জঙ্গলেই শৈশবের পাঁচ বছর
রেন ফরেস্ট আর বাঁদর পরিবার, মারিনার গল্প সত্যি
বাড়ির বাগানের জংলা-ঝোঁপটা খুব পছন্দ ছিল মারিনার। বড়দের নজর এড়িয়ে একটা স্বাধীন জগৎ। দিনের বেশিটাই খেলনাবাটি নিয়ে ওখানেই কাটাতো ছোট্ট মারিনা।
কিন্তু হঠাৎই বদলে গেল মারিনার জগৎ। নিজের জগতে ব্যস্ত মারিনা হঠাৎই এক দিন হারিয়ে ফেলল সব কিছু। পৌঁছে গেল দূর কলম্বিয়ার ‘রেন ফরেস্ট’-এ। আর সেখানে তাকে বড় করল এক বাঁদর পরিবার।
কোনও গল্প কিংবা উপন্যাস নয়। মোগলি বা টারজানের সঙ্গে অনেক মিল থাকলেও, মারিনা কোনও কাল্পনিক চরিত্র নয়। একেবারেই সত্যি ঘটনা। শৈশবের পাঁচটা বছর কলম্বিয়ার জঙ্গলেই কাটিয়েছেন মারিনা। মানুষ হয়েছেন বাঁদর পরিবারের কাছে। যদিও এখন তিনি লাতিন আমেরিকা থেকে বহু দূরে। সুদূর ব্রিটেনের ইয়র্কশায়ারের বাসিন্দা। দুই সন্তানের জননী। সম্প্রতি তাকে নিয়েই কলম ধরেছেন এক লেখক। আর তাতেই প্রকাশ্যে এল তাঁর অরণ্যের দিনরাত্রি।
সালটা ১৯৫৪। বাড়ির বাগানে খেলছিল মারিনা। হঠাৎই সাদা কাপড় দিয়ে কে যেন পিছন থেকে এসে মুখ চেপে ধরল। বাধা দিতে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটা, কিন্তু পারেনি। কীসের যেন একটা কড়া গন্ধ, দু’চোখ জড়িয়ে ঘুম নেমে এল। আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান যখন ফিরল, বুঝতে পেরেছিল একটা ট্রাকে রয়েছে সে। আশপাশে আরও অনেকে কাঁদছিল। ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল মেরিনা। তার পর কী হল, তা-ও ঠিক জানা নেই। কেউ এক জন ছুঁড়ে ফেলে দিল মাটিতে। চোখের বাঁধনটা সরিয়ে দেখার চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু দু’টো লম্বা পা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়নি। ভীষণ ভয় করছিল মারিনার। কান্নাও পাচ্ছিল। কিন্তু ছোট্ট মারিনা ফের ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন যখন ঘুম ভাঙল, সূর্য তখন মধ্যগগনে। চারপাশে জঙ্গল আর জঙ্গল। বড় বড় গাছ। খুব খিদে পেয়েছিল মারিনার। খিদের চোটে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। ওই অবস্থাতেই হাঁটতে শুরু করে, যদি মাকে খুঁজে পাওয়া যায়। মা কেন তাকে নিতে আসছে না, সেটা ভেবেও খুব অভিমান হতে শুরু করে। হঠাৎই চোখ যায় আশপাশের গাছগুলোর দিকে। অনেকগুলো চোখ তার উপর নজর রাখছে। তাকিয়ে দেখে, সে মোটেই একা নেই। বরং তাকে ঘিরে রয়েছে বাঁদরদের একটা দল। প্রচণ্ড ভয় পায় সে। কিন্তু বিষয়টা পরে অত ভয়ঙ্করও হয়নি। বাঁদরের দলেই মিশে যায় সে। এ রকম নজির অবশ্য নতুন নয়। এর আগে ’৯৬ সালে নাইজিরীয় একটা দু’বছরের বাচ্চা ছেলেকেও শিম্পাঞ্জীদের দল থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তাতে কী? অনেকেই ভেবেছিল মারিনা বানিয়ে বলছেন। পরে অবশ্য প্রমাণ হয়ে যায়, মারিনার কাহিনি গল্পের মতো হলেও এক অসাধারণ সত্যি ঘটনা।
বাঁদরগুলোকে দেখে প্রথমে খুব ভয় পেয়েছিল মারিনা। আগন্তুককে দেখে এগিয়ে আসে তারা। জামা টেনে, চুল ধরে ভাল করে খতিয়ে দেখে তারা। মারিনাও দেখে ওরা কী রকম এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। গাছের থেকে ফল ছিড়ে খাচ্ছে। ওইটুকু মেয়েও বুঝেছিল, বাঁচতে হলে খাবার চাই। তাই বাঁদরগুলোর দেখাদেখি জঙ্গলি-জীবনের পাঠ এক-এক করে শিখতে শুরু করে। এ ভাবেই ধীরে ধীরে কেটে যায় তিন বছর। মারিনা তত দিনে শিখে গিয়েছে বাঁদরের ভাষা, আদবকায়দা সব কিছু।
কিন্তু এ সময় ক্রমেই ফিরে আসতে শুরু করে শৈশবের স্মৃতি। বাবা-মা ফিরে পাওয়ার প্রবল বাসনা আবারও চাগার দেয়। ভাগ্যক্রমেই জঙ্গলের ধারে দেখা মেলে তিনটে কুঁড়েঘর। সাহস করে এগিয়ে যায় সে। ওই বাড়িরই এক মহিলা তাকে দেখে ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠে। পরে তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। তাকে উদ্ধার করার জন্য বহু আকুতি মিনতি করেছিল মারিনা। কিন্তু তার গলা থেকে শুধুই বাঁদরের মতো আওয়াজ বেরোচ্ছিল। মানুষের গলা তো কবেই হারিয়ে গিয়েছে।
মারিনা বললেন, সে দিন বুঝেছিলাম, বাঁদরের ওই দলটা মানুষ ছিল না, ওরা আমার পরিবার ছিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.