নকশি কাঁথায় বুক বেঁধেছে সীমান্ত
তাঁর হাতে বোনা কার্পেটটা দেখে সরকারি আমলাদের উচ্ছ্বাস দেখে কিছুটা জড়োসড়োই হয়ে ছিলেন মহিলা। কে জানে বাবা, সত্যি করে বলছে তো!
তবে সন্দেহটা মুছে গিয়েছিল দিন কয়েকের মধ্যেই। যখন জেলা সদর থেকে ডোমকলের অজ গাঁয়ে উড়ে এসেছিল কার্পেটের ‘অর্ডার’। মর্জিনা বিবি এখনও মনে করেন, “আমলাদের পছন্দ হওয়ায় বরাত খুলে গিয়েছিল।”
বছর কয়েক আগেও ডোমকলের ওই গ্রামে নকশিকাঁথা বা খেজুর পাতার শীতলপাটি বুনে তেল-নুনের সংস্থান করতেন সয়ম্ভর গোষ্ঠীর রোকেয়া, মর্জিনা, মানজুরা বিবিরা। বাজার না থাকায় গ্রামেই জলের দরে বিক্রি করতে হত সে সব নিখাদ হাতে গড়া পণ্য। এখন সেই সব কার্পেট, শীতলপাটিই পাড়ি দিচ্ছে জেলা ছেড়ে বড় শহরের শো-রুমে।
এক সময়ে বাড়ির দাওয়ায় বসে কাজ করতেন তাঁরা। জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের সাহায্যে এখন অবশ্য শেডের তলায় বসে এক সঙ্গে ৫০ জন মহিলা পাট দিয়ে তৈরি করছেন ওই কার্পেট। মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারি বলেন, “এখানকার মহিলারাও যে চোখ জুড়ানো কার্পেট তৈরি করেন তা না দেখলে বিশ্বাস হত না। যাঁরা একটা সময় কার্পেটের দড়ি তৈরি করে উপার্জন করেছে তাঁরাই এখন কার্পেট বুনছেন।”
ব্যস্ত শিল্পী। নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ইতিমধ্যে ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়েছে ওই সংঘকে। সেই অর্থেই তৈরি হয়েছে অফিস, শেড। কেনা হয়েছে কার্পেট তৈরির সরঞ্জাম। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোটি টাকার ওই প্রকল্পের জন্য রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে মোট ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ওই গোষ্ঠীর পথ চলা শুরু ২০০৮ সালে। ‘দেশ অর্থনৈতিক সংঘ’ নামের ওই গোষ্ঠীর সদস্যারা শুরুতে পাট থেকে দড়ি তৈরির কাজ করলেও জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের সহায়তায় উত্তর দিনাজপুরে গিয়ে কার্পেট তৈরির প্রশিক্ষণ নেন।
তবে প্রশিক্ষণ নিতে পাড়ি দেওয়ার সময়ে তাঁদের শুনতে হয়েছিল, হাজারো গঞ্জনা। মর্জিনা বিবি বলেন, “২০০৯ সালে কার্পেট তৈরির প্রথম প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার সময় গ্রামের অনেকেই বলেছিল, মেয়েগুলো নষ্ট হয়ে গেল। এমনকি আমরা নারীপাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছি বলেও রব উঠেছিল। একটা সময় ঘাবড়ে গিয়ে আমাদের বাড়ির লোকেরাও বলেছিল, ও সব ছেড়ে দিতে।” সময়ের সঙ্গে বদলেছে বাড়ির মানুষটাও (স্বামী)। মাইল তিনেক দূরের গ্রাম সারাংপুর থেকে সাইকেলের পিছনের ফেরি সরিয়ে রেখে ফেরিওয়ালা সাইফুল তাঁর স্ত্রী রোকেয়াকে নিয়ে প্রতিদিন হাজির হন ডোমকল কালীতলার সংঘের অফিসে। রোকেরায় কথায়, “একটা সময় যে মানুষটা বলত, ‘এসব করে কি হবে? তোমার কি দু’ বেলা নুনভাত জুটছে না?’ সেই মানুষটাই কিনা এখন সকাল ৯টা হলে সাইকেলে তুলে সংঘের অফিসে পৌঁছে দিয়ে তবেই ফেরি করতে বের হয়।”
কার্পেটের দড়ি তৈরি করে মাসে মাত্র কয়েকশো টাকা উপার্জন হত। সেই দড়ি কিনে নিতেন ব্যবসায়ী অতীশচন্দ্র সিংহ। তিনি বলেন, “মেয়েদের কাছ থেকে দড়ি কিনে আমি কার্পেট তৈরির কারখানায় সরবরাহ করতাম। একটা সময় মনে হল, ওই মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিলে তাঁরা নিজেরাই কার্পেট তৈরি করতে পারবে। বিষয়টি জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের নজরে এনে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আবেদন করি।” অতীশবাবুর আশা, মহিলারা যে ভাবে কাজ করছেন তাতে মাসে হাজার তিন-চার টাকা উপার্জন করা কঠিন নয়। ডোমকল ব্লকের নারী উন্নয়ন আধিকারিক সুদীপা দাস বলেন, “এখানে ওই মহিলারা অফিসের মতো ১০টা থেকে ৫-টা পর্যন্ত কাজ করেন। ওঁদের তৈরি কার্পেট দেখে আমারা সবাই মুগ্ধ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.