অনেক অনুনয়-বিনয়েও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকেই বেছে নিলেন কিংফিশারের কর্মীরা। সল্টলেক স্টেডিয়ামের মঞ্চে শাহরুখ-ক্যাটরিনা-দীপিকার উপস্থিতিতে যখন নাচবেন উপস্থিত কয়েক হাজার জনতা, তখন স্টেডিয়ামের বাইরে নীরব মিছিলে হাঁটবেন বিজয় মাল্যর কিংফিশারের কর্মীরা। তাঁদের হাতে থাকবে জলন্ত মোমবাতি আর স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। একই ধরনের প্রতিবাদ দেখা যাবে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের বাইরেও।
গত অক্টোবর মাসে নয়ডায় ফর্মুলা ওয়ান রেসে-র আগে এই ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছিলেন কিংফিশারের কর্মীরা। তবে সে বার আশ্বাস ও এক মাসের বকেয়া বেতন দিয়ে সেই বিক্ষোভ ঠেকিয়েছিলেন বিজয় মাল্য। কিন্তু, এ বার কর্মীদের কথায়, “সহজে চিঁড়ে ভিজবে না। ওঁর কোনও প্রতিনিধি এ বারেও আমাদের সঙ্গে বসে মীমাংসার চেষ্টা করতে পারেন। উদ্দেশ্য হবে, মাল্যর ভাবমূর্তি বাঁচানো। কোনও রকমে আইপিএল-টা পার করে দেওয়া। কিন্তু আমরাও এ বার আইপিএল-এর সুবিধা নিতে চাই। আইপিএল শেষ হওয়ার আগেই আমাদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দিতে হবে। নয়তো আমরা প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছি না।”
রবিবার সারা দিন ধরে বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গত ১০ মাস ধরে বেতন না পাওয়া কিংফিশারের কর্মীরা। মাত্র দিন কয়েক আগেই বিজয় মাল্যর তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, মার্চের মধ্যেই বকেয়া সমস্ত বেতন দিয়ে দেওয়া হবে কর্মীদের। কিন্তু ৩১ মার্চ, রবিবার রাত পর্যন্ত সেই আশ্বাস কার্যকর হয়নি। সারা দিন অপেক্ষার পরে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেন কিংফিশারের কর্মীরা। ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ও সাধারণ কর্মীরাও। প্রতিবাদ জানানোর
জন্য ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে উড়ে এসেছেন বহু কর্মী। মুম্বই থেকেও অনেকের আসার কথা। তাঁরা
সকলেই বিক্ষোভে অংশ নেবেন। ২ এপ্রিল, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য পাইলট ও বিমানসেবিকাদেরও অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, তাঁদের একাংশও মিছিলে হাঁটবেন।
কিংফিশার কর্মীদের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দু’দলে বিভক্ত হয়ে তাঁরা জড়ো হবেন সল্টলেক স্টেডিয়াম ও কলকাতা বিমানবন্দরের সামনে। এক কর্মীর কথায়, “আইপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি কলকাতায় আসবেন। তাঁরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তাঁরাও দেখুন, বিজয় মাল্য কিংফিশার কর্মীদের মাসের পর মাস বেতন না দিয়ে আইপিএল-এ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু-র জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন!”
বিজয় মাল্য নিজে সম্ভবত মঙ্গলবার কলকাতায় উপস্থিত থাকবেন না। তবে অনুমান, আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় প্রতিটি দলের প্রতিনিধিই উপস্থিত থাকবেন। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমও থাকবে।
তাই সেখানে কিংফিশার কর্মীদের এই বিক্ষোভ দেশে তো বটেই,
প্রচার পাবে বিদেশেও। এতে অস্বস্তিতে পড়তে পারেন মাল্য। তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করতেই এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে কর্মীরা নিজেরাই জানিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কিংফিশারের উড়ান নিয়মিত চালু করার জন্য গত সপ্তাহেই সংস্থার তরফে তৎপরতার কথা বলা হয়েছিল। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নতুন করে পরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে বলে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়। বিমানসংস্থার এক কর্তা জানিয়েছিলেন, বিজয় মাল্যর মদ-প্রস্তুতকারক সংস্থার সিংহভাগ শেয়ার এক মার্কিন সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। ফলে, সমস্ত কর্মীর ৮ মাসের বকেয়া বেতন দিয়ে দেওয়া হবে।
সমালোচকরা অবশ্য মনে করছেন, ৩ এপ্রিল থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট-যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। এবং সেখানে যাতে কর্মীরা বিক্ষোভ না দেখান, তাই এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন মাল্য। তাঁর আশঙ্কা ছিল, খেলা চলাকালীন মাঠের বাইরে পাইলট-বিমানসেবিকা-ইঞ্জিনিয়ারেরা বিক্ষোভ দেখালে তা নিয়ে দেশ-বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাঁর আশঙ্কাকে কার্যত সত্যি প্রমান করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকেই প্রতিবাদের জন্য বেছে নিলেন কর্মীরা। গত অক্টোবর থেকে কিংফিশারের উড়ান পরিষেবা বন্ধ। ৩১ ডিসেম্বর কিংফিশারের লাইসেন্স বাতিল করে দেয় ডিজিসিএ। |