জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তিরতির করে বইছে স্বচ্ছ জলের পাহাড়ি ঝোরা। কাছেই বনবস্তি। ছায়াঘেরা ওই মনোরম পরিবেশের টানে অনেকেই সেখানে সপ্তাহান্তে যান একটু জিরিয়ে নিতে। বেড়াতে। অথবা ছোটখাট একটা পিকনিক করতে। তাতে এলাকাটা নোংরা হয়ে যায়। মাঝেমধ্যেই আবর্জনা জমে ডাঁই হয়ে থাকে। সব দেখে এলাকার বনবস্তির বাসিন্দারা নিজেরাই তা সাফসুতরো রাখতে শুরু করেন। সেই সময়ে বন দফতরের তরফে বনবস্তি বাসীদের মৌখিক ভাবে সাফাইয়ের জন্য খরচ জোগাড় করতে সামান্য টাকা আগতদের কাছ থেকে চেয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এখন সেই চেয়েচিন্তে সামান্য টাকা নিয়েই এলাকায় অলিখিত ভাবে ইকো-ট্যুরিজমের সূচনা করেছেন বনবস্তির বাসিন্দারা। ওই এলাকার রেঞ্জ অফিসার টি টি ভুটিয়া বলেন, “জায়গাটা সাফ সুতরো রাখতে বনবস্তির মানুষেরা ভাল কাজ করছেন। সরকারি ভাবে ওঁদের টাকা তুলতে বলা হয়নি। মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়েছেন।”
শিলিগুড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বাগডোগরা থেকে ভিতরে সন্নাসীথান চা বাগান হয়ে জঙ্গলের মধ্যে ওই সেন্ট্রাল বনবস্তি। মোট বাসিন্দা ৫৬ ঘর। তার মধ্যে বেশির ভাগই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এলাকার দু’এক জন বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করে থিতু হলেও আসলে গত ১৫ বছরে তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য এগিয়ে আসেননি কেউ। ফলে নিজেরাই নিজেদের আর্থিক উন্নতিতে এগিয়ে এসেছেন এলাকার বাসিন্দারা। এখন এটাই যেমন তাদের জীবিকাও তেমনি এলাকার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
যেমন বনবস্তি কমিটির সদস্য প্রেম দোরজির কথাই ধরা যাক। তিনি জানান, একটা সময়ে এলাকাটা আবর্জনায় ভরে থাকত। সকলে মিলে সামান্য চাঁদা নিয়ে সাফসুতরো রাখতে ভিড় বাড়ছে। এখন ওই এলাকায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের থেকে মাথা পিছু ১০ টাকা করে সংগ্রহ করা হয়। কারও মোটর বাইক থাকলে তার জন্য আরও ১০ টাকা এবং চার চাকার যান থাকলে তার জন্য ২৫ টাকা।
এর মধ্যে মাথা পিছু ২ টাকা করে যে পাঁচ জন সংগ্রহের কাজ করেন তাঁদের প্রাপ্য। বাকি টাকার মধ্যে অর্ধেক খরচ হয় নিজেদের এলাকার উন্নতির কাজে। কারও বাড়ির টিন বদলাতে হবে, কারও বাড়ির বেড়া। তার কিছুটা খরচ হয় ওই তহবিল থেকে। বাকিটা অবশ্য বাড়ির মালিককে দিতে হয়। এমন করে বাকি তহবিলের খানিকটা খরচ হয় ওই পিকনিক স্পটের বেঞ্চ, টেবিল তৈরি করাতে।
এই ভাবে ইকো-ট্যুরিজম স্পট গড়ার লক্ষ্যে এগোতে চাইছেন বনবস্তির বাসিন্দারা। তবে সরকারি তরফে সে ভাবে কোনও সাহায্য মেলেনি। এমনকী, সঞ্জু শেরপা, নিমু গোলোক-এর মতো বাসিন্দারা এলাকার বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের কাছেও সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন।
তবে শঙ্করবাবু বলেন, “সরকারি এলাকায় এভাবে বিনা অনুমতিতে টাকা তোলা যায় না। সিপিএমের আমলে এ সব সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। ওই টাকা আমজনতার কাজে কতটা লাগে তা নিয়ে সংশয় আছে। আমি বিশদে খোঁজখবর নেব। আইনি প্রক্রিয়ার দিকটি মাথায় রেখে যতটা সহযোগিতা করা যায় করব।” |