এক সপ্তাহও কাটেনি। দিল্লির লাল-নীল জার্সি পরা ছিপছিপে, মিষ্টি তরুণকে দেখে কে বলবে এঁর দাপটেই অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ এসেছে ভারতে। বরং মনে হবে ক্লাস কেটে ইডেনে আইপিএলের প্রিয় নায়কদের দেখতে চলে এসেছেন কোনও কলেজ পড়ুয়া। ভারতীয় ক্রিকেট অণুবিশ্বে তাঁর মুখ এখনও অনেকটাই অচেনা। সাধারণ লোকের চোখে বেশি করে পড়েছেন আইপিএল সিক্সের নতুন স্পনসরের দৌলতেই।
ইনি উন্মুক্ত চন্দ। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়নারা থাকা সত্ত্বেও পেপসির নতুন বিজ্ঞাপনে যাঁর সাবলীল উপস্থিতি আলাদা করে নজর কেড়ে নিতে বাধ্য। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘জেন ওয়াই’-এর সেরা মুখ উন্মুক্তই রবিবাসরীয় ইডেনে হয়ে দাঁড়ালেন দিল্লি ডেয়ারডেভিলস টিমের মুখ। অমায়িক, কিন্তু নাছোড়ও। যাঁর মুখে ইডেনে খেলা নিয়ে ছেলেমানুষি উত্তেজনার পাশাপাশি জায়গা করে নেয় নাইটদের নিজভূমে তাদের বধ করার পরিণত প্রতিজ্ঞা। দিল্লি রঞ্জি টিমে তাঁর সিনিয়র গৌতম গম্ভীরের প্রতি শ্রদ্ধার কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে যিনি এটাও শুনিয়ে দেন, গম্ভীরের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য দিল্লি টিমকে জানিয়ে দেওয়ার আগে দু’বার ভাববেন না! |
ইডেনে উন্মুক্ত।—নিজস্ব চিত্র |
উদ্বোধনী ম্যাচেই দিল্লির সামনে আইপিএল ফাইভ চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স। বাড়তি চাপ থাকাটা খুব অস্বাভাবিক নয়। তরুণ উন্মুক্ত কিন্তু একেবারে অন্য ভাবে দেখছেন আইপিএল সিক্সের প্রথম ম্যাচটাকে। কেকেআর গত বারের চ্যাম্পিয়ন তো কী, দিল্লিও তো আইপিএল ফাইভের সেমিফাইনাল খেলেছে। ৩ এপ্রিলের ম্যাচ নিয়ে তাই দিল্লিওয়ালা অহেতুক টেনশনে কাঁপছেন না। বলছেন, “গত মরসুমটা আমাদের জন্য খুব ভাল গিয়েছিল। আমরা শেষ চারটে দলের মধ্যে জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম। তবে এ বার নতুন মরসুম। আগের বার কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সে সব না ভেবে নতুন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে টিম।”
রবিবারের অনুশীলনে ছিলেন না দিল্লি টিমের অন্যতম আইকন বীরেন্দ্র সহবাগ। সোমবার শহরে ঢুকে পড়ছেন তিনি। উল্টো দিকের নেটে অবশ্য এক মনে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করে যাচ্ছিলেন দিল্লির আর এক তারকা গৌতম গম্ভীর। যাঁর সঙ্গে উন্মুক্তের যোগাযোগটা স্রেফ এক শহরের ছেলে হিসেবে নয়। তাঁরা দু’জন একই কোচের ছাত্র। সিনিয়রের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে চলেছেন, কেমন লাগছে অবধারিত এই প্রশ্নের সামনে পড়ার জন্য যেন তৈরিই ছিলেন উন্মুক্ত। প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই চলে এল সপাট উত্তর, “আইপিএলের যুগে আজকাল তো এটা হামেশাই হচ্ছে। আর গম্ভীরের সঙ্গে রঞ্জি খেলার অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি তো আমার টিমকে সাহায্য করতে পারব। ওর দুর্বলতাগুলো তো আমি ভালই জানি!”
চোটের জন্য গোটা আইপিএলেই দিল্লি পাচ্ছে না তাদের দুই মারকুটে ব্যাটসম্যানকে। কেভিন পিটারসেন ও জেসি রাইডারের অনুপস্থিতিতে তাঁর, উন্মুক্তের উপর চাপ যে বেড়ে গেল, তা মানতে চান না তরুণ ব্যাটসম্যান। বরং বলেন, “রাইডার-কেপির না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। দিল্লির জন্য খুব বড় ধাক্কা। কিন্তু তাতে আমার উপর চাপ বাড়বে না। সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ভাল ছন্দে ছিলাম। আশা করছি সেই ছন্দটা এখানেও ধরে রাখতে পারব।”
তাঁকে এক ঝলক দেখে কলেজের ছাত্র বলে ভুল করলেও উন্মুক্তের কথা শোনার পর সেই ভুল ভেঙে যাবেই। বছর কুড়ির তরুণ ভেতরে ভেতরে কিন্তু যথেষ্ট পরিণত। যাঁর বক্তব্যে বেরিয়ে আসে নিজের প্রতিভা নিয়ে নীরব আত্মবিশ্বাস। সেই প্রতিভার জোরে আইপিএল সিক্সে দিল্লির লাল-নীল পতাকা ওড়াতে পারেন কি না উন্মুক্ত, সেটাই দেখার। |