হুল্লোড়
তারকাদের খামখেয়াল
জেনিফার লোপেজ শেষ পর্যন্ত আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গাইছেন না। কারণ? তাঁর নাকি আকাশচুম্বী সব চাহিদা। প্রাইভেট এরোপ্লেন চাই। এক ডজনের ওপর হোটেল রুম, যেখানে নাকি থাকার কথা ছিল তাঁর স্টাইলিস্ট, সহকারী আর রাঁধুনির। জেনিফারের মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন, তিনি অ্যালবামের রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত। সময়াভাবেই কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে পারলেন না।
জেনিফার লোপেজ
তবে সেলিব্রিটিদের খামখেয়ালিপনা নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। বিদেশি বহু ট্যাবলয়েডেই তাঁর চাহিদার কথা নিয়ে চর্চা চলছে। একবার এক বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংকরতে গিয়ে নাকি জেনিফার চেয়েছিলেন একটা সম্পূর্ণ সাদা ড্রেসিং রুম। সেখানে থাকবে সাদা সোফা আর সাদা মোমবাতি। ঘরের টেবিলে রাখা ফুলের রংও হবে সাদা। তিন ধরনের কোলা চেয়েছিলেন তিনি। একটা ডায়েট কোলা, একটা সাধারণ, আর একটা ক্যাফিনমুক্ত। এ ছাড়াও তাঁর দরকার দুটো অসিলেটিং পাখা। ঘরের তাপমাত্রা হওয়া চাই ২৫.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। হোটেলের স্যুটে চাই হ্যাজেলনাট কফি ক্রিমার। এমনও শোনা যায় যে তিনি যে কফি খান সেটা বানানোর সময় চামচটা কাপে ঘোরাতে হয় ক্লকওয়াইজ ভাবে।
আমেরিকা মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-এর সময় জেনিফার চেয়েছিলেন কাস্টম-ফিটেড ফেরি। তাতে রাখার কথা ছিল হিরে-খচিত হেডফোন। সেট-এ থাকাকালীন চেয়েছিলেন ব্যক্তিগত আইব্রো স্পেশালিস্টও।
গত বছর আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কেটি পেরি। চেন্নাইতে পারফর্মও করে গিয়েছেন তিনি। ভারতে আসার আগে জোর গুজব উঠেছিল যে কেটির ড্রিম স্যুটে থাকা চাই দু’টো ক্রিম রং-এর ডিম-এর অনুকরণে বানানো চেয়ার। তার মধ্যে একটার সঙ্গে ফুটস্টুলও প্রয়োজন। তবে চেন্নাইতে অনুষ্ঠান করতে এসে কেটি কিন্তু ও সব কিছুই চাননি। টি ভেঙ্কট বর্ধন, ডিএনএ নেটওয়ার্কের অধিকর্তা, বলেন, ‘‘এ সব অনেকটাই গুজব।

ব্রিটনি স্পিয়ার্স
এঁরা পেশাদার গাইয়ে। অনুষ্ঠানের অনেক আগেই এঁরা আমাদের একটা লিস্ট পাঠিয়ে দেন। তার মধ্যে থাকে তাঁরা কী ধরনের খাবার পছন্দ করবেন। কী রকমের পানীয় তাঁদের দরকার। অবশ্য সব সময়ই এঁরা একটা বিকল্পও দিয়ে দেন কারণ এঁদের পছন্দসই ব্র্যান্ড এ দেশে পাওয়া নাও যেতে পারে। যত দূর মনে হচ্ছে কেটির জন্য আলাদা করে কিছুই প্রয়োজন হয়নি। পাঁচতারা হোটেল তো থাকেই। আর দরকার ছিল একটা এসইউভি। সেটা তো আন্তর্জাতিক এক জন গায়িকার জন্য রাখতেই হয়।”
তবে ভেঙ্কটের মনে পড়ে যায় ‘রোলিং স্টোনস’ দলটির কথা। “ওঁরা যখন কনসার্ট করেন তখন ওঁদের সঙ্গে নিয়ে যান একটা বিলিয়ার্ড টেবিল। অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিলিয়ার্ড খেলাটা ওঁদের রিল্যাক্সেশনের অঙ্গ। তাই আমাদের বিলিয়ার্ড টেবিলটা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হত। স্টিং যখন এ দেশে অনুষ্ঠান করতে এসেছেন, উনি চাইতেন হোটেলে ফিরে শান্ত মনে যোগাসন করতে।
কেটি পেরি
যেখানেই অনুষ্ঠান থাক না কেন, এই যোগের সময়টা ছিল ওঁর একান্ত জরুরি,’’ বলেন ভেঙ্কটবর্ধন।
মেটিরিয়াল গার্ল ম্যাডোনা অবশ্য এ বিষয়ে সবার ওপরে। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড অনুযায়ী ম্যাডোনার প্রত্যেকটি শোয়ের আগে প্রয়োজন একটা নতুন ‘টয়লেট সিট কভার’। সেটা শোয়ের শেষে ভেঙে চুরমার করে দেওয়াটাও দরকার! এক বার বলছিলেন কনসার্টের সময় যেন এয়ার কন্ডিশনিংটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ সেটা চললে নাকি ওঁর গলা খারাপ হয়ে যেতে পারে। সেটা ছিল ২০০৬ সালে লন্ডনের কনফেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুর। তাঁর অনুরোধে এয়ার কন্ডিশনার বন্ধ করে দিতেই তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। শ্রোতাদের তো প্রায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম! এই শুনে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিভাগ পত্রপাঠ নির্দেশ দেন যাতে আবার এয়ার কন্ডিশনার চালানো হয়। তবে এতেও নাকি ম্যাডোনা দমেননি। পরবর্তী ট্যুরে চেয়েছেন কুড়িটি কেস ভর্তি ‘কাব্বালা’ জল, সাদা গোলাপ আর তিনটি মোমবাতি। এই দিয়ে নাকি তিনি ‘দুষ্টু আত্মা’ দমন করতে সক্ষম হন। আর এক বার তো ইটালিতে গিয়ে বলেছিলেন যে ভিলার সব আলো যেন একসঙ্গে নিভিয়ে দেওয়া হয় যাতে তিনি নির্ঝঞ্ঝাটে আকাশের তারা দেখতে পারেন।
আরও আছে। সাদা লিলি আর হালকা গোলাপি রংয়ের গোলাপ তাঁর বিশেষ পছন্দ। সেই গোলাপের ডাঁটি ছ’ইঞ্চির বেশি বড় হলে চলে না তাঁর! ট্যুরের সময় তাঁর সঙ্গে থাকে দু’শো লোক। তার মধ্যে তিরিশ জন বডিগার্ড, যোগ-নির্দেশক, এক জন আকুপাংচারিস্ট আর ড্রাই ক্লিনার! হোটেল রুমের সব আসবাবপত্র বদলে নিজস্ব আসবাবপত্র দিয়ে সাজাতে ভালবাসেন তিনি। আর এই সব জিনিস জাহাজে করে তাঁর ট্যুরের লোকেশনে নিয়ে আসা হয়।
ম্যাডোনাকে যদি মনে হয় খামখেয়ালি, তা হলে লেডি গাগা আরও বিস্ময়কর। ২০১০ সালে ট্যুরে চেয়েছিলেন বরফের ওপর নন-স্মেলিং চিজ থেকে শুরু করে ঘরের তাপমাত্রায় ২৮ বোতল জল। দেড়শো জন লোক নিয়ে ট্যুর করেন তিনি। তার মধ্যে থাকে তিরিশ জন স্টাইলিস্ট থেকে শুরু করে এক জন ট্যারট কার্ড রিডার পর্যন্ত।

দিয়েগো মারাদোনা ম্যাডোনা
পপস্টার মারিয়া ক্যারে আর ব্রিটনি স্পিয়ার্সও কম যান না। মারিয়া এক বার শো করতে গিয়ে তাঁর কুকুরকে এত মিস করছিলেন যে তাকে আড়াই হাজার মাইল উড়িয়ে নিয়ে আসতে বলেন। তাও আবার ফার্স্ট ক্লাসে করে। এক বার বলেছিলেন তাঁর জন্য যেন লন্ডনের এক হোটেলে লাল কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হয় যার দু’দিকে থাকবে তিন ফুট উঁচু মোমবাতি। আর এ সবই জ্বলে উঠবে যখন তিনি রাত দু’টোর সময় হোটেলে পৌঁছবেন।
সার্কাস ট্যুর করতে গিয়ে ব্রিটনি চেয়েছিলেন হোটেলের ঘরে তাঁর জন্য আলাদা করে ডান্সিং পোল বসিয়ে দেওয়া হোক।
কলকাতাতে যদিও আন্তর্জাতিক অনেক সেলিব্রিটি এসেছেন, তাঁদের কেউই সাঙঘাতিক কিছু চেয়ে বসেননি। সেলিব্রিটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের কর্ণধার ভাস্বর গোস্বামীর মতে, “মেসি তেমন বিশেষ কিছু চাননি। মারাদোনা আলাদা। উনি কিং-সাইজ খাট চেয়েছিলেন। বিয়াল্লিশ ইঞ্চি টেলিভিশন সেট। রুমের মিনি ফ্রিজে চেয়েছিলেন শ্যাম্পেন। কলকাতার হোটেলে চেয়েছিলেন এক জন পুরোদস্তুর স্প্যানিশ রাঁধুনি। ইন-রুম লা কার্ত ডাইনিং দরকার। আর প্রয়োজন ছিল কোহিবা ব্র্যান্ডের হাভানা সিগার’’।

কিশোর কুমার
তবে বিদেশিদের বাইরে দেশের শিল্পীরাও মাঝে মধ্যে বেশ মজার আবদার করেছেন। অনুষ্ঠান উদ্যোক্তা তোচন ঘোষ বলেন যে কিশোর কুমার ছিলেন সবার থেকে আলাদা। এক বার হায়দরাবাদে শো করতে গিয়ে বললেন ঘোড়া চাই। আর সেই ঘোড়া চেপে স্টেজে এসেছিলেন তিনি। তবে সব চেয়ে মজাদার ঘটনা ঘটেছিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তোচন বলেন, “আমাকে বলেছিলেন পাল্কি করে স্টেজে উঠবেন। সে শুনে আমি কুমারটুলিতে গিয়ে পাল্কির অর্ডার দিই। উনি গাড়ি করে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এলেন। গাড়ি থেকে নেমে উঠলেন পাল্কিতে। পর্দা টেনে দেওয়া হল। আর ‘পাল্কি চলে হুন হুনা’ করে স্টেজে গেলেন।”
কথায় বলে তারকাদের মেজাজই আলাদা। তাঁদের জীবনযাত্রায় সেই মেজাজের প্রতিফলন থাকাটাই তো স্বাভাবিক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.