বামেরা এড়ালেও ইস্তাহারে জমি-নীতি বলছে কংগ্রেস
বামফ্রন্ট আপাতত এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের আর এক বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের পঞ্চায়েত ভোটের ইস্তাহারে জমি-নীতির কথা বলবে বিশদেই।
কেন্দ্রীয় সরকার এবং দলের সর্বভারতীয় অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এ বার পঞ্চায়েতের ইস্তাহারে সুস্পষ্ট জমি-নীতির পক্ষে সওয়াল করা হবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। জমির বিষয়ে স্পষ্ট দিশার অভাব এবং অধিগ্রহণে হাত গুটিয়ে থাকার জন্যই রাজ্যে শিল্পায়নের গতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, এই মর্মেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলবে তারা। যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিনিময়ে জমি অধিগ্রহণের পক্ষেই যুক্তি সাজানো হচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেসের ইস্তাহারে। জমির বিষয়ে রাজ্য সরকারের প্রকৃত অবস্থান কী, কখনও কোনও অবস্থাতেই সরকারি অধিগ্রহণ দরকার নেই বলে তারা মনে করে কি না এবং অধিগ্রহণ করতে হলে তার শর্ত কী হওয়া উচিত এই তিন স্তরে ভেঙে জমি-নীতির উপরে পরিচ্ছদ রাখা হবে ইস্তাহারে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করে দলের তরফে এই ব্যাপারে দলিল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “একটা কথা চালু করে দেওয়া হয়েছে, জমি নিতে গেলেই কৃষক বেঁকে বসবে! এই ধারণা যে ভুল, তার উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গেই আছে। বীরভূমের লোবায় গিয়ে দেখেছি, ওখানকার আন্দোলনকারীরা ঘোষণাই করে দিচ্ছেন তাঁরা জমি দিতে চান। রাজ্য সরকার যদি মনে করে থাকে তারা কখনওই জমি অধিগ্রহণ করবে না, তা হলে বড় শিল্পও হবে না!” তবে লাঠি-গুলি চালিয়ে জমি কেড়ে নেওয়ার পক্ষপাতীও যে তারা নয়, তা-ও বলবে কংগ্রেস। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “সহমতের ভিত্তিতে এগোতে হবে। দরকারে সর্বদল বৈঠক ডেকে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এ কথা আমরা আগেও বলেছি।” মানসবাবুর বক্তব্য, “আমরা তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক বা সিপিএমের মতো সুবিধাবাদী দল নই! তাই সর্বভারতীয় দল হিসাবে বৃহত্তর প্রেক্ষিত মাথায় রেখেই আমাদের বক্তব্য তৈরি হবে। ভূমি-নীতির পাশাপাশি সংখ্যালঘু, খাদ্য সুরক্ষা, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিষয়গুলিও গুরুত্ব দিতে হবে।”
বামফ্রন্টের খসড়া ইস্তাহার শিল্পের জন্য জমি-প্রসঙ্গ একেবারে এড়িয়েই গিয়েছে! ভূমি সংস্কার, গ্রামের গরিব মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য পাট্টাদান এবং তৃণমূলের জমানায় সে সব কেড়ে নেওয়ার কথা অবশ্য আছে। ফ্রন্টের ইস্তাহার কমিটির কাছে শরিক নেতৃত্বের একাংশ প্রস্তাব দিতে চান, সম্মতির ভিত্তিতে জমি নেওয়ার নীতির কথা সংক্ষেপে হলেও উল্লেখ করা হোক। নইলে মানুষের মনে সংশয় থাকবে। আবার ফ্রন্ট ও সিপিএমের অভিমত, জমি-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জমির পুরনো ভূত আবার ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার মানে হয় না!
নীতির প্রশ্নে স্পষ্ট বক্তব্য জানাতে চাইলেও রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। বিধান ভবনে শনিবার এআইসিসি-র দুই নেতা শাকিল আহমেদ ও রামচন্দ্র কুন্তিয়া বিভিন্ন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে যে রিপোর্ট নেন, তাতে এই ছবিই স্পষ্ট। জেলা থেকে রিপোর্ট এসেছে, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশে তৃণমূল অতীতের সিপিএমের কায়দায় ভয়-ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে। প্রদীপবাবু বলেন, “তৃণমূলের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়া যাবে না। কোথাও জরিমানা করা হচ্ছে! কেউ প্রার্থী হতে চাইলে এবং যাঁরা ভোট দেবেন, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা আইনত প্রশাসনের দায়িত্ব। এই জন্যই বিডিও বা এসডিও দফতরে নিরাপত্তা বাহিনী রাখার কথা বলছি।” প্রদেশ নেতৃত্বের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে তাঁরা প্রার্থী দিতে পারবেন, যদি সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে থাকে। সংরক্ষিত আসনের জন্য শংসাপত্র পেতে এখনও সমস্যা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাত মিটিয়ে সরকার কবে পঞ্চায়েত ভোট করবে, সেই প্রশ্নে কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য অন্ধকারে! প্রদীপবাবুর কথায়, “আমরা কাগজপত্র নিয়ে প্রার্থীদের তৈরি থাকতে বলছি। যাতে ভোটের চূড়ান্ত ঘোষণা হলেই মনোনয়ন জমা দিতে দৌড়তে পারেন! তবে রাজ্য সরকারকে দেখে মনে হচ্ছে, ভোটের মুখোমুখি হতে তারা ভয় পাচ্ছে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.