|
|
|
|
বিধবা ভাতা বৃদ্ধি থেকে পদোন্নতি, ভোটের মুখে সুবিধা ঘোষণায় প্রশ্ন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই এক গুচ্ছ সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। ভোটের মুখে এই সুবিধা পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন পঞ্চায়েতকর্মী এবং বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলি। এমনিতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছে সরকারের। তার মধ্যে সরকারের এই সুবিধা ঘোষণা কতটা আইনসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এটা কোনও অনৈতিক কাজ নয়। কারণ, নির্বাচন কমিশন এখনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।”
রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে ভোটারদের মন পেতেই বৃহস্পতিবার বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলির জন্য এক গুচ্ছ সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে পঞ্চায়েত দফতর। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধীদের ভাতা ও বিধবা ভাতা বৃদ্ধি। একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে প্রদেয় ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে একই সঙ্গে। ৪০ বছরের বেশি বয়সের যে-সব স্বামী-হারা মহিলা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস (বিপিএল) করেন, তাঁদের ৪০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দিত সরকার। সেই ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে চলতি মাস থেকেই। একই ভাবে বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের ১৮ বছর থেকে ৭৯ বছর বয়সি প্রতিবন্ধীদের ভাতাও ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে। ৮০ বছর এবং তার বেশি বয়সের প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এই সাহায্যের পরিমাণ ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা। এত দিন পর্যন্ত বিপিএল পরিবারে ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সি প্রধান উপার্জনকারীর মৃত্যু হলে এককালীন ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিত রাজ্য সরকার। সেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
পঞ্চায়েতের ভোটারদের একাংশের জন্য এমন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চায়েত-কর্মীদের পদোন্নতিরও নতুন রথ করে দিচ্ছে সরকার। পঞ্চায়েতমন্ত্রী মহাকরণে জানান, ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতিতে একটি করে নতুন অ্যাকাউন্ট্যান্ট-পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পদ পঞ্চায়েত সমিতির উপসচিব এবং ক্যাশিয়ার-কাম স্টোর কিপার থেকে পূরণ করা হবে। তিন স্তরের পঞ্চায়েতকর্মীদের মধ্যে যাঁদের দৃষ্টি ও অস্থিজনিত প্রতিবন্ধকতা আছে, তাঁদের সরকারি হারে যাতায়াত ভাতা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মন্ত্রী। পঞ্চায়েত দফতরের মহিলা কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে।
সুব্রতবাবু জানান, গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কদের মধ্য থেকে জেলা পরিষদের সহকারী বাস্তুকারের ২০ শতাংশ পদ পূরণ করা হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক-পদে প্রোমোশনের ক্ষেত্রে সচিব এবং কর্মী সহায়কদের পদ থেকে সংরক্ষণের হার ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ব্লক ইনফর্মেটিক্স অফিসারের পদ থেকে জেলা পরিষদের সিস্টেম ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতির সুযোগও সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্লক ইনফর্মেটিক্স অফিসার পদের ৫০ শতাংশ ডেটা-এন্ট্রি অপারেটরদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। জেলা পরিষদে সিনিয়র স্টেনোগ্রাফারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্টেনোগ্রাফার থেকে ওই পদে প্রোমোশন মিলবে। জেলা পরিষদে যাঁরা সহকারী বাস্তুকার, নির্বাহী বাস্তুকার বা জেলা বাস্তুকার হিসেবে ২৫ বছর চাকরি করছেন, তাঁদের উন্নীত করা হবে জেলা অধীক্ষক বাস্তুকার পদে। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর দাবি, “একশো দিনের কাজে আমরা রেকর্ড করেছি। এর মধ্যেই আমরা ১৮ কোটি ৯৬৯ শ্রমদিবস তৈরি করেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ কোটি ৩০০ শ্রমদিবস। আমরা তা ছাপিয়ে গিয়েছি।” মার্চ শেষ হলে এই শ্রমদিবসের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। এই শ্রমদিবস তৈরির ফলে সরকারের চার হাজার কোটি ৫৮ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এটাও সর্বকালীন রেকর্ড বলে সুব্রতবাবুর দাবি। |
|
|
|
|
|