অনুমোদন নেই, হাসপাতালে তবু ভর্তি ৬০ মানসিক রোগী
হাসপাতালে চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই বলে লাইসেন্স বাতিল হয়েছে বহু দিন। মিলছে না সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, নেই সরকারি বা বেসরকারি নজরদারির কোনও ব্যবস্থা। অথচ মানকুন্ডুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬০জন রোগী। গত দশ বছর তাঁদের দেখাশোনা করছেন হাসপাতালেরই প্রাক্তন কর্মীরা। গুড়াপের হোমে গুড়িয়ার অপমৃত্যু, বাঘাযতীনের একটি হোমে অপুষ্টিতে এক শিশুর মৃত্যু, এমন সব ভয়ানক ঘটনার পরেও মানকুন্ডুর মানসিক রোগীদের দিকে নজর পড়েনি কারও।
৪১ জন পুরুষ ও ১৫ জন মহিলা রোগীর নিরাপত্তা ও সুচিকিৎসার প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে, হাসপাতালটির অস্তিত্ব নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল কর্মীদের অভিযোগ, এলাকার কিছু প্রোমোটার হাসপাতাল জবরদখল করতে চাইছেন। মানকুন্ডু স্টেশন লাগোয়া অন্তত সাড়ে ২২ বিঘা জমিতে এই হাসপাতাল। দু’টি পুকুর সমেত বড় আম বাগান রয়েছে হাসপাতালে। সরকার হাত গুটিয়ে নেওয়ায় ঝোপ বুঝে কোপ মারতে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়মিত হুমকি দিচ্ছেন, অভিযোগ করেন হাসপাতালের কর্মীরা।
স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত হয় এই হাসপাতালটি। পরে চন্দননগরের মহকুমাশাসককে হাসপাতালের প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। রাজ্য তখন ৪০টি বেডের জন্য অনুদান দিত হাসপাতালকে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তা বেড়ে ৬০টি বেডের জন্য অনুদান হয়। বেড-প্রতি বরাদ্দ বছরে সাত হাজার টাকা এবং বিশেষ আর্থিক সহায়তা এক লক্ষ টাকা।
ওই হাসপাতালে রাজ্য সরকারের ৬০টি ছাড়াও কলকাতা কর্পোরেশনের ২০টি বেড ছিল। এছাড়া হুগলি জেলা পরিষদ, রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ও জেলার চারটি পুরসভার মোট ১৮ টি বেড ছিল। এক সময় মোট ১৮০ বেডের হাসপাতাল ছিল মানকুন্ডু। সেখানে মোট ৭০ জন কর্মচারি কাজ করতেন। কিন্তু পরিকাঠামোয় গলদের জন্য ২০০২ সালে বামফ্রন্ট সরকার হাসপাতাল থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। সেই সময়ে সরকার যে পরিদর্শক দল পাঠিয়েছিল হাসপাতালে, তার অন্যতম সদস্য রত্নাবলী রায় জানান, “আমরা দেখি, কেবলমাত্র একটা ইট-কাঠের বাড়ি, একজনই অত্যন্ত বৃদ্ধ ডাক্তার। কর্মীরা মূলত গ্রুপ ডি স্টাফ, কোনও নার্সও আমাদের চোখে পড়েনি।” স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলোন, “২০০২ সালে সরকার হাসপাতাল বন্ধ করতে বলে আদালতের একটি নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে।”
সরকার হাত গুটিয়ে নিলেও হাসপাতাল বন্ধ হয়নি। রোগীর পরিবার-পরিজন রোগীদের বাড়িতে নিয়ে যাননি, বরং হাসপাতাল কর্মীদের তাঁরাই নিয়মিত কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে যান বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। হাসপাতালের প্রবীণ কর্মী মিলন রক্ষিতের অভিযোগ, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও কর্মচারীরা পাননি। রাজ্য সরকার হাত গুটিয়ে নেওয়ার ফলে ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত কর্মীরা পিএফ-এ জমানো টাকা পাননি। অনেকেই মারা গিয়েছেন। তাঁদের পরিবারও সেই টাকা পায়নি।
কর্মীদের দাবি, রাজ্য সরকারই হাসপাতালটির পরিকাঠামো উন্নয়ন করে আবার তা চালানোর ব্যবস্থা করুক। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেন, “হাসপাতালটি রাজ্যের তরফে অধিগ্রহণের সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।” তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতালটির পরিবেশ ভাল। তবে পরিকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। হাসপাতালটি এখন যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁরা চাইলে বেসরকারি কোনও উদ্যোগে সেখানকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে লাইসেন্স রিনিউ করাতে পারেন।”
হাসপাতালের কর্মচারীরা রাজ্য সরকারের কাছে হাসপাতালের হাল ফেরানোর আবেদন করেছেন। তার পরিপ্রক্ষিতে ভদ্রেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি দেখতে। কিন্তু এখনও সরকারি স্তরে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এই বিষয়ে হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আবিদ হোসেন হলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি নির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাব দেন প্রশাসন ভেবে দেখবে।”
রাজ্যে মানসিক রোগের চিকিৎসার সুযোগ যেখানে নেহাত সীমিত, সেখানে এমন একটি হাসপাতাল থেকে সরকার হাত গুটিয়ে নেওয়া ঠিক নয়, বলেন রত্নাবলী রায়। তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতালের বিধিব্যবস্থার পরিদর্শন করে, কর্মী ও পরিষেবার যথাযথ ব্যবস্থা করে এটিকে অবশ্যই চালু করা উচিত। এই ধরনের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানে পরিষেবার মান উন্নত করার সুযোগ বেশি। রোগীদের স্বার্থেই হাসপাতালটির নবজন্ম প্রয়োজন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.