ক্রিকেটের ‘ব্যাড বয়ের’ খুলি ফাটিয়ে দিল দুষ্কৃতীদের লাথি-ঘুসি |
অনেকেই তাঁকে চেনেন একটা বিশেষ নামে ‘ব্যাড বয় অব ক্রিকেট’। সেই ‘ব্যাড বয়ের’ ব্যাট একবার ঝড় তুলতে শুরু করলে বাইশ গজে রংমশালের রোশনাই দেখা যেত। কিন্তু তাঁর ক্রিকেট বৃত্তের বাইরের জীবনটা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল এক অশুভ অন্ধকারে। ২৮ বছর বয়সেই যে অন্ধকারের শিকার হতে হল জেসি ড্যানিয়েল রাইডারকে। বুধবার গভীর রাতে ক্রাইস্টচার্চের কাছে এক পানশালার বাইরে মারপিট করে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন নিউজিল্যান্ডের এই ক্রিকেটার। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোমায় চলে গিয়েছেন রাইডার। তাঁর মাথায় এবং ফুসফুসে মারাত্মক চোট। মাথার খুলি পর্যন্ত ফেটে গিয়েছে। গোটা ঘটনায় ভেঙে পড়েছে ক্রিকেটমহল। ইয়ান বোথাম থেকে মাইকেল ভন। ক্রিস গেইল থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নিউজিল্যান্ডে তাঁর সতীর্থ থেকে শুরু করে আইপিএলে রাইডারের টিম দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। সবার প্রতিক্রিয়ায় ফুটে উঠছে একটাই আর্তি ‘ঈশ্বর, জেসি যেন সুস্থ হয়ে ওঠে।’ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি এই ঘটনার পর বলেছেন, “সব শুনে মনে হচ্ছে কোনও রকম উস্কানি ছাড়াই রাইডারকে আক্রমণ করা হয়েছিল। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ থাকতেই পারে। আমি নিশ্চিত, পুলিশ তদন্তের শেষ দেখে ছাড়বে।”
কী হয়েছিল ওই অভিশপ্ত রাতে? পুলিশের বক্তব্য এবং প্রচারমাধ্যমের সামনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান মিলে যে ছবিটা ফুটে উঠছে, তা এ রকম:ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডস টিমের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে ক্রাইস্টচার্চে এসেছিলেন রাইডার। সতীর্থদের সঙ্গে স্থানীয় একটি পানশালায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে রাইডার মদ্যপান করেছিলেন কি না, তা জানা যায়নি। এর পর পানশালা থেকে বেরিয়ে পাশের ম্যাকডোনাল্ডসের দিকে যখন যাচ্ছিলেন, তখনই তাঁকে আক্রমণ করা হয়। অ্যাডাম নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের বলেছেন, “রাইডার যখন রাস্তা পার হয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছিল তখনই ওর উপর জনা চারেক লোক হামলা চালায়। বীভৎস ভাবে ওকে মারা হচ্ছিল। জামা ছিড়ে দেওয়া হয়। মাটিতে পড়ে থাকা রাইডারকে মাথায়-বুকে একের পর এক লাথি-ঘুসি মারার আওয়াজ পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিল।”ম্যাকডোনাল্ডসের সামনে কার পার্কে একটা ঝোপের মধ্যে পাওয়া যায় রক্তাক্ত রাইডারকে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ক্রাইস্টচার্চ পুলিশের ডিটেকটিভ সার্জেন্ট ব্রায়ান আর্চার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সতীর্থদের সঙ্গে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ‘আইকম্যান’স বার’-এ ছিলেন রাইডার। বার থেকে বেরনোর পর অন্তত দু’জন লোকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর পরই তাঁকে আক্রমণ করা হয়। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশকর্তার কথায়, “অন্তত দশ জন লোক পুরো ঘটনার সাক্ষী। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি।” |
এর আগে মদ্যপান জড়িত অভিশাপ বারবার তাড়া করেছে রাইডারকে। তাঁর খুব ছোটবেলায় বাবা-মা-র মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। যখন চোদ্দো বছর বয়স, তাঁর বাবা রাইডারকে একা রেখে দেশ ছেড়ে চলে যান। কৈশোরটা যাযাবরের মতো ঘুরে-ঘুরেই কেটে যায় রাইডারের। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্রিকেট প্রতিভা চাপা থাকেনি। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব শুরু। সিনিয়র পর্যায়ে ১৮টি টেস্ট খেলেছেন। ভারতের বিরুদ্ধে একটা ডাবল-সহ তিনটি সেঞ্চুরিও আছে। কিন্তু যখনই ক্রিকেট মাঠে কায়েম হয়ে বসতে গিয়েছেন, বিতর্ক থাবা বসিয়েছে তাঁর জীবনে। একাধিক বার।
বছর পাঁচেক আগে ক্রাইস্টচার্চেরই এক পানশালায় রাত দেড়টা পর্যন্ত মদ খেয়ে বাথরুমের দরজা ভেঙে হাতে চোট পান রাইডার। পরের দিনই ছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের পঞ্চম এক দিনের ম্যাচ। ২০০৯-এক জানুয়ারিতে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচের পর এতটাই মদ্যপান করেন তিনি যে, টিম মিটিংয়ে আসতে পারেননি। প্র্যাক্টিসেও নয়। পরের ম্যাচেই তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজারের সঙ্গে তীব্র কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন এই বিতর্কিত ব্যাটসম্যান। গত মাচের্র্ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাময়িক ভাবে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাইডার। গত বছর আইপিএলে খেলেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুণে ওয়ারিয়র্সের হয়ে। এ বছরের আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে খেলার কথা ছিল এই বাঁ হাতি ওপেনারের।
কিন্তু তাঁর অন্ধকার অতীত আরও একবার থাবা বসিয়ে গেল জেসি ড্যানিয়েল রাইডারের জীবনে। আরও ভয়ঙ্কর ভাবে। যার ধাক্কায় তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর আশা-আশঙ্কায়! |