চিকিৎসা করালেন পুলিশকর্মীরা
রোগযন্ত্রণায় এটিএম ভাঙার চেষ্টা
কেই বলে ‘শাপে বর’।
যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে চিকিৎসার টাকার জোগাড় করতে শাবল হাতে এটিএম ভাঙতে গিয়েছিলেন বুদবুদের এক যুবক। পুলিশ তাঁকে ধরে দেখে, তখনও পোশাকের নীচে ক্যাথিটার। যন্ত্রণায় শরীর বেঁকে-চুরে যাচ্ছে।
এমন কাণ্ড বর্ধমানের পুলিশ দেখেনি। ব্যাঙ্ক ডাকাতির চেষ্টায় জেল খাটাবে কী, বুদবুদের সুকডাল লোহারপাড়ার বছর একুশের শৈলেন লোহারের অবস্থা দেখে বরং স্তম্ভিত কর্তারা। শৈলেন ততক্ষণে জেলে ঢুকে গিয়েছে। তার
শৈলেন লোহার
জামিনের ব্যবস্থাই শুধু নয়, নিজেরা চাঁদা তুলে দুর্গাপুরের এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারও করান পুলিশকর্মীরা। শৈলেন আপাতত বাড়িতে, পুরোপুরি সেরে ওঠার পথে।
গত ১৭ মার্চ গভীর রাতে ফোন পেয়েছিল বুদবুদ থানার পুলিশ পঞ্চায়েত অফিসের পিছনে এটিএম ভাঙা হচ্ছে। পুলিশ এসে দেখে এক যুবক পরপর শাবলের ঘা মারছে। কিন্তু তখনও এটিএম ভাঙতে পারেনি। তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শৈলেন পালানোর চেষ্টাই করেনি। পারতও না। তার যা রোগ, তাতে কিছুক্ষণ অন্তর এমনিই প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে। সেই বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে অষ্টপ্রহরের সঙ্গী ক্যাথিটার। ছোটবেলা থেকে কোনও চিকিৎসা হয়নি।
হবেই বা কী করে? একটি কাঠের আসবাবের দোকানে সামান্য কাজ করেন শৈলেন। মাসে আয় হাজার টাকার বেশি নয়। বাবা রিকশা চালিয়ে যা রোজগার করেন, তার বেশিটাই চলে যায় মদের পিছনে। মা লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনও রকমে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটান। এলাকার এক গ্রামীণ চিকিৎসককে কয়েক বার দেখানো হয়েছে। ওই পর্যন্তই। “এখন যন্ত্রণা এতটাই বেড়েছে যে তিষ্ঠোতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে ঠিক করি, এটিএম ভাঙব। যদি কিছু টাকা পাই, চিকিৎসা করাব,” পুলিশকে বলেন শৈলেন।
পুলিশ খোঁজ নিতে শুরু করে। খাতা ঘেঁটে দেখে, পুরনো কোনও অপরাধের ইতিহাস আছে কি না। এলাকায় গিয়ে কথা বলে। শেষমেশ বোঝা যায়, শৈলেন মিথ্যে বলছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো কোনও অপরাধের অভিযোগও নেই। সব দিক বিচার করে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা আনে। কিন্তু ১৮ মার্চ দুর্গাপুর এসিজেএম আদালতে তোলা হলে অপরাধের গুরুত্বের কারণে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিনের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ছেলেটি ধরা পড়ার সময়েও যন্ত্রণায় কাঁদছিল। সে যে যন্ত্রণায় পাগল হয়েই এটিএম ভাঙতে গিয়েছিল, তা বুঝতে পেরেই আমরা পরে আইনজীবী মারফত ওঁর জামিনের আবেদন জানাই। ২২ মার্চ জামিন মঞ্জুর হয়।”
ইতিমধ্যে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বুদবুদের পুলিশকর্মীরা চাঁদা দিয়ে ৩৫ হাজার টাকা জড়ো করে ফেলেন। সুপার নিজেও টাকা দেন। ২৩ মার্চ শৈলেনকে ভর্তি করা হয় দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতালে। ২৫ মার্চ অস্ত্রোপচার হয়। পরের দিন বাড়ি ফিরে যায় শৈলেন। হাসপাতালও পুরো টাকা নেয়নি। দশ দিন বাদে ফের চেক-আপে আসতে বলেছে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু বলেন, “এটা আমাদের সামাজিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।” আর মামলা? পুলিশ সুপার জানান, তা নিজের মতোই চলবে। শৈলেন যাতে সুস্থ ভাবে বাকি জীবনটা কাটাতে পারে, তাঁরা শুধু সেটাই চান। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের বাড়িতে বসে শৈলেন বলেন, “পুলিশ যে এমনও হয়, জানতাম না। ওঁদের ঋণ শোধ করতে পারব না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.