মোদী গন্ধে ভরা টিম রাজনাথ
টিম রাজনাথ। কিন্তু সুস্পষ্ট ছাপ নরেন্দ্র মোদীর।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই নতুন দল ঘোষণা করলেন বিজেপির নতুন সভাপতি। আর সেই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আরও এক পা এগোলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রত্যাশামতোই মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান-সহ সব বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পিছনে ফেলে মোদীকে ফিরিয়ে আনা হল বিজেপির সংসদীয় বোর্ডে। যে বোর্ড দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি। এক সময় দলীয় সভাপতি থাকাকালীন এই কমিটি থেকে মোদীকে ছেঁটে ফেলেছিলেন রাজনাথ সিংহ। আজ তাঁকেই আবার দরজা খুলে দিতে হল গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। মোদীকে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্যও করা হল। মোদীর দাবি মেনে নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেলেন বলবীর পুঞ্জ, সি পি ঠাকুর, রামেশ্বর চৌরাশিয়া, স্মৃতি ইরানি, শ্যাম জাজু, আনন্দি বেন পটেল, নিতিন ভাই পটেলরা। আবার মোদীর আপত্তিতে তাঁর ঘোর বিরোধী সঞ্জয় জোশীকে সামিল করা হয়নি টিমে। বাদ রইলেন যশবন্ত সিন্হা, যশোবন্ত সিংহের মতো প্রবীণরাও।
এত কিছুর পরে রাজনাথের দলে মোদীর হাতের ছাপই স্পষ্ট দেখছেন রাজনীতির লোকজনেরা। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, এর পর থেকে মোদীর দিল্লি যাতায়াত বেড়ে যাবে। দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পিছনে তাঁর প্রভাবও বাড়বে। আর এ সবের পিছনে আরএসএসের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় রয়েছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, সঙ্ঘ না চাইলে মোদীর উত্থান বা তাঁর প্রভাব বিস্তার, কোনওটাই সম্ভব হত না।
বিজেপির একটি অংশ কিন্তু মনে করছে, কংগ্রেস তথা শাসক দল যখন বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় জেরবার, তখন মোদীর এই উত্থান-পর্বকে কাজে লাগাতে পারল না দল। কেন? তাঁদের বক্তব্য, এই কমিটি তৈরি নিয়েও দলের মধ্যে কোন্দল যথেষ্ট। রয়েছে অন্য সমস্যাও। যেমন, মোদী চেয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ অমিত শাহকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অথচ দলের নেতাদের অনেকেই বলছেন, এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত নয়। ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় এখনও নিষ্কৃতি পাননি অমিত শাহ। কংগ্রেসের কপিল সিব্বল, আর পি এন সিংহ থেকে রশিদ আলভিরা আজ অমিতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে পরোক্ষে মোদীকেই আক্রমণ শুরু করেছেন। বিজেপির একটি অংশও মনে করছে, এতে দলের ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়বে।
একই ভাবে যশবন্ত সিন্হা বা যশোবন্ত সিংহ, কাউকেই কমিটিতে রাখা হয়নি। যশবন্ত তাতে যারপরনাই চটেছেন। কিন্তু মুখ ফুটে নিজের কথা বলেননি। উল্টে তাঁর বক্তব্য, অর্জুন মুন্ডাকে কমিটিতে রাখলে ভাল হত। তা হলে ঝাড়খণ্ডের মানুষই খুশি হতেন। বিনয় কাটিয়ারকে কোর টিমে নেওয়া হয়নি। কিন্তু বয়স ও অভিজ্ঞতায় নবীন বরুণ গাঁধীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানিয়েছেন কাটিয়ার। কটাক্ষ করে বলেছেন, শুধুমাত্র ‘গাঁধী’ পদবীর জোরেই কমিটিতে ঢুকতে পেরেছেন বরুণ। কোন্দলের এখানেই শেষ নয়। লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজদের দাবি সত্ত্বেও শিবরাজ সিংহ চৌহানকে সংসদীয় বোর্ডে আনেননি রাজনাথ। আবার শিবরাজকে তুষ্ট রাখতেও কসুর করেননি তিনি। মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ-বিরোধী উমা ভারতী ও প্রভাত ঝা’কে সাধারণ সম্পাদক করার বদলে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। প্রকাশ্যে উমা অবশ্য ক্ষোভ জানাননি। শুধু বলেছেন, এর আগে তিনি দু’বার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দল যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা তিনি পালন করবেন।
সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে এ বার কোনও মহিলা নেই। নিতিন গডকড়ীর সময় তা-ও এক জন ছিলেন। কিন্তু এ বারে আরএসএসের চাপে মুরলীধর রাও, রাজনাথের ঘনিষ্ঠ রাজীবপ্রতাপ রুডি ও জেটলির সুপারিশে ধর্মেন্দ্র প্রধানকে সামিল করতে গিয়ে সেই টিমে বাদ পড়েছেন মহিলারা।
সুপারিশ আর তুষ্ট করার খেলা এই দলে এতটাই স্পষ্ট যে, বিজেপির এক নেতা বললেন, “গোটা টিম দেখলে বোঝা যাবে, কার সুপারিশে কে এসেছেন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে যখন লড়াই করা দরকার, তখন সংগঠন সাজানোর পিছনেও নেতায়-নেতায় লড়াইয়ের ছাপ স্পষ্ট।”
সব মিলিয়ে তাই নতুন কমিটি ঘোষণার দিনেও কোন্দল পিছু ছাড়েননি বিজেপির। দলের একটি অংশ বলছে, তাই বোধহয় মোদীর উত্থানকে আজ সে ভাবে উদ্যাপন করতে পারল না দল। এমন নয় যে, এ দিনই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী বলে ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে যে ধাপে ধাপে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটা তো এ দিনের কমিটিতে স্পষ্ট। অথচ পুরো বিষয়টিকে উচ্চগ্রামে নিয়ে গেল না দল। তার একটা কারণ অবশ্যই নীতীশ কুমারের দলের আপত্তি। নীতীশ এনডিএ-র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শরিক। এর মধ্যেই তিনি নানা ভাবে কংগ্রেসের প্রতি বার্তা পাঠাচ্ছেন। মোদীর কঠোর বিরোধী বিহারের এই নেতাকে তুষ্ট রাখতেই তাই এখনই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর নামে বড় ঘোষণা করা হল না বলে দলীয় সূত্রের খবর। আবার আর একটি সূত্র বলছে, আজ বড় ঘোষণার ব্যাপারই ছিল না। যা হবে সব ধাপে ধাপে। বস্তুত, ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম না-ও ঘোষণা হতে পারে। তাই নীতীশের আপত্তি নিয়ে এখনই ভাবার কিছু নেই।
বিহারের ক্ষেত্রে কিন্তু মোদীর দাবিকে গুরুত্ব দিয়েছে দল। সেখান থেকে কমিটিতে এসেছেন রামেশ্বর চৌরাশিয়া, সি পি ঠাকুর। এঁরা মোদীপন্থী এবং নীতীশ-বিরোধী। রয়েছেন রাজনাথ-ঘনিষ্ঠ রুডি। রয়েছেন শাহনওয়াজ হুসেন। যেমন কুশওয়াহার মতো পিছড়ে বর্গের নেতা ঠাঁই পেয়েছে, তেমনই আছে ঠাকুর নেতাও। অর্থাৎ, মোদীর নাম ঘোষণা হলে নীতীশ ছেড়ে চলে যাবেন এই আশঙ্কা থেকে আগেভাগেই ঘর গুছিয়ে রাখতে শুরু করেছে বিজেপি। নীতীশ যেমন সব ধর্ম বা জাতপাতের উপরে জোর দেন, সেই পথেই কমিটি তৈরি করলেন রাজনাথ। এ দিন এই নিয়ে ঘোষণা করার আগে তিনি আডবাণীর বাড়িও ঘুরে আসেন।
রাজনাথের এই দলে উন্নয়নের ধারক-বাহক হিসেবে মোদী যেমন থাকছেন, তেমনই গোবলয়ে হারানো হিন্দু ভোট ফিরে পেতে থাকছেন উমা, বরুণ গাঁধী, বিনয় কাটিয়াররা। উত্তরপ্রদেশে উমা ভারতী, কল্যাণ সিংহের মতো নেতাদের দিয়ে ওবিসি ভোট টানার কৌশল ইতিমধ্যেই নিয়েছে বিজেপি। একই কাজে মোদীকেও ব্যবহার করতে চায় দল।
মোদীর এই ধাপে ধাপে উত্থানে কংগ্রেস সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি। তবে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেন, “লোকসভা ভোটের তো অনেক দেরি। মোদী আগে কর্নাটক সামলে দেখান।” তাঁর কটাক্ষ, “মোদী যে ভাবে বিজেপিতে প্রভাবশালী হচ্ছেন, তাতে আগামী দিনে মোদীর লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে নয়, হবে খোদ বিজেপির সঙ্গেই।”
এ দিনের বিজেপির দলীয় কোন্দল যেন সিব্বলের কটাক্ষই আর এক বার সত্যি করে দেখাল!

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.