টলিউড এ বার অ্যান্টার্কটিকায়
ইসল্যান্ড, মিশর তো টলিউড জয় করেই ফেলেছে। আফ্রিকার সিংহ’র সামনেও শ্যুটিং শুরু দিন কুড়ি পরেই। কিন্তু এ বার যেন তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।
ডিসেম্বর মাসের বারো তারিখে বাংলা ছবির শ্যুটিংশুরু হতে চলেছে সুদূর অ্যান্টার্কটিকাতে। ছবির নাম ‘গ্লেসিয়ার’। পরিচালনা করবেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
তবে চমক কিন্তু শুধু অ্যান্টার্কটিকাতেই থেমে নেই।
সৃজিত
এই ছবিতে প্রথম একসঙ্গে দেখা যাবে মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দেবকে। শুধু তাই নয়। এত বড় মাল্টিস্টারার কাস্টিং বাংলা ছবিতে যে হয়নি তা বলাই বাহুল্য।
গত শুক্রবার এই নিয়ে কনফারেন্স কল-এ তিন নায়কের সঙ্গে পাকা কথাও বলে ফেলেছেন সৃজিত।
অনেক দিন ধরেই বহু প্রযোজক, পরিচালক চেষ্টা করেছিলেন এই তিন সুপারস্টারকে একসঙ্গে ছবিতে কাজ করাতে। কিন্তু কোনও বারেই তা ফলপ্রসূ হয়নি।
“বহু দিন ধরেই আমি আর মিঠুনদা বলাবলি করছিলাম যে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। দেবও সেদিন বলছিল একসঙ্গে কাজ করার কথা। কিন্তু আমরা কেউই সে রকম চিত্রনাট্য পাচ্ছিলাম না। এই এত দিনে একটা চিত্রনাট্য পেলাম যেটা সবার পছন্দ হল,” শনিবার বিকেলে বর্ধমান যাওয়ার পথে বলছিলেন প্রসেনজিৎ।
যেহেতু এই ছবির পঁচানব্বই শতাংশ শ্যুটিংহবে অ্যান্টার্কটিকায়, বাকি শ্যুটিং হবে কলকাতায় পারপেল মুভি টাউনে। তাই বাজেটের দিক থেকেও ছবিটি হতে চলেছে ‘সব চেয়ে খরচসাপেক্ষ বাংলা সিনেমা’। বাজেট চল্লিশ কোটি। সেখানেও অবশ্য চমক অব্যাহত। এই ছবিটি যৌথ ভাবে প্রযোজনা করছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, রানা সরকার এবং অশোক ধানুকা।
এটির জন্য তাঁরা একটি আলাদা ব্যানারও করেছেন যার নাম রাখা হয়েছে ‘একা এবং কয়েকজনের সৃষ্টি’। সংক্ষেপে ‘EEKS’।
ছবিটি নিয়ে কৌতূহল এতটাই বেশি যে স্টার জলসা আগে থেকেই ছবির স্বত্বাধিকার কিনে নিয়েছে।
এই মুহূর্তে শ্যুটিংয়ের প্রি-প্রোডাকশনের কাজও চলছে পুরোদমে। “আমি ‘মিশর রহস্য’ সম্পাদনা করছি এই মুহূতের্। তাই পুরোপুরি সময় দিতে পারছি না। এক বার সম্পাদনার কাজ শেষ হয়ে গেলেই এই ছবির কাজে ঢুকে পড়ব,” বলছেন ছবির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু কেন শ্যুটিংঅ্যান্টার্কটিকায়? “ এটি একটি আর্জেন্টিনীয় পরিবারের গল্প। সেই পরিবারের কর্তা মিঠুন চক্রবর্তী। তা ছাড়া অ্যান্টার্কটিকা যাওয়ার পথে জাহাজেই ঘটবে যত রকম মারামারির দৃশ্য,” বলছেন পরিচালক।
প্রসেনজিৎ মিঠুন দেব
এই ছবিতে অন্যান্য ভূমিকায় দেখা যাবে পরম-আবির-শাশ্বত’কে। শোনা যাচ্ছে ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করবেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। তাঁর দুই শাগরেদ হিসেবে দেখা যাবে অরিজিৎ দত্ত এবং অরিন্দম শীলকে। “অনেক দিন ধরেই অফার আসছে। এই রোলটা এত চ্যালেঞ্জিং যে ‘হ্যাঁ’ বলে দিলাম। শুধু চাপ একটাই। আমাকে কুড়ি কেজি ওজন কমাতে হবে। প্রচুর ফাইট সিকোয়েন্স আছে,” বলছিলেন অনিরুদ্ধ।
এ ছাড়াও প্রযোজকদের তরফ থেকেই জানা গেল, ছবিতে থাকবেন তিন নায়িকা—স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রাইমা সেন ও তনুশ্রী চক্রবর্তী।
শুধু তাই নয়। তাঁদের নিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও শ্যুট হবে অ্যান্টার্কটিকাতে। শ্যুট করবেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক।
“এটা বিরাট একটা প্রজেক্ট। রানাদা যখন আমাকে গানটা শু্যট করতে বলল, আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তার ওপর অ্যান্টার্কটিকায় শ্যুটিং,” বলছিলেন ‘মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর’-এর পরিচালক।
তবে এই ছবিতে ডেটস নিয়ে মিঠুন চক্রবর্তীর সমস্যা একটা ছিলই। শেষ পর্যন্ত সেটা অবশ্য মিটে যায়।
“ডেটস নিয়ে মিঠুনদার যদিও একটু সমস্যা হচ্ছে কিন্তু উনি মুম্বইয়ের একটা বড় বাজেটের ছবি ছেড়ে দিচ্ছেন এই ছবিটার জন্য,” জানাচ্ছেন সৃজিত।
ছবিটির বাজেট যেহেতু আকাশছোঁয়া, তাই তার জন্য আলাদা রেভেনিউ মডেলও তৈরি হচ্ছে।
“অনেকেই অ্যান্টার্কটিকায় যেতে চান। আমরা চেষ্টা করছি একটা ট্র্যাভেল প্ল্যান করার যাতে এখান থেকে লোকে অ্যান্টার্কটিকা যেতে পারেন, আবার শু্যটিংও দেখতে পারেন। যে টাকা উঠবে, তাতে ছবির বাজেটের সুবিধে হবে,’’ বলছিলেন প্রযোজক রানা সরকার।
প্রযোজকদের কাছে এটাও জানা গেল ছবি মুক্তি পাবে পরের বছর নববর্ষের সময়।
সব শেষে অবশ্য এই ছবি নিয়ে শেষ কথা বললেন ‘মহাগুরু’। “অ্যান্টার্কটিকার মতো জায়গায় শ্যুটিং, এতগুলো স্টার, এত টাকা বাজেট। রাজি তো হয়ে গেলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবি হলে হয়,” হাসতে হাসতে বলছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী।

কুমেরুর টুকিটাকি
এই ছবির জন্য বিশেষ ধরনের পোশাক তৈরি করছেন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। প্রসেনজিৎ-এর জন্য বানানো হচ্ছে স্পেশাল হনুমান টুপি। বাইরের তাপমাত্রা যত কমই হোক না কেন, টুপির ভেতর তাপমাত্রা ২৪-২৬ ডিগ্রির মধ্যেই থাকবে।
মিঠুনের জন্য তৈরি হচ্ছে কান ঢাকা স্পেশাল মাফলার। চিন থেকে আনা হচ্ছে সেই বিশেষ ‘ফার’। এই মাফলার তৈরির আনুমানিক খরচ তেতাল্লিশ হাজার টাকা।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে অস্ট্রেলিয়ান ব্র্যান্ডের জুতো পছন্দ করেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দেবের জন্য জুতো বানাবেন সেই ব্র্যান্ডই।
অভিনেতা ও কলাকুশলীদের সবাইকে অক্টোবর মাস থেকেই হাই প্রোটিন ডায়েটে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু মৈত্রই আবার ছবির শ্যুটিং অ্যাডভাইসরও। উনি এক সময় অ্যান্টার্কটিকাতে গিয়েছেন বলে শ্যুটিংয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে সাহায্য করছেন সৃজিতকে।
• কী করে যাওয়া যায়
কলকাতা থেকে লন্ডন অথবা নিউ ইয়র্কে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস। বুয়েনস আইরেস থেকে উশুআইয়া বলে একটি শহরে পৌঁছতে হবে। এটি দক্ষিণ মেরুপ্রান্তের শেষতম শহর। সেখান থেকে জাহাজে করে অ্যান্টার্কটিকা

• ফকল্যান্ডসও ঘুরে আসতে পারেন
বুয়েনস আইরেস থেকে অ্যান্টার্কটিকার দূরত্ব ৯৯৪ মাইল। তার মাঝখানে ৩০০ মাইল দূরে পড়বে ফকল্যান্ড আইল্যান্ডস। ১৯৮২ সালে দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরের এই দ্বীপকে নিয়েই যুদ্ধ বাধে ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার। ঘুরে আসতে পারেন সেই দ্বীপেও
• যাওয়ার সেরা সময়
যেহেতু দক্ষিণ গোলার্ধ, তাই ভারতবর্ষে
শীতকালের সময়টাই অ্যান্টার্কটিকা
বেড়ানোর সেরা সময়

• যেতে এক জনের খরচ
আনুমানিক সাত লক্ষ টাকা

• কী দেখবেন
কিং পেঙ্গুইন, সীল, তিমি ছাড়াও রয়েছে
বরফঢাকা পাহাড়। রয়েছে হিমবাহ এবং
অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.