সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস, লরি, গাড়ি, মোটরবাইক। মুখে চিন্তা, বিরক্তি, চোখ আটকে ঘড়ির কাঁটায়। সময় পেরোচ্ছে পনেরো মিনিট থেকে আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা, আরও বেশি। রবিবার, রাজ্য জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষার দিনেও পানাগড় তার চেনা ছবি বদলাল না। যানজটে আটকে অনেকেই সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারলেন না, অনেকে বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে প্রায় দৌড়ে হলে ঢুকলেন, আবার অনেককে পেন, পেন্সিল গুটিয়ে রেখেই ফিরে যেতে হল বাড়িতে। |
আসানসোল স্টেশন যেন মিনি কুম্ভ। |
দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমার স্কুলগুলিতে মূলত বর্ধমানের কৃষি অঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের আসন পড়েছিল। আর শিল্পাঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা গিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। দু’তরফের যাতায়াতেই দু’টি পথ ছিল। রেলপথ আর সড়ক পথ। এর মধ্যে অনেকেই বর্ধমান স্টেশন থেকেও ফিরে আসেন বাস ধরতে। দীর্ঘক্ষণ টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পেয়ে তাঁরা তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরেন। কিন্তু তারপরেই চারিদিকের বাস এসে থমকে যায় পানাগড়ে। জাতীয় সড়কের যে অংশ চার লেন হয়নি, সেখানে ক্রমেই বাড়তে থাকে যানজট। তবে যানবাহনের সংখ্যা যে এ দিন বেশি হবে তা আঁচ করে সকাল থেকেই সচেতন ছিল ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু বেলা বাড়তেই তা যে পর্যাপ্ত নয় তা প্রমাণ হয়ে যায়। ওই চার কিমি পেরোতে লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। |
আসানসোলেরই একটি স্কুলে নাম খোঁজার ভিড়। |
দুর্গাপুরের থেকেও আসানসোল মহকুমায় যাঁদের আসন পড়েছিল তাঁদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। ভিড়ে সরাসরি আসানসোলের বাসে উঠতে না পেরে অনেকেই বাধ্য হয়ে দুর্গাপুরের বাসে ওঠেন। কিন্তু পানাগড়ে ঘণ্টা দেড়েক আটকে থেকে সিটিসেন্টার পৌঁছতেই তাঁদের ১২টা বেজে যায়। এমনই একজন রিঙ্কি লাহিড়ি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আসানসোলে মহিশীলা হাইস্কুলে সিট পড়েছে। জানি না পরীক্ষা শুরুর আগে পৌঁছতে পারব কি না.” পরে সহায়তা কেন্দ্রের কয়েকজন এসে গাড়ির বন্দোবস্ত করে দিলে ফের রওনা হন তাঁরা। পরে স্কুলে পৌঁছে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে বর্ধিত সময়সীমার খবর শুনে স্বস্তি পান তাঁরা। |
নাকাল পরীক্ষার্থীরা দুর্গাপুরে ভিড় জমিয়েছেন লস্যি, শশার দোকানে। |
কাটোয়ার এক কেন্দ্রে আসানসোলের প্রফুল্লচন্দ্র পল্লির বাসিন্দা এক পরীক্ষার্থীর মা প্রগতি বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “পানাগড়ের কাছে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে ছিলাম। নিজেদের গাড়ি থাকায় এসে পৌঁছতে পেরেছি। যাঁরা বাসে আসছেন তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয়।” আউশগ্রামের এক স্কুলে আসন পড়েছিল ডিপিএল কলোনির বাসিন্দা জয়িতা সুঁই-এর। স্বামীর সঙ্গে গাড়িতে রওনা হলেও পানাগড়ে অতক্ষণ আটকে থাকার পরে এক বন্ধুর মোটরবাইকে চড়ে শেষ মুহূর্তে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছন তিনি। |
সিটিসেন্টারে বাসের ছাদে করে বাড়ি ফিরছেন পরীক্ষার্থীরা। |
তবে মোটরবাইক নিয়েও পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি দুর্গাপুর কেমিক্যালস কলোনির বাসিন্দা মৌমিতা চক্রবর্তী। তাঁর আসন পড়েছিল গলসির এক হাইস্কুলে। সকাল থেকে যানজটে আটকে থেকে দেড়টা নাগাদ ফিরে যান তিনি। ফিরে অবশ্য জানতে পারেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে আর কিছু করার নেই। |
ছবি তুলেছেন শৈলেন সরকার, বিকাশ মশান ও বিশ্বনাথ মশান। |