সেই সাপ জ্যান্ত
চিড়িয়াখানায় বন্দি সাপেদের দেখলে কেমন যেন একটু মায়া হয়, না? বাকিদের মতো হাঁকডাক নেই, রাজকীয় হাঁটাচলা নেই। বরং কাচের ভেতর দিয়ে কেমন জুল জুল করে দেখে। কাউকে আবার ভাল করে ঠাহরই করা যায় না। দেওয়ালের সঙ্গে নিজের মিহি শরীরটা মিশিয়ে শুয়ে থাকে। বেচারা বেচারা ভঙ্গি। আচ্ছা, তোমার সারাক্ষণের সঙ্গী ঝামরঝুমুর লোমওয়ালাটির জায়গায় এদের কেউ এলে কেমন হয়? সকাল বেলায় পায়ে কুড়কুড়ি দিয়ে ঘুম থেকে তুলবে, খিদে পেলেই দিব্যি খলবল করে মায়ের পায়ে পায়ে ঘুরবে, অন্যায় করলে ফণা নামিয়ে বকুনি শুনবে, পড়তে বসলে পাশে বসে খুনসুটি করবে।
শিউরে উঠলে নাকি? ঘেন্নাও হল, না? কেমন যেন কিলবিলে চলার ভঙ্গি, আঁশে ঢাকা শরীরটা। বনেবাদাড়ে, ইটের খাঁজে এক বার দেখা মিলল তো ব্যস। স্ট্যাচু। ওরা নাকি হিপনোটিজমও জানে। সেরা ম্যাজিশিয়ান ওরা। সেকেন্ডে ভ্যানিশ হতে পারে। ক্যামোফ্ল্যাজ-এর বিদ্যেও আছে। রঙে রং মিলিয়ে মিশে থাকে মাটিতে, গাছের ডালে, জলের মধ্যে অভিজ্ঞ চোখও ধাঁধায় পড়ে যায়। ওদের বিষেই মানুষ মরে, আবার সেই বিষ থেকে তৈরি ওষুধই মানুষের প্রাণ বাঁচায়। ওদের কেউ ঘরে ঢোকায় নাকি? ও সব ‘বাবুরাম’-রা পারে। আর আমাদের হাতে তো আছেই শাবল, কোদাল, অন্তত একটা লাঠি। যত ক্ষণ না ভয়ঙ্করটাকে নিকেশ করা যাচ্ছে, ততক্ষণ বুক ধুকপুক। এই বুঝি দিলে বিষের থলি উপুড় করে। নির্ঘাৎ মৃত্যু।
কিন্তু মজার কথা কী জানো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে যে সব সাপ কামড়ায়, তাদের বিষ থাকে না। আর যাদের বিষ থাকে, তারা একটু কিপটে গোছের হয়। সচরাচর নিজের বিষ খরচ করতে চায় না। করবেই বা কেন? বিষ তৈরি করতে তাদের ঢের কষ্ট করতে হয়। এরা কামড়ানোর সময় অল্প একটু বিষ ঢালে। তাই ঠিক সময় চিকিৎসা করতে পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ বেঁচে যায়। এ কথা আগে জানতে কি? এমন আরও কিছু মজার তথ্য তোমাদের মগজের নলেজ বুক-এ এই বেলা পুরে ফেলতে চাও নাকি?
ছোটে না সে হাঁটে না এরা লাফায়। পাঁজরের হাড় বিস্তৃত করে হাওয়ায় ভেসে প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত লাফিয়ে চলে। অনেকটা প্যারাশুটের কায়দায়। এতে নাকি মাটিতে চলার তুলনায় এদের এনার্জি বাঁচে অনেকটা। এরা কালনাগিনী। আগে মনে করা হত এদের নাকি ভয়ঙ্কর বিষ। একদমই নয়। কী অহেতুক বদনাম দেওয়া বলো তো!

দুই মুখ?

দু’মুখো সাপ। বালি বোড়ার আর এক নাম। ভুল। দু’টি নয়, একটিই মুখ এদের। তবে এদের লেজের অংশটা ভোঁতা আর গড়ন অনেকটা মাথারই মতো। তাই মনে হয় দু’টি মুখ। তার ওপর এমনই বোকা এরা, ভয় পেলেই মাথার সঙ্গে লেজটাকেও খাড়া করে ফেলে। দেখে মনে হয় দু’মুখে চেয়ে আছে। বেশ হয়েছে। ভুল নাম নিয়ে বসে থাক। তবে এ সাপ পুষে দেখতে পারো। খুব শান্ত আর বাধ্য সাপ এরা।

জল চিবোয়?
জিভখানি তো চেরা। তাই জলটুকুও চিবিয়ে আর ধীরে ধীরে খেতে হয় এদের। ধীরে কেন? বাঁ দিকের ফুসফুস নেই যে! তাই জোরে জোরে শ্বাসপ্রশ্বাসও নিতে পারে না। এখনও কি অত ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে এদের?

ডিমখেকো
পাখি বা অন্য সাপেদের ডিম নাগালে পেলে এদের মহা আনন্দ। গপ করে পুরো ডিমটিকে মুখে ঢুকিয়ে ফেলে। গিলে ফেলে না কিন্তু। খোলাটি ভেঙে পুরো কুসুমটিকে খেয়ে তার পর খোলাটি বাইরে ফেলে দেয়। আর তোমরা দু’হাত দিয়েও মাছের কাঁটা বেছে উঠতে পারো না!

সাপখেকো সাপ
শঙ্খচূড়। এমনই হ্যাংলা এরা যে, নিজের প্রজাতিকেও ছাড়ে না। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ওফিয়োফ্যাগাস, মানে সাপখেকো। মাঝেমধ্যে গোসাপও খেয়ে ফেলে এরা। পৃথিবীতে একমাত্র এই সাপই বাসা বাঁধে। শুকনো পাতা দিয়ে একটা ঢিবি মতো তৈরি করে তাতে ডিম পাড়ে। দুঁদে আর্কিটেক্ট। এমন ভাবে মাটিতে বাসা বাঁধে, যাতে বৃষ্টির জল ডিমে না লাগে। কিন্তু অত কষ্ট করলে কী হবে। ডিম ফোটার আগেই মায়েরা বাসা ছেড়ে যায়। নয়তো বাচ্চাদেরই খেয়ে খেলবে যে! স্বভাব।

হিপনোটিজম?

চোখে চোখ পড়লেই নাকি শিকারের হাত-পা অবশ। সম্মোহনী বিদ্যে? উঁহু। সাপের পলক পড়ে না। মণি স্থির, ঘোরে না। মনে হয় এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সাপেরা কিন্তু বেজায় ভিতু। অহেতুক ঝুটঝামেলা মোটেই পছন্দ করে না। তাই লুকিয়ে থাকে। আসলে সাপ তো আর সাধারণ মানুষ পোষে না। তাই অন্য পোষ্যদের ক্ষেত্রে যেমন নড়াচড়া দেখেই আমরা চট করে আন্দাজ করতে পারি সে কী চায়, সাপের ক্ষেত্রে তা হয় না। এদের হাবভাব অনেকটাই অজানা। আর কে না জানে, যে জিনিস যত কমচেনা, তাতে ভয় তত বেশি। তার ওপর তো আছেই রাজ্যের কুসংস্কার। ফল কী হচ্ছে? এরা গায়েব হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। আমরা জানতেও পারছি না। ঠিক আর পাঁচটা ভয়ঙ্কর সুন্দর বন্যপ্রাণীদের মতোই এক দিন এদেরও আর দেখা পাওয়া যাবে না। চার দিকে থাকবে খালি কাঁড়ি কাঁড়ি মানুষ। আর মানুষ দেখে বোর হয়ে গেলে? চিড়িয়াখানার সামনে লাইন দিয়ো তখন।

তথ্য: সাপ, কৌশিক। নেচারিজ্ম


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.