শালবল্লির ঘেরাটোপ ছেড়ে উত্তরবঙ্গে পাড়ি দিল রাজা ও রানি। যাওয়ার আগে পেট পুরে খিচুড়ি এবং গুড় খেয়েও স্বস্তি নেই তাদের! লরি আসতে দেরি হওয়ায় দু’জনকেই বেশ কয়েক ঘন্টা চার পা বাঁধা অবস্থায় থাকতে হল। কেন? বনকর্মীদের বক্তব্য, প্রায় দু’-তিন মাস ‘ক্র্যল বন্দি’ থাকার পর রবিবার বাইরে বেরিয়েই ফের দস্যিপনা শুরু করেছিল দু’জনেই। ফলে নিরাপত্তার কারণেই দু’জনকে বেঁধে রাখতে হয়েছিল। তবে লরিতে তোলার পর বাঁধন কিছুটা আলগা করে দেওয়া হয়। রাজার গন্তব্য গরুমারা অভয়ারণ্য। রানি যাচ্ছে জলদাপাড়ার হলং-এ। ঝাড়গ্রামের রেঞ্জ অফিসার পার্থপ্রতিম ত্রিপাঠী বলেন, “রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওখানে তাদের কুনকি হাতি করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” |
ঝাড়গ্রামে দু’জনে।—ফাইল চিত্র। |
গত ৮ জানুয়ারি কলাইকুণ্ডার জঙ্গল থেকে বছর দু’য়েকের পুরুষ হস্তিশাবককে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। মানুষের সঙ্গ পাওয়া দলছুট শাবকটিকে দলমার পাল আর ফিরিয়ে নেয়নি। তাই সেদিনই শাবকটিকে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মিনি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শাবকটির নাম দেন রাজা। কিন্তু ঝাড়গ্রামের ওই চিড়িখানায় হাতি রাখার পরিকাঠামো ছিল না। রাজার দস্যিপনায় নাজেহাল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথমে তার পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। দড়ির শক্ত বাঁধনে রাজার পা ফুলে ক্ষত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত শালবল্লির ঘেরাটোপ বা ‘ক্র্যল’ তৈরি করে সেখানে রাজাকে রাখা হয়। মাস খানেক পরে রাজার পাশেই আর একটি ‘ক্র্যল’-এ ঠাঁই হয় রানির। বছর তিনেকের মেয়েশাবক হলেও রানি মোটেই অবলা নয়। দলছুট রানি গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢুকে পড়েছিল নয়াগ্রাম ব্লকের ভুড়রুবনি গ্রামে। রানির গুঁতো খেয়ে প্রাণ হারান স্থানীয় এক যুবক। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে বনকর্মীরা রানিকে পাকড়াও করেন। রানিকে ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। রানি নামটাও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া। মিনি চিড়িখানার অন্যতম দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠে রাজা-রানি।
বন দফতর সূত্রের খবর, পোষ মানানোর জন্য উপযুক্ত মাহুত বা প্রশিক্ষিত বনকর্মীর তত্ত্বাবধানে বুনো হাতিদের কিছুদিন ক্র্যল-এ রাখা হয়। এ জন্য দরকার কুনকি হাতিও। কিন্তু মাহুত বা প্রশিক্ষিত বনকর্মী ঝাড়গ্রামে নেই। সরকারি প্রাণী চিকিৎসকেরা রাজা ও রানিকে হস্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর পক্ষে মত দেন। মাস খানেক আগে রাজা ও রানিকে উত্তরবঙ্গে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখা। কিন্তু তারপরও প্রশাসনিক ঢিলেমির কারণে রাজা ও রানির উত্তরবঙ্গ যাওয়ার দেরি হচ্ছিল বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। গত ২৬ মার্চ রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সম্পত সিংহ বিস্ত ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করতে এসে জানতে পারেন রাজা ও রানিকে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয় নি। এরপরই রাজা ও রানিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শনিবার রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার জলদাপাড়া বনাঞ্চল থেকে মাহুত ও প্রশিক্ষিত বনকর্মীর তিন জনের একটি দল ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানায় আসেন। রবিবার দুপুরে ওই মাহুত ও বনকর্মীদের তত্ত্বাবধানে রাজা ও রানিকে ক্র্যল থেকে বের করা হয়। রাতে তাদের লরিতে করে উত্তরবঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়। |