বেহাল রাস্তা থেকে নিকাশি, ক্ষোভ পঞ্চায়েতের ভূমিকায় |
বিপ্লব ভট্টাচার্য • বুদবুদ |
রাস্তার হাল বেশ খারাপ। জলের ব্যবস্থা আশানুরূপ নয়। একশো দিনের কাজ মিলছে না প্রায় বছরখানেক ধরে। নিকাশি ব্যবস্থাও ভাল নয়। এমনই সব অভিযোগ গলসি ১ ব্লকের মানকর পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের। তাঁদের ক্ষোভ, পঞ্চায়েতের কাছে কোনও পরিষেবাই ঠিক মতো পাওয়া যায়নি। এলাকার উন্নয়নে কোনও কাজ হয়নি অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরাও।
মানকর, মাড়োগ্রাম ও নতুনগ্রাম নিয়ে গঠিত এই মানকর পঞ্চায়েত। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত এক বছর ধরে একশো দিন প্রকল্পে ন্যূনতম কাজও তাঁরা পাননি। যখন আশপাশের পঞ্চায়েতগুলিতে একশো দিনের কাজ ঠিক মতো চলছে, সিপিএম পরিচালিত এই পঞ্চায়েত কাজ দিতে পারছে না। বারবার প্রধানকে চিঠি দিলেও ফল হয়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের। |
খাতায়-কলমে সংস্কার হয়েছে এই নর্দমা, দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই। |
তৃণমূলের নেতৃত্বে গত ১২ মার্চ পঞ্চায়েত অফিসে তালা লাগিয়ে দেন কিছু বাসিন্দা। তাঁদের দাবি, একশো দিনের কাজ দ্রুত চালু করতে হবে। এ বিষয়ে তাঁরা বিডিও-র হস্তক্ষেপ চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পানীয় জলের সমস্যাও আছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। মানকরের তৃণমূল নেতা মন্টু মাইতি বলেন, “প্রতি গ্রীষ্মে গ্রামে পানীয় জলের আকাল দেখা দেয়। নলকূপগুলিতে ভাল জল ওঠে না। তাই পঞ্চায়েত যদি অন্য কোনও ভাবে পানীয় জলের ব্যবস্থা করত তাহলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হতো।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, গ্রামের বেশির ভাগ রাস্তার অবস্থাই খারাপ।
এই সমস্যা শুধু যে মানকরের নয়। মাড়োগ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানেও রাস্তা হাল খারাপ। বর্ষায় গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা যায় না। রাস্তার দু’পাশে কোনও পাকা নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় নর্দমার জল উপচে পড়ে রাস্তায়। এই অবস্থায় গ্রামে মশা, মাছির উপদ্রব বেড়েছে বলে তাঁদের দাবি। গ্রামের তৃণমূল নেতা বাপ্পাদিত্য রায় জানান, পাকা রাস্তা তৈরির জন্য তাঁরা পঞ্চায়েতকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। পাকা নিকাশির জন্য বারবার আবেদন করা হয়েছে। গ্রামে যেটুকু পাকা নিকাশি আছে তা পরিকাঠামোগত ত্রুটির কারণে ঠিক ভাবে জল পেরোতে পারে না। |
জমা জল দুর্ভোগ বাড়ায় বাসিন্দাদের। মানকর পঞ্চায়েতের নতুনগ্রামে বিকাশ মশানের তোলা ছবি। |
তৃণমূল নেতৃত্বের আরও অভিযোগ, গ্রামের সব থেকে বড় সমস্যা একশো দিনের কাজ না হওয়া। গত আট মাস ধরে এই গ্রামে একশো দিনের কাজ বন্ধ আছে। ফলে বিপাকে পড়ছেন গরিব মানুষজন। বাপ্পাদিত্যবাবুর কথায়, “আমরা বারবার বিডিও এবং পঞ্চায়েতের কাছে একশো দিনের কাজ চালুর জন্য বলেছি। কিন্তু লাভ হয়নি।”
একই রকম পরিস্থিতি নতুনগ্রামেও। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, তাঁদের গ্রামেও পাকা নিকাশি নেই। কাঁচা নর্দমার জল যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে। বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না অনেকেই। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, প্রায় দু’বছর আগে সজলধারার প্রকল্পে জলের ব্যবস্থা করার জন্য দু’শো টাকা করে দিয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু এখনও সেই ব্যবস্থা হয়নি। কেন হয়নি, তা এলাকাবাসীর জানা নেই। গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত খান, কাদের খানরা বলেন, “নিকাশির হাল খারাপ। একটু বৃষ্টি হলেই বাড়িতে জল ঢুকে যায়।”
পঞ্চায়েত প্রধান সুরজিৎ বাউরির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়শ্রী বিষ্ণু জানান, ওই পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে তিনি সবিস্তার খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। পানীয় জলের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শীঘ্র জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইনের কাজ শুরু হবে। বুদবুদ ও মানকর এলাকায় এই কাজ হবে।” |