আইপিএল মঞ্চে শুরু প্রত্যাবর্তনের ‘গম্ভীর’ যুদ্ধ
কে বলবে, তাঁর জন্ডিস হয়েছে!
রবিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আচমকা তাঁর টুইট ভেসে এল: ‘অফ টু ইডেন। ইডেনে যাচ্ছি কেকেআরের প্রথম প্র্যাক্টিস সেশনে। আবার বেগুনি-সোনালি গুহায় প্রত্যাবর্তন ঘটছে।’
কিন্তু নেট সেশনে গৌতম গম্ভীরের প্রত্যাবর্তনের মহড়া যে এমন হবে, বোঝা যায়নি।
এক নয়, দুই নয়, তিন-তিন বার নেটে ঢোকা! রাত আটটায় ইডেনের মাঠকর্মীরা যখন পিচে ঝাঁট দিচ্ছেন, ফ্লাডলাইট নিভছে আস্তে আস্তে, তখনও ইডেনে একা, হাড়ভাঙা খাটুনিতে ডুবে। ফিল্ডিং সেশনে ব্যস্ত। সঙ্গী বলতে শুধু ফিল্ডিং কোচ ট্রেভর পেনি।
শুধু তাই? ঝাড়া পঁয়তাল্লিশ মিনিটের নেট সেশন। তিন দফায়। কেউ একজন নেট থেকে বেরোলেই হল। গম্ভীর তাঁর জায়গায় ঢুকে পড়ছেন! কখনও স্পিনারের ডাক পড়ছে, কখনও পেসারের। ব্যাটিং করতে করতে নেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কোচ ট্রেভর বেলিসের সঙ্গে বৈঠক চলছে। বন্ধু রজত ভাটিয়ার ডাক পড়ল একেবারে শেষে। এবং কেকেআর অলরাউন্ডারের ‘জেন্টল মিডিয়াম পেস’-এর কী ভাবে সাড়ে বারোটা বাজাতে হয়, গম্ভীর দেখিয়ে গেলেন হাতেগরম। শুরুতে দু’একটা ডেলিভারি দেখে নেওয়া, শেষে অর্ধেকই ‘বাপি বাড়ি যা!’

কলকাতা, আমি এসে গিয়েছি... ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কে বলবে, তাঁর জন্ডিস হয়েছে?
রবিবার সন্ধের ক্লাবহাউসে রজত ভাটিয়াকে দেখে মনে হল, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। “উফ, গোতিকে বল করাটা বেশ ঝামেলার। কোনও দিনই বিশেষ সুবিধা করতে পারিনি,” বলছিলেন কেকেআর অলরাউন্ডার। কথাটা শুনলে নিছক রসিকতা মনে হতে পারে, কিন্তু তার অন্তর্নিহিত অর্থে মন দিলে নাইট ক্যাপ্টেনের প্রত্যাবর্তনের যুদ্ধের খোঁজটা পাওয়া যাবে। টেস্ট টিম থেকে বাদ। জন্ডিস নিয়ে চতুর্দিকে আশঙ্কা। প্রশ্ন উড়ছিল, উদ্বোধনী ম্যাচে দিল্লির বিরুদ্ধে নামতে পারবেন তো গম্ভীর? বীরু বনাম গোতি হচ্ছে তো? এ দিনের নেট সেশনকে পূর্বাভাস ধরলে উত্তর হবে হচ্ছে। এবং আইপিএল সিক্স কেকেআর ক্যাপ্টেনের ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশে প্রত্যাবর্তনের মঞ্চও হচ্ছে।
টেস্ট টিম থেকে বাদ পড়ার পর রগড়ানির পরিমাণ নাকি বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন গম্ভীর। ‘সিরিয়াসনেস’ শব্দটা তাঁর ডিকশনারিতে বরাবরই ছিল। এ বার যেন আরও বেশি করে ঢুকে পড়েছে। গম্ভীরকে কেন্দ্র করে রবিবারের টুকরো-টুকরো কয়েকটা ছবিকে ধরা যাক।
এক) দুপুর-দুপুর টিম হোটেলে লাঞ্চ সারতে-সারতে বৈঠক চলছে। সঙ্গী থিঙ্কট্যাঙ্কের আর এক সদস্য বিজয় দাহিয়া।
দুই) মাঠে ঢুকেই সোজা ছুটছেন পিচ-দর্শনে। মাঝে কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাবার্তা। জানা গেল, ইডেনে এ বার একটু শক্ত উইকেট চাওয়া হয়েছে। যেখানে বাউন্স বেশি থাকবে। তাতে স্পিনারদেরও সুবিধা। কেকেআর পেসারের চেয়ে বেশি স্পিনার-নির্ভর টিম। পিচ কিউরেটর পরে বলেও দিলেন, “গম্ভীরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যা চাইছে, তেমনই দেব। উইকেটে ল্যাটারাল মুভমেন্ট থাকছে না। বাউন্স থাকবে। গত কয়েক বছরের মতো লো বাউন্স হবে না।”

নৈশ-ইডেন। ছবি: উৎপল সরকার
তিন) মাঠে ঢুকেই ‘টিম হাডল’ করছেন। ক্যাপ্টেন্সি আছে বরাবরের মতো, কিন্তু এ বার যেন ব্যাটিংয়ে মন আরও বেশি। উপস্থিত কাউকে কাউকে বলেও ফেলেছেন, যত বেশি নেট সেশন, তত বেশি কনফিডেন্স।
কেন, কী কারণে অকপট বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁর সতীর্থ ভাটিয়া। বলছিলেন, “গম্ভীরের মতো ক্রিকেটার যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বদলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে, ফিরে আসার বাড়তি খিদে তো থাকবেই। তা ছাড়া ওকে এখন অনেক বেশি ফোকাসড লাগে। আগে যা খাটত, তার চেয়ে রগড়ানিটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।” আর আহত ক্যাপ্টেনের বারুদের জোরেই কি না জানা নেই, শিবিরের মনোভাব হচ্ছে গত বারের চ্যাম্পিয়ন যেহেতু, চাপ বেশি, চ্যালেঞ্জও বেশি। কিন্তু আদতে তাতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে বই কমবে না। আইপিএল আবার জিতবেন কি না জিজ্ঞেস করলেও মুহূর্তে উত্তর আসছে, “কেন, পরপর দু’বার কেউ আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়নি?” ভাটিয়াই দিচ্ছেন, অতীত উদাহরণ টেনে।
উদাহরণটা চাই? কেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও তাঁর চেন্নাই সুপার কিংস!

বাইশ গজের ব্যালান্স শিট
কেকেআর ব্যাটিং বনাম দিল্লি পেস
• গম্ভীর (জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেও ঘরোয়া
ক্রিকেটে ফর্মে। কিন্তু জন্ডিস সারিয়ে নামছেন)

• কালিস (এ বছরে টেস্টে দুটো
হাফ সেঞ্চুরি, ছ’টা উইকেট)
• মর্নি মর্কেল (এ বছর ঘরোয়া টিটোয়েন্টিতে
৫ উইকেট, টেস্টে ১১)

• উমেশ যাদব (চোট সারিয়ে ফিরে এ বছর
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট)
জুটির লড়াই
কেকেআর ব্যাটিং বনাম দিল্লি পেস
• বালাজি: অস্ত্র স্লোয়ার আর লেগ কাটার।
ম্যাচ ৫১, উইকেট ৫২, ইকনমি ৮.০২

• নারিন: অস্ত্র বড় টার্ন, বৈচিত্র, নাক্ল বল।
ম্যাচ ১৫, উইকেট ২৪, ইকনমি ৫.৪৮
• সহবাগ: ফর্মে থাকলে পেস-স্পিন কিছুই চ্যালেঞ্জ নয়। অলরাউন্ড শট খেলার ক্ষমতা। রান ১৮৭৯, সেরা ১১৯, স্ট্রাইকরেট ১৬৭.৩২

• ওয়ার্নার: পেস বোলারদের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী। পুল আর সুইচ হিটের মাস্টার। রান ১০২৫, সেরা ১০৯ ন.আ., স্ট্রাইকরেট ১৩৫.৭৬
পিচ রিপোর্ট
• মাটি বদলে গিয়েছে। শক্ত, বাউন্সি উইকেট। বল ব্যাটে আসবে তবে স্পিনাররাও সাহায্য পাবে। ল্যাটেরাল মুভমেন্ট থাকবে না।
জয়ের খতিয়ান
কেকেআর ৩ দিল্লি ৪
ঘরের মাঠে
কেকেআর ২ ডিডি ২
সর্বোচ্চ স্কোর
১৮১ (কেকেআর, ২০১০) ১৭৭ (ডিডি, ২০১০)
সর্বনিম্ন স্কোর
৯৭ (কেকেআর, ২০১২) ১০০ (ডিডি, ২০১২)
সেরা ইনিংস
৭৪ মর্নি ফান উইক (কেকেআর, ২০০৯) ১০৭ ডেভিড ওয়ার্নার (ডিডি, ২০১০)
সেরা বোলিং
৪-১১ শোয়েব আখতার (কেকেআর, ২০০৮) ৩-১৪ অমিত মিশ্র (ডিডি, ২০০৯)
এক্স ফ্যাক্টর
• লক্ষ্মীরতন শুক্ল: বোর্ডের বর্ষসেরা অল-
রাউন্ডার, ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটে-বলে
দুরন্ত ফর্মে। ইডেনে চমক হতে পারেন।
• উন্মুক্ত চন্দ: বিশ্বকাপজয়ী অনূর্ধ্ব ১৯
দলের অধিনায়ক। এ বছরে ঘরোয়া
টি-টোয়েন্টিতে দু’টো সেঞ্চুরি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.