স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমায়
ভরসা ব্যাঙ্ক আমানতই

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দু’দফায় রেপো রেট মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমালেও ব্যাঙ্কগুলি জমার উপর তেমন ভাবে সুদ কমানোর পথে হাঁটেনি। অন্য দিকে, এক চিলতে হলেও স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ কমছে আজ ‘বোকা দিবস’ থেকে।
সুদ নামমাত্র কমলেও তাকে ছোট করে দেখা হয়তো ঠিক হবে না। ডাকঘর সেভিংস ডিপোজিট এবং এক বছর মেয়াদি আমানত ছাড়া ১ এপ্রিল থেকে ১০ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ কমছে বাকি সব ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে। যেমন পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সুদের হার ৮.৮% থেকে কমে হচ্ছে ৮.৭%। মাসিক আয় প্রকল্পে ৮.৫% থেকে ৮.৪%। একই হারে সুদ কমছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র, প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্প-সহ অন্য সব প্রকল্পে।
অবসরের পরে বহু মানুষ ডাকঘরে টাকা রাখেন। সুদ কমায় প্রতি লক্ষ টাকায় আমানতকারীদের সুদ কমবে ১০০ টাকা। অর্থাৎ যিনি দু’তিনটি প্রকল্প মিলিয়ে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে রাখবেন, তিনি বছরে আগের থেকে কম পাবেন ২,০০০ টাকা। খাদ্যপণ্যের দর যখন বেড়েই চলেছে, তখন এই সুদ হ্রাস কিন্তু সামান্য নয়।
বেশ কিছু দিন ধরে ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি। এই সুদ-পতন তাকে আরও একটু উসকে দেবে। হাতে নতুন করে অস্ত্র তুলে দেবে লোক-ঠকানো চিট ফান্ডগুলিকে, গ্রামাঞ্চলে যাদের রমরমা বাজার। একটাই আশার কথা, এই সব প্রকল্পে আগামী এক বছর সুদ কমার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। সুদের হার পুনর্বিবেচনা করা হবে ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে।
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সুদের হার কমে ৮.৭% হলেও সুদ পুরোপুরি করমুক্ত হওয়ায় এই অ্যাকাউন্টের জনপ্রিয়তা হয়তো তেমন কমবে না। অন্য প্রকল্পগুলিতে সুদের হার প্রচলিত ব্যাঙ্ক-সুদের তুলনায় ৫০ থেকে ১০০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কম থাকবে। এই সুদ হ্রাসে ১ লক্ষ কোটি টাকা আমানতে সরকারের সাশ্রয় হবে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। তা সরকারের অবশ্যই বিরাট কোনও সমস্যার সমাধান করবে না। সরকার যখন মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে অক্ষম, তখন সত্যিই কি এই সুদ হ্রাসের প্রয়োজন ছিল? এতে গ্রাম এবং ছোট শহরের সাধারণ মানুষকে ঠকানোর নতুন হাতিয়ার পেল অসাধু চিট ফান্ডগুলি। আরও এক-চিলতে গরিব হল গরিবেরা। ফিকে হল স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা।
মানুষের লগ্নির জায়গাগুলির আকর্ষণ ক্রমশই কমছে। শেয়ার বাজার দুর্বল এবং অস্থির। ফলে ঝিমিয়ে আছে মিউচুয়াল ফান্ডের জগৎ। বাজারের তুলনায় সুদ বেশ খানিকটা কম হওয়ায় পিপিএফ ছাড়া অন্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির আকর্ষণ প্রায় তলানিতে। দাম পড়ছে সোনারও।
এই অবস্থায় ভরসা শুধু ব্যাঙ্ক আমানত। ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমানোর পথে হাঁটেনি। ফলে সাধারণ মানুষ এখনও স্থায়ী আমানতে সুদ পাচ্ছেন ৮.৫০ থেকে ৯.২৫%। প্রবীণ নাগরিকেরা সর্বাধিক সুদ পেতে পারেন ৯.৭৫%।
এক দিকে সঞ্চয় প্রকল্পগুলির আকর্ষণ কমা এবং অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধির চাপে মানুষের সঞ্চয় হ্রাস পাওয়ায় দেশে সঞ্চয়ের পরিমাণ কমেই চলেছে। অর্থনীতির পক্ষে এটি আদৌ ভাল নয়। এর জেরে কমছে শিল্পে লগ্নিপ্রবাহ। এ অবস্থাতেও শেয়ার বাজার এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের আকর্ষণ বাড়াতে সরকারকে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক ছাড়া লগ্নির অন্যতম জায়গা হতে পারে ঋণ নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড। জায়গাটি বিশেষ করে ভাল করদাতাদের কাছে। এই সূত্র থেকে করমুক্ত ৮% আয় সম্ভব। প্রচার বেশ কম হওয়ায় প্রকল্পগুলি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জ্ঞান এবং আস্থা বেশ কম। ব্যাঙ্ক-সুদ কমতে শুরু করলে এই সব প্রকল্পে মূলধনী লাভেরও সম্ভাবনা আছে। শেয়ার বাজার অনেকটা নেমে আসায় এসআইপি পদ্ধতিতে প্রতি মাসে লগ্নি করা যেতে পারে সুবিন্যস্ত ইক্যুইটি প্রকল্পে। অল্প অল্প করে কিনে রাখা যেতে পারে প্রথম সারির কিছু ব্লু-চিপ শেয়ারও।
বাজারের সুযোগ বুঝে কিনে রাখা যেতে পারে এইচডিএফসি, স্টেট ব্যাঙ্ক, টাটা স্টিল, ইনফোসিস, টিসিএস, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, মারুতি-সুজুকি ইত্যাদি শেয়ার। অন্যান্য শেয়ারের মধ্যে তালিকায় রাখা যেতে পারে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, পিএনবি, এলআইসি হাউসিং, ক্যাস্ট্রল, আইটিসি, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার ইত্যাদি শেয়ার। এই সব শেয়ারে লগ্নি করতে হবে অন্ততপক্ষে তিন বছরের জন্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.