|
|
|
|
দাদার বিরুদ্ধে ভাইয়ের তাস খেলল বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাহুল গাঁধীকে সামলাতে এ বারে তাঁর খুড়তুতো ভাই বরুণকে ময়দানে নামাল বিজেপি।
বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ আজ যে টিম ঘোষণা করেছেন, তাতে পদোন্নতি হয়েছে বরুণ গাঁধীর। তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করলেন দলীয় নেতৃত্ব। বরুণের এখন ৩৩ বছর বয়স। এর আগে বিজেপিতে কেউ এত কম বয়সে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন কি না সন্দেহ।
বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, বরুণকে এই গুরুত্ব দেওয়ার পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে। এক, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে বরুণের হিন্দুত্ব ভাবনাকে কাজে লাগানো। দুই, কংগ্রেসের রাহুল গাঁধীর মতোই যুবকদের কাছে টানতে বরুণকে ব্যবহার করা। তিন, কংগ্রেস যখন রাহুলকে মুখ করে লোকসভা নির্বাচনে যেতে চাইছে, সেই সময় গাঁধী পরিবারেরই আর এক জন সদস্যকে তাঁর সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। যাতে লড়াইটা রাহুল বনাম নরেন্দ্র মোদী হওয়ার বদলে হয়ে যায় রাহুল বনাম বরুণ।
রাজনাথ-ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, “রাহুল ও বরুণ দু’জনেই গাঁধী পরিবারের সদস্য। ফলে বিজেপিতে বরুণকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বুঝিয়ে দিতে চাই, রাহুল মোকাবিলা করুন বরুণের সঙ্গেই। মোদীর উচ্চতা রাহুলের থেকে ঢের বেশি।” বিজেপির এই কৌশল আঁচ করে কংগ্রেসও বরুণকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে না। বরং রাহুল বনাম বরুণের সম্ভাব্য লড়াইকে খাটো করেই দেখতে চাইছে তারা। তাদের মতে, রাহুল গোটা দেশ নিয়ে ভাবছেন, কংগ্রেসের পুরো সংগঠনটাকে সামলাচ্ছেন। বরুণ তাঁর ধারেকাছে আসেন না। বিজেপি সেই ক্ষমতাও বরুণকে দেয়নি। কংগ্রেস নেতৃত্বের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বলের কথায়। তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বরুণের কথা ছাড়ুন। বিজেপির কোনও বড় নেতার কথা বলুন।”
তবে কংগ্রেস যে ভাবেই বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা করুক, বিজেপিতে সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্ব অনেকটাই। দলের যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত ও নীতি রূপায়ণের দায়িত্ব থাকে সাধারণ সম্পাদকদের কাঁধে। এত কম বয়সে বরুণকে সাধারণ সম্পাদক করে আনা নিয়ে দলের মধ্যেও অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। উত্তরপ্রদেশের হিন্দুত্ববাদী আর এক মুখ বিনয় কাটিয়ার তাঁর অসন্তোষ চেপে রাখেননি। তিনি বলেন, “কংগ্রেস হোক বা বিজেপি, ‘গাঁধী’ পদবী থাকলে কিছু গুরুত্ব তো এমনিতেই পাওয়া যায়।” দলের মধ্যেকার অসন্তোষ বাইরে চলে আসায় বিজেপির অন্য নেতারাও বরুণের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। বরুণের মা বিজেপির সাংসদ মেনকা গাঁধীও বলেন, “আমি খুশি বরুণ এই দায়িত্ব পাওয়ায়। আমার বিশ্বাস, পুরো মন ও হৃদয় দিয়ে বরুণ তার দায়িত্ব পালন করবে।”
তবে রাহুলকে টক্কর নেওয়ার জন্য গুরুদায়িত্ব দেওয়া হলেও বিজেপির অন্দরেই বরুণকে নিয়ে সংশয় রয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতায় বিজেপি নেতারা দেখেছেন, বরুণ দায়িত্ব তো চান। কিন্তু তা ঠিকমতো পালন করেন না। উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা ভোটে তাঁকে মনপসন্দ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে প্রচারও করেননি। অরুণ জেটলির মতো নেতারা বরুণকে সাধারণ সম্পাদক না করে সহ-সভাপতি করারই পক্ষপাতী ছিলেন। তার একটা কারণ বরুণের খামখেয়ালিপনা। অন্য কারণ, বরুণ আজ পর্যন্ত গাঁধী পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। তাঁর সঙ্গে দাদা রাহুল, বিশেষ করে দিদি প্রিয়ঙ্কার সম্পর্ক খুবই ভাল। জ্যেঠিমা সনিয়াও তাঁকে স্নেহ করেন। বরুণকে বিজেপিতে এনেছিলেন প্রমোদ মহাজন। পরে এক জনসভায় তিনি বরুণকে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বলেন। কিন্তু বরুণ জানিয়ে দিয়েছিলেন, এমন কিছু করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ বিজেপি এখনও ওঁকে দিয়ে এই কাজটাই করাতে চাইছে। বরুণ কি এ বার দলের চাপের মুখে অবস্থান বদলাবেন সেই প্রশ্নও উঠেছে। বরুণের পদোন্নতির পিছনে কাজ করেছে তাঁর প্রতি আরএসএসের সমর্থনও। আরএসএস ও বিজেপির মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী নেতা রামলাল তাই বলেন, “কংগ্রেসের গাঁধী পরিবারের সঙ্গে বরুণের ঘনিষ্ঠতা কোনও বাধা হবে না। রাজনাথ সিংহ তাঁর টিমে আশি শতাংশ যুবকদের ঠাঁই দিয়েছেন। সে দিক থেকে বরুণের এই দায়িত্ব পাওয়া যুক্তিসঙ্গত।”
সঙ্ঘ ও বিজেপির অনেকে মনে করেন, রাহুলের থেকে বরুণ যদিও ঠিক দশ বছরের ছোট, কিন্তু তাঁর বক্তৃতার ধার অনেক বেশি। বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা দেওয়ার মামলা থেকেও অব্যাহতি পেয়েছেন বরুণ। এখন তিনি বেশি সংযত ও দায়িত্বশীল। তা ছাড়া পরের লোকসভায় বরুণ তাঁর বর্তমান নির্বাচনী কেন্দ্র পিলিভিট বদলে রাহুলের নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠীর পাশে সুলতানপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে পারেন। ফলে বরুণ নিজেও কংগ্রেসের যুবরাজের সঙ্গে টক্কর নেওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত। ভোটে এখন দুই দাদা-ভাইয়ের লড়াইয়ের অপেক্ষা। |
|
|
|
|
|