|
|
|
|
তারাবাজি |
আইপিএল-এ কলকাতা থাকা হবে না |
জোর গুজব রটেছিল, বিশেষ বন্ধু দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে দেখা করতে নাকি ভাঙা পা নিয়েই কলকাতা
থেকে ছুটে গিয়েছেন ওয়াই-তে। আরও রটেছিল যে তিনি না কি বহু ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’এ অভিজ্ঞ। সত্যি?
না পুরোটাই মনগড়া? শহরে ‘গুন্ডে’র শ্যুটিংয়ের শেষে রণবীর সিংহের
মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
রণবীর সিংহ কীসে সব থেকে ভয় পান?
ভূত?
নাহ্।
ভবিষ্যৎ?
নাহ্।
তা হলে?
ভয় পান যদি তাঁর মা শ্যুটিং সেটে উপস্থিত হন।
পরপর তিন বার শ্যুটিং করতে গিয়ে রণবীর চোট পেয়েছেন। এক বার ‘লুটেরা’র শ্যুটিং করতে গিয়ে। আর এক বার ‘গুন্ডে’র সময়। শেষ বার যখন ‘গুন্ডে’র শ্যুটিং করতে গিয়ে পা কাটে এবং দু’টো স্টিচ করতে হয়, তখন তাঁর মা সাফ জানিয়ে দেন যে এর পর থেকে শ্যুটিং-এ যাবেন তিনি। সেই শুনে রণবীর তো থরহরিকম্প!
মা আর শ্যুটিং? না মুমকিন!
“আমি কি নায়িকা যে মা শ্যুটিং-এ এসে বসে থাকবেন?” মুচকি হেসে বলেন তিনি। “আমার ভয় করে যদি আমাকে আমার পরিবারের কারও সামনে পারফর্ম করতে হয়। আমাকে এক লক্ষ অপরিচিত মানুষের সামনে স্টেজে উঠে নাচতে বলুন, আমার আপত্তি নেই। খুব কম লোকে জানে যে প্রথম স্টেজ শো-তে আমি সব কিছু গুলিয়ে ফেলেছিলাম। একটা অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি ছিল। অনুষ্কার (শর্মা) সঙ্গে আমার ‘ব্যান্ড বাজা বরাত’-এর থেকে একটা গানের সঙ্গে নাচার কথা ছিল। যেই দেখলাম যে বাবা-মা বসে আছেন, অমনি সব গুলিয়ে গেল,” বলেন তিনি।
তবে এ কথাও স্বীকার করেন যে শ্যুটিংয়ের সময় তিনি নিজের খেয়াল রাখেন না। কেউ বলেন এটা ছেলেমানুষি। কেউ বলেন সেটে তাঁর ‘জোশ মে হোশ খো যাতা হ্যয়’।
মার্চ মাসের উনিশ তারিখ দুর্ঘটনাটা হয়। একটা গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। যেখানে অর্জুন কপূরের সঙ্গে রণবীরের ‘মাড রেসলিং’ করার কথা ছিল। শ্যুটিং করতে গিয়ে পা পড়ে যায় কাচের টুকরোর ওপর। দুর্ঘটনার প্রায় সাত দিন পরেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন তিনি। পা মাটিতে ফেলতে গেলেই অসম্ভব ব্যথা। “মা আর আমার বোন তো এই সব শুনে রেগে লাল! তবে আজকাল আমিও চোট পেতে পেতে ক্লান্ত। |
|
একটা সময় ছিল যখন আমার এই ‘টাফ গাই’ বা ‘কুল ডুড’ ইমেজটা ভাল লাগত। এখনও আমি টাফ। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে একটু ক্লান্ত। আই অ্যাম ফেড আপ উইথ পেন...” বলেন রণবীর।
শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের ডেকচেয়ারে শুয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন রণবীর। এক পায়ে বাদামি রঙের জুতো। এক পায়ে ব্যান্ডেজ। মাঝে মাঝে একটা কোলবালিশ হাঁটুর নীচে রাখছেন। নড়াচড়া করতে একটু অসুবিধাও হচ্ছে। তবু কথা বলার সময় বেশ প্রাঞ্জল। কী করে এত এনার্জেটিক তিনি? “চিরকালই আমার জীবনীশক্তি অফুরন্ত। আমি তো এ রকম চোট পেয়েও একটা নাচের সিকোয়েন্সে শ্যুটিং করেছি। ক্যামেরাটা এমন ভাবে রাখা ছিল যে কেউ বুঝতেই পারবে না যে আমার পায়ে দু’টো স্টিচ,” বলেই একগাল হাসলেন।
আচ্ছা তিনি নাকি পায়ের চোট নিয়েও সম্প্রতি কলকাতা থেকে ওয়াই-এ ছুটে গিয়েছিলেন দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে দেখা করতে। ইন্টারনেটে তো সে নিয়ে প্রচুর লেখালিখিও হয়েছে। কী ভাবে তিনি কাজের ফাঁকে মুম্বই গেলেন? কী ভাবেই বা ওয়াই পৌঁছে হোটেলে ঘরবন্দি হয়ে থেকে গেলেন যাতে দীপিকা এসে তাঁর সঙ্গে গোপনে দেখা করতে পারেন? শুনেই তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “এটা আবার কোথায় বেরোল? আমি তো পড়িনি!”
তার পর নিজের আই প্যাডটা চেয়ে পাঠালেন। “জানি না আমাকে নিয়ে ট্যাবলয়েডগুলোর এত কৌতূহল কেন! সব সময় ভাল লাগে না। আমি তো সিনেমার দুনিয়া থেকে আসিনি। পুরোপুরি ‘নন-ফিল্মি’ ব্যাকগ্রাউন্ড আমার। একটা সময় ছিল যখন নিজের সম্পর্কে সব কিছু বলে দিতাম। তার পর দেখলাম যে এর ফলে লোকে তার সুযোগ নিচ্ছে। যা নয় তা লেখা হচ্ছে। খুব ভেঙে পড়তাম ওই সব লেখা পড়ে। আস্তে আস্তে বুঝলাম যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে গেলে একটু গন্ডারের চামড়া থাকা দরকার। প্রথম প্রথম খারাপ কিছু লেখা হলে গোটা দিনটা মুখ ব্যাজার করে বসে থাকতাম। এখন কয়েক ঘণ্টা মনটা একটু খচখচ করে। এক দিন আসবে যখন আমার জাস্ট কিছুই এসে যাবে না,” বলেন তিনি।
তবে এ কথা মেনে নেন যে সেলিব্রিটিদের প্রাইভেসি বলে আর কিছু থাকছে না। কয়েক মাস আগে দুবাইয়ের এক প্রাইভেট পার্টিতে দীপিকার সঙ্গে তাঁর আলিঙ্গনের ছবিও প্রকাশ্যে বেরিয়েছে। “আমরা একটা ফিশবোলের মধ্যে বাস করি। এই যে ধরুন আমি ডেকচেয়ারে শুয়ে সাক্ষাৎকারটা দিচ্ছি। কেউ যদি একটা অদ্ভুত অ্যাঙ্গেলে আমার ছবি তুলে, তার সঙ্গে একটা মুখরোচক ক্যাপশন দিয়ে ট্যুইটারে আপলোড করেন, আমি কিচ্ছু করতে পারব না,” বলেন রণবীর।
তবে এ কথা সত্যি যে তিনি রান্না করতে ভালবাসেন। তাঁর রান্না বাটার চিকেন নাকি একেবারে লা-জবাব। বাড়িতে কেউ এলে খাওয়াতে ভালবাসেন। ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। আর পছন্দ করেন ‘ক্লোজেট ডিজে’ হতে। বন্ধুদের পার্টিতে তিনিই ডিজে।
ইন্টারনেটে তাঁর নামে সার্চ করলেই আজকাল ভেসে ওঠে তাঁর এক স্বীকারোক্তি। তাঁর নাকি অনেক ‘ওয়ান নাইট-স্ট্যান্ড’-এর অভিজ্ঞতা আছে! এটা কি সত্যি? “ভাল হয়েছে এটা আপনি জিজ্ঞেস করলেন। আমাকে একটা র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘এভার হ্যাড আ ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড? ইফ ইয়েস, হাউ মেনি?’ আমি উত্তরে বলেছিলাম ‘ইয়েস...মোর দ্যান ওয়ান।’ আর তার পর দেখি সব জায়গাতে লেখা হচ্ছে যে আমার বহু ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’-এর অভিজ্ঞতা আছে। ‘মোর দ্যান ওয়ান’-এর মানে কি বহু বার? আমার কাছে তো ‘মোর দ্যান ওয়ান’ মানে দু’বার হতে পারে। তিন বারও হতে পারে। আবার অন্য কারও কাছে সেটা একশো বারও হতে পারে। যদি প্রাক্তন বাস্কেটবল খেলোয়াড় উইট চেম্বারলেইনের কথা বলা হয়, ওঁর তো প্রায় কুড়ি হাজার মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়! আমি চাইলে সত্যি কথাটা না বললেও পারতাম। তবে সেটা আমি করিনি। ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ নিয়ে আমার কোনও নেতিবাচক ধারণা নেই। নিজের জীবনেও তার অভিজ্ঞতা আছে। তবে তার মানে এই নয় যে বহু বার আমি ওই সব করেছি।” |
• তাঁর রান্না বাটার চিকেন নাকি লা-জবাব। বাড়িতে কাজের সূত্রে কেউ এলে, তাঁকেও খাওয়াতে ভালবাসেন। |
|
• ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। |
• কপিরাইটার ছিলেন বলে কোনও অনুষ্ঠানে নিজের বক্তৃতার বয়ান নিজেই লেখেন। |
|
দীপিকার সঙ্গে কি সত্যি তিনি ওয়াই-তে দেখা করতে গিয়েছিলেন? নাকি পুরো ঘটনাটাই আজগুবি? বানানো? “পুরোটাই বানানো,” তিনি জানান। এ রকম আরও আছে নাকি! কিছু দিন আগে লেখা হয়েছিল যে তিনি কলকাতার শ্যুটিংয়ের মাঝে মুম্বই চলে যান। কারণ? দীপিকাকে ড্রাইভ করে নিয়ে যাবেন তাঁদের ‘রাম লীলা’র পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির জন্মদিনের পার্টিতে। এটাও নাকি ভুয়ো খবর!
তবে ঘনিষ্ঠ সূত্র অনুযায়ী রণবীর আর দীপিকা সত্যিই খুব ভাল বন্ধু। বনশালির ছবির জন্য দু’জনে অনেক ওয়ার্কশপ করেছেন যাতে তাঁদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা ভাল হয়। ছিদ্রান্বেষীরা বলছেন যে রণবীর-দীপিকা প্রেম নিয়ে এ সব গুজব ইচ্ছে করেই ছড়ানো হচ্ছে যাতে ‘রাম লীলা’ নিয়ে দর্শকের কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। রণবীর অবশ্য এই সব বিতর্কের মধ্যে যেতেই চান না। বলেন যে দীপিকার মতো ‘নিঃস্বাথর্’ অভিনেত্রী আর দু’টো দেখেননি। দীপিকা নিজেকে নিয়ে কথা বলতে উদগ্রীব নন। আর সেটাই রণবীরের বেশ রিফ্রেশিং লাগে। বলেন খুব কম ব্যক্তি দেখেছেন যারা নিজের বিষয়ে না বলে সামনের বক্তার ব্যাপারে বেশি কথা বলে।
রণবীরের ঘনিষ্ঠদের দাবি, তিনি আর দীপিকা ভাল বন্ধু। “তবে তাঁরা যে প্রেম করছেন এ কথা এখনও বলা যায় না। ভাল বন্ধু আর প্রেমিক হওয়ার মধ্যে একটা পর্যায় থাকে, যখন একটা সম্পর্ককে নাম দেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই সময় গোপনীয়তা রাখাটাই রেওয়াজ। কে বলতে পারে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা কোন দিকে গড়াবে! কিন্তু যে কোনও সেলিব্রিটি হলেই লোকে চান একটা সংজ্ঞা দিয়ে সম্পর্কটাকে বেঁধে দিতে। সেখানেই যত ঝামেলা,’’ বলেন তারা।
এ বছর রণবীরের তিনটি ছবি মুক্তি পাবে। ‘লুটেরা’, ‘গুন্ডে’ আর ‘রাম লীলা’। “ব্যক্তিগত জীবনের কথা না লিখে আমার কাজ নিয়ে লেখাটাই কাম্য। কলকাতায় শ্যুটিং করতে এসে কত অভিজ্ঞতা হল! পুরুলিয়ার গ্রামে গিয়েছিলাম। দারুণ লেগেছে দেখে যে বলিউড ওখানে কী জনপ্রিয়! লোকে আমার ছবি সম্পর্কে জানে। জানতে চায় আমার অভিনয় নিয়ে। বলিউডের যে এত প্রভাব তা আমার আগে জানা ছিল না। কলকাতায় শ্যুটিং করার অভিজ্ঞতা দারুণ। শ্যুটিংয়ের পরে লাউঞ্জ বার-এ গিয়েছি। জানেন ‘গুন্ডে’র শ্যুটিংয়ে আমার একটা নাচের সিকোয়েন্স ছিল অভিনেতা সৌরভ শুক্লর সঙ্গে। উনি বেশ নাচতে ভালবাসেন আর তাই গানটা শু্যট করতে বেশ মজা লাগছিল আমার। সব চেয়ে মজা হয়েছিল এক দিন হোটেল লবিতে। হঠাৎ দেখি সাত ফুট চার ইঞ্চি লম্বা এক লোক আমাদের সামনে। নিজেকে ঠিক পিঁপড়ে মনে হয়েছিল। আমাদের পরিচালক আলি ওই ছবিটা ট্যুইটারে দিয়ে দেয়,” বলেন রণবীর।
তবে কলকাতা যতই স্মরণীয় হোক, রণবীর কিন্তু শহরে আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহাযজ্ঞে থাকতে পারছেন না। যেখানে কিনা আবার পারফর্ম করতে আসবেন দীপিকা! “ইস্, এত দিন কলকাতায় ছিলাম, আর ঠিক আইপিএল-এর আগেই চলে যাচ্ছি! আমি আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের লাইন-আপটা জানতাম না। আজকাল আমার এত ব্যস্ত শেডিউল যে ফ্রি টাইম বলে কিছু নেই,” আপশোস রণবীরের।
যদি পা-টা ঠিক হয়ে যেত তা হলে কি তিনি আইপিএল-এর কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চাইতেন? “অবশ্যই। সেই ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলছি। গলি ক্রিকেট। আর পাঁচটা ভারতীয়র মতো আমিও স্বপ্ন দেখেছি ক্রিকেটার হওয়ার। ‘মুম্বই ইন্ডিয়ান্স’-কে সমর্থন করি। সচিনের খেলা ভাল লাগে। আমি যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করি, তখন ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ধোনিকেও পছন্দ খুব। অনুপ্রাণিত হই ওঁর খেলা দেখে। কী ভাবে অস্ট্রেলিয়াকে হারাল এই সিরিজে!” বলেন রণবীর।
টেস্ট ক্রিকেট, না কি টি-২০? কোনটা বেশি পছন্দ? “টেস্ট ম্যাচ হল ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ ফর্ম। আমার কাছে টি-২০র সঙ্গে তার কোনও বিরোধ নেই। বিনোদনটাই বড় ব্যাপার। সময় পেলে আইপিএল-এর খেলাগুলো দেখতে যাব,” প্রতিশ্রুতি রণবীরের।
সাক্ষাৎকারের শেষে ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এর বিদ্যা বালনের সেই ডায়লগ মনে পড়ল সিনেমা তিনটে জিনিসের জন্য চলে: ‘এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট।’ তা হলে সিনেমার বাইরের জগতেও কি তাই? ক্রিকেটই হোক বা সেলেব্রিটির ব্যক্তিগত জীবনের মুখরোচক খবর বিনোদনই কি সেখানে শেষ কথা নয়? |
ছবি: কৌশিক সরকার |
|
|
|
|
|