সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর দল তৃণমূলের দূরত্ব যে কমছে, সে ইঙ্গিত ছিলই। সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় তা বুঝিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথবাবু নিজেই। এ বার দলের তরফেও যে তাঁকে কাছে টানার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, তা বোঝা গেল তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কথায়।
রবিবার চন্দননগরে দলের কর্মিসভায় সুব্রতবাবু বলেন, “উনি (রবীন্দ্রনাথ) আমাদের সম্পদ। দলে আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। মন্ত্রিত্বেও আছেন। তবে শারীরিক কারণে কাজ থেকে কিছু দিন অব্যাহতি নিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে দলের সব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেবেন।”
রবীন্দ্রনাথবাবুর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “সরাসরি ওঁর বক্তব্য শুনিনি। তাই কিছু বলতে পারব না। তবে দলের হয়ে এখনও কাজ করে যাচ্ছি।”
মাস কয়েক আগে মন্ত্রিসভায় যে বড়সড় রদবদল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে রবীন্দ্রনাথবাবুর পদটির উপরে কোপ পড়ে। কৃষিমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা দফতরের দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই পদ পছন্দ হয়নি রবীন্দ্রনাথের। তার উপরে কৃষি প্রতিমন্ত্রী পদে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন পর্ব থেকে উঠে আসা আর এক নেতা বেচারাম মান্নাকে বসানোয় ‘মাস্টারমশাইয়ের’ আঁতে ঘা লাগে বলে দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে বসেন রবীন্দ্রনাথ। মহাকরণে যাওয়া ছেড়ে দেন।
দলের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন।
ইদানীং অবশ্য রবীন্দ্রনাথবাবুকে দলেরই কিছু কিছু কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার সঙ্গে সিঙ্গুরে ট্রমা কেয়ার ইউনিটের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি। আগামী ৬ এপ্রিল মমতার সভার প্রস্তুতি দেখতেও সিঙ্গুরের রতনপুরে যান। বিধানসভা অধিবেশনে হাজির না থাকলেও ক’দিন আগে বলেন, “দলনেত্রী যদি মনে করেন মন্ত্রিসভায় আমাকে প্রয়োজন আছে, তবে অন্য কোনও দফতর দেওয়া হলে বিবেচনা করে দেখতে পারি।”
এই পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথবাবুর ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ আর কত দিনের, সেই গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। হুগলি জেলা সিপিএমের সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর কটাক্ষ, “সন্ন্যাস সম্পূর্ণ হয়নি ওঁর। হয় তো পূর্বাশ্রমের কথা বার বার মনে আসছে!” |