|
|
|
|
ভোটের পরে ভাবনা |
স্মৃতি অ-সুখের, তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে উদাসীন সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নিজেদের শক্তি নেই। তাই তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে উদাসীন থাকা ছাড়া সিপিএমের আপাতত উপায় নেই।
লোকসভা নির্বাচনের এক বছর আগে থেকে তৃতীয় ফ্রন্টের জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মুলায়ম সিংহ যাদব ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে মাথা না ঘামানোরই কৌশল নিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে এই সিপিএম নেতৃত্বই মায়াবতীকে সামনে রেখে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিএ-সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ে কংগ্রেসকে ধাক্কা দেওয়ার একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। কিন্তু সেই চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ে। পরে দলীয় পর্যলোচনাতেও স্বীকার করা হয়, সেই পদক্ষেপ ভুল ছিল। সে কথা মাথায় রেখেই কি সিপিএমের এই বৈরাগ্য?
দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য বলছেন, “শুধু ক্ষমতা ভোগের জন্য একটা ফ্রন্ট তৈরি আসলে রাজনৈতিক সুবিধাবাদ। অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির উচিত এ সব থেকে সরে আসা।” সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, তৃতীয় ফ্রন্ট তৈরি করতে গেলে দলের নিজস্ব শক্তি থাকা প্রয়োজন। এমনিতেই ২০০৯ সালের আগে দলের শক্তি যা ছিল, তা সে সাংসদের সংখ্যার ভিত্তিতেই হোক বা সাংগঠনিক শক্তির ভিত্তিতে, এখন সিপিএম সেই অবস্থায় নেই। সবথেকে বড় কথা, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল, দুই বাম দুর্গেই দল ক্ষমতার বাইরে। পশ্চিমবঙ্গে দলীয় সংগঠনের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই বেহাল দশা নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট করতে গেলে সেখানে বামেদের মতামত গুরুত্ব পাবে না। আঞ্চলিক দলগুলিই ছড়ি ঘোরাবে। ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, “বিকল্প ফ্রন্ট গড়লেই হবে না। প্রয়োজন বিকল্প নীতির। তা হলেই সাধারণ মানুষের সুরাহা মিলবে।”
দলের অন্দরমহলে প্রকাশ কারাট জানিয়েছেন, এ বারের লোকসভা ভোটের আগে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা কম। সিপিএম অবশ্যই চাইবে, বাম-সহ অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলি ভোটে ভাল ফল করুক। সংসদে এই দলগুলির শক্তি বৃদ্ধি হোক। কিন্তু ভোটের আগে তৃতীয় ফ্রন্ট খাড়া করে বিকল্প নীতির সরকার গঠনের কথা না ভাবাই ভাল।
ইতিহাস বলছে, সেই ১৯৯৬ সাল থেকেই সিপিএম বারবার তৃতীয় ফ্রন্ট সরকার গঠনের চেষ্টা করে এসেছে। বামেরাই মূলত সেই ফ্রন্ট তৈরিতে অনুঘটকের কাজ করেছে। ইয়েচুরির দাবি, ভারতের রাজনীতিতে আর কংগ্রেস বা বিজেপির পক্ষে একার ক্ষমতায় সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। ২০১৪ সালের পরেও সেই জোট সরকারই ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু কোন জোট? ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, কংগ্রেস বা বিজেপি দু’দলই চায়, তাদের নেতৃত্বাধীন জোট হোক। কিন্তু কংগ্রেস অন্ধ্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলিতে শক্তি হারাচ্ছে। যে সব রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আছে, সেখানে কংগ্রেসের শক্তি বাড়ছে না। আবার বিজেপিকে জোটের গণ্ডি বাড়াতে হলে আরএসএস-এর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ছাড়তে হবে। কিন্তু তা ছাড়লে বিজেপির নিজেদের ভোট কমবে।
তা-ই যদি হয়, সিপিএম বিকল্প জোট তৈরির চেষ্টা করবে না কেন? জবাবে কারাট বলেছেন, শুধু কয়েকটি দল ও তার নেতারা একজোট হলেই হবে না। ন্যূনতম কিছু কর্মসূচি বা নীতি দরকার, যেখানে সকলে একমত হবে। সেটা ছিল না বলেই অতীতে তৃতীয় ফ্রন্টের অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। তা হলে কি ২০১৪-র পরে সেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে বাইরে থেকে সমর্থন দেবে সিপিএম? দলীয় নেতাদের বক্তব্য, আগে সিপিএম-সহ বামেরা কত আসনে জেতে, তা দেখা দরকার। পরে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা। আর অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে সরকার গড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সিপিএমের ভূমিকা কী হবে, তা-ও ভোটের পরই খতিয়ে দেখা হবে। |
|
|
|
|
|