আমের মুকুলে ম্যাঙ্গো হপারের হানা
শোষক পোকার দাপটে সমস্যায় পড়েছেন আমচাষিরা। গাছ ভর্তি মুকুল এলেও পোকার আক্রমণে অনেক শুকিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
কালনা ও পূর্বস্থলী ব্লকে বহু চাষি ধান জমির পাশে আমগাছ লাগিয়ে একই সঙ্গে দু’টি চাষ করেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হিমসাগর প্রজাতির আম চাষ হয়। মে থেকে আম পাকতে শুরু করে। জামাইষষ্ঠীর আগে লরিতে করে এই আম রাজ্যের নানা বাজারে সরবরাহ হয়। আমচাষিরা জানান, আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় এ বার বেশির ভাগ গাছেই ভাল মুকুল এসেছিল। তাঁদের আশা ছিল, ফলন ভাল হবে। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়তে থাকে। যে মুকুলগুলি গাছে থেকে গিয়েছে, তাতে কোথাও দু’টি বা কোথাও তিনটি আম ধরেছে। অথচ এই সময়ে সেখানে দশ-বারোটা করে আম ধরার কথা। আমচাষি তালেব শেখের দাবি, “কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে বেশির ভাগ আমই নষ্ট হয়ে যায়। এ বার এখনও কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। তার আগেই ফলনের এই অবস্থা। দুর্যোগের পরে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, বুঝতে পারছি না।” আর এক আমচাষি নরেশ দত্তের বক্তব্য, “মুকুল আসার পরে বেশির ভাগ বাগান মালিকই চুক্তিতে বাগান বিক্রি করে দেন। মুকুলের পরিমাণ দেখেই বাগানের দাম ওঠে। অনেকেই এ বার চড়া দামে বাগান কিনে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।”
ম্যাঙ্গো হপারের আক্রমণে শুকোচ্ছে মুকুল।
মহকুমা কৃষি দফতর আম চাষিদের সমস্যায় পড়ার কথা স্বীকার করেছে। বিশেষজ্ঞেরা জানান, মুকুল ঝরে পড়ার প্রধান কারণ শোষক পোকা বা ম্যাঙ্গো হপারের উৎপাত। এ বার তা বেড়েছে। আমে মুকুল ধরলেই শুরু হয় পোকাদের উৎপাত। সব রস শুষে নেওয়ায় কয়েক দিনেই শুকিয়ে যায় মুকুল। অতিরিক্ত রস শুষে নিয়ে তা বমি করে দেয় শোষক পোকা। মিষ্টি এই রসকে চাষিরা বলেন মধুলালা। তা কুয়াশার মতো মাটিতে ঝরে পড়ে। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “ওই মিষ্টি রস থেকেই ছত্রাকের জন্ম হয়। তা ফুল, পাতা ও কচি আমের ক্ষতি করে। তাই গোড়াতেই শোষক পোকা নিধন জরুরি।” তাঁর দাবি, শুধু ‘স্প্রে’ করলেই শোষক পোকার উৎপাত আটকানো যায় না। গাছের ছাল বা কোটরে বেশ কয়েক দিনের জন্য লুকিয়ে থাকে তারা। কীটনাশকের গন্ধ চলে গেলেই আবার ফিরে আসে পোকা। তিনি জানান, গোটা বাগানে এক সঙ্গে স্প্রে করা উচিত। তবে আর এক সহ-কৃষি অধিকর্তা নিলয় করের দাবি, “এ বার ভারি বৃষ্টি না হওয়াতেই পোকার উৎপাত বেশি।”
পোকা থেকে বাঁচাতে চলছে আমগাছে কীটনাশক স্প্রে।
তাহলে কী ভাবে এই পোকা হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে? কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, মুকুল আসার আগেই স্প্রে করা প্রয়োজন। মুকুল আসার পরে ১৫ লিটার জলে ৫ লিটার ইমিডাক্লোরপিড মিশিয়ে তা স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও অ্যাসিডামিপ্রিড ও নিম থেকে তৈরি কীটনাশক ব্যবহার করলে ভাল ফল মিলবে। স্প্রে করার সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা, যাতে গাছের সমস্ত অংশেই ভাল করে ভেজানো যায়। আমগাছের পাতা পিচ্ছিল হওয়ায় ‘স্প্রে’ করার সময়ে আঠা ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে স্প্রে করা ওষুধ পাতা ঝরে পড়া আটকাবে। আঠা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে কাপড় কাচার সাবান বা ভাতের ফ্যান বা রিঠের জল। স্প্রে-র সঙ্গে আঠা মেশালে দীর্ঘ সময়ে গাছে ওষুধ লেগে থাকার সম্ভাবনা থাকে।
—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.