|
|
|
|
হুল্লোড় |
অভিনয় ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম
বাংলার জামাই তিনি। ভাষাটা ভাঙা ভাঙা বলতেও পারেন। ‘বরফি’ আর ‘জলি এলএলবি’
করে সৌরভ শুক্ল আবার অভিনয় জগতে স্বমহিমায়। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
একটা সময় তো অভিনয় করাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘বরফি’ আর ‘জলি এলএলবি’ করে একেবারে কেল্লাফতে করে দিলেন...
(হাসি) প্রায় চার বছর আমি অভিনয় করিনি। কোনও চরিত্রই ভাল লাগত না। ক্যামিও করেছিলাম একটা ছবিতে। তার পর ‘বরফি’ করলাম। একটা অদ্ভুত ভাল অভিজ্ঞতা। তার পর ‘জলি এলএলবি’। আজকাল অনেক স্ক্রিপ্ট আসছে। কিছু ভাল, কিছু মন্দ। খারাপ চিত্রনাট্য পড়ার পর আমি একটা ভাল ছবি দেখে নিই। এতেই মন ভাল হয়ে যায়।
‘ব্যান্ডিট কুইন’ থেকে ‘জলি এলএলবি’ পিছনে ফিরে তাকালে কেমন লাগে?
খুব আনন্দ হয়। মনে হয় এই তো সেদিন অভিনয় শুরু করলাম। কিন্তু প্রায় উনিশ বছর কেটে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে।
মনে হয় না আরও বেশি ছবি করা উচিত ছিল?
সেটা তো সবাই চায়। আমি প্রায় আশিটা ছবি করেছি। অনেক অভিনেতা আরও ছবি করেছেন। কিন্তু তার মধ্যে তিনটে বা চারটে মনে রাখার মতো। হয়তো কোটি কোটি টাকা রোজগার করলে বা একটা পেন্ট হাউজ থাকলে মন্দ হত না। তবে আমি অসুখী নই।
নাম্বার দৌড়ে না থাকার প্রেরণাটা পান কোথা থেকে?
জীবনের চাহিদাটা জানা জরুরি। আমি নিজেকে এক জন পর্যটক বলে মনে করি। যশের থেকেও আমার বেশি পছন্দ যশ মানুষকে যে ক্ষমতাটা দেয়, সেটা। আর আমি যদি সেই ক্ষমতাটা এমনিতেই উপভোগ করতে পারি, তা হলে খারাপ কী? লোকে জিজ্ঞেস করে আমি কেন নিজের ইমেজ নিয়ে ভাবি না? আমি বলি, এটাই আমার স্বভাব। এটা নয় যে আমি একটা জিনিস চাই আর মুখে অন্য কিছু বলি। এই চিন্তাধারাই আমার অভিনয়ে ধরা পড়ে।
‘না’ বলতে অসুবিধা হয়নি কখনও?
একটা গল্প বলি তা হলে। ‘সত্য’ তখন সবে হিট করেছে। স্ক্রিপ্টটা আমার লেখা। হিটের পর এক প্রযোজক আমাকে স্ক্রিপ্ট লিখতে বলেন। তাঁর প্রাথমিক বর্ণনাটা শুনে কিছু বুঝিনি। তবে ভাবলাম কী আর এসে যায়। তখনও আমার বাড়ি নেই। বললাম লিখব, তবে আমাকে পনেরো লক্ষ টাকা দিতে হবে। সে সময় সেটা অনেক টাকা। তার পর বললাম, বাড়ি বুক করার জন্য আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। প্রযোজক রাজি। পর দিন লিখতে বসলাম। সারাদিন একটা লাইনও লিখতে পারলাম না। গোটা সপ্তাহটা কেটে গেল এ ভাবে। শেষে প্রযোজককে চেকটা ফেরত দিয়ে বললাম, “মাই পেন ডাজ নট মুভ!” বুঝেছিলাম পনেরো লক্ষ টাকায় আমার চিত্রনাট্যকার সত্তাটা বিক্রি হয় না। |
|
কখনও ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি?
আমার স্ত্রী বর্ণালী, আর বন্ধুদের ধন্যবাদ। এক বার তো এক বড় সেক্রেটারি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে উনি আমার তিনশো পঁয়ষট্টি দিনকে ষোলোশো দিনে পরিণত করবেন। আমাকে দিয়ে দিনে চারটে শিফ্টে কাজ করাতে চেয়েছিলেন তিনি। তার মানে প্রত্যেক দিন আমি চারটে ছবি করব। রাজি হইনি। এটা করলে কোনও ছবিকে ‘না’ করতে পারতাম না। আজও অনুশোচনা নেই। নেই কোনও সেক্রেটারি বা স্টাফ।
রামগোপাল বর্মা বলেছিলেন যে ‘সত্য’ করার সময় যে মালমশলা ছিল ওঁর হাতে, তার তুলনায় অনেক সাধারণ মানের ছবি তৈরি হয়েছিল...
প্রত্যেক অভিনেতা তাঁর আগে-র কাজটাকে বেশি দাম দেন না। অসন্তুষ্টি থেকেই তো ভাল কাজের জন্ম হয়। লোকে আমার অভিনীত কাল্লু মামার চরিত্র নিয়ে প্রশংসা করে। আমি ওটা দেখলে মুখ লুকাই। যখন ‘সত্য’ বানানো হয়, তখনকার পরিস্থিতিতে ওটাই ছিল শ্রেষ্ঠ। তবে এখন বানালে ওটার পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়। আমি আমার পুরনো কাজ কখনও দেখি না।
আমাদের দেশে কি বক্স অফিসে ভাল স্ক্রিপ্টের কদর হয়?
কোথাও কি লেখা আছে যে সত্ হলেই সে পৃথিবীর সব চেয়ে ধনী হবে? ভাল স্ক্রিপ্ট হলেই হয় না। ভাল অভিনেতা, পরিচালক, মার্কেট পুশ এ সবই লাগে। আজকাল অনেক পরীক্ষামূলক কাজ হচ্ছে। যেমন, ‘বরফি’, ‘পান সিংহ তোমর’, ‘ভিকি ডোনার’... পপুলার অ্যাওয়ার্ডেও সেগুলো কদর পাচ্ছে। একটাও গতে বাঁধা বাণিজ্যিক ছবি নয়।
অনেকেই বলছেন যে পরীক্ষামূলক ছবি মানেই ভাল ছবি নয়...
আগেকার দিনে পাঁচ জন পরিচালক ছবি বানাতেন। তার মধ্যে দু’জন প্রতিভাবান আর তিন জন চলনসই। এখন পাঁচশোটা ছবি তৈরি হয়। তার মানে কিন্তু দু’শো জন প্রতিভাবান পরিচালক কাজ করছেন তা নয়। বরং তার মানে হল পাঁচশোর মধ্যে একশো জন ভাল পরিচালক।
পরিচালনা, অভিনয়, চিত্রনাট্য লেখা গুরুত্বের বিচারে কোনটা বেশি পছন্দ?
নিজের কাছে গুরুত্বটা হল পরিচালনা, অভিনয় আর লেখা। কিন্তু বাস্তব জীবনে ক্রমটা লেখা, পরিচালনা আর অভিনয়।
নিজে লেখেন বলে কি অভিনয় করতে গেলে নিজের ইনপুট দেন?
দিই। ‘বরফি’ করার আগে স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে আমি জানতাম না। অনুরাগের (অনুরাগ বসু) কাছে ছবিটা ছিল একটা খোঁজ। আমি সেই খোঁজের সঙ্গী। ‘ব্যান্ডিট কুইন’ও তাই। পরিচালক শেখর কপূর আমাকে দেখে আমার জন্য একটা চরিত্র লেখেন। এই দু’টো ছবিতে কাজ করাটা তাই খুব ইমপালসিভ। ‘জলি এলএলবি’ আলাদা। পরিচালক সুভাষ কপূর নিজে সাংবাদিক ছিল। বাউন্ড স্ক্রিপ্ট দিয়েছিল আমাকে। ও দেশের বিভিন্ন কোর্টের গল্প বলেছিল। সেগুলো আমি চরিত্রে ব্যবহার করেছিলাম। তাই বিচারক ত্রিপাঠী এক জন প্রোটোটাইপ বিচারক নয়। তাঁর পেট খারাপ হয়। মাঝে মাঝে মেজাজও। সে ভাবে যে ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে ডিসকাউন্ট পেলে মন্দ হয় না। তবে যখন দেখে যে পুকুর চুরি হচ্ছে, তখন বাধা দেয়।
‘গুন্ডে’ আর ‘বরফি’তে রণবীর কপূর, রণবীর সিংহ আর অর্জুন কপূরের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
এদের অল্প বয়স। তবে অভিনয় ওদের কাছে টাইমপাস নয়। রণবীর কপূরের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। চিন্তাভাবনায় গভীরতা আছে। কোনও স্টারসুলভ ইগো নেই ওর মধ্যে। ওর বয়সে আমার কিন্তু অভিনেতাসুলভ ইগো ছিল!
‘গুন্ডে’তে আমার চরিত্রটা এক জন আইনজীবীর। অর্জুন আর রণবীর (সিংহ) যে গ্যাং-টা চালায় সেটাকে আইনসিদ্ধ করার চেষ্টা করছে সে। রণবীর ইনটেন্স অভিনেতা। ওর ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ দেখে আমি অভিভূত। আর অর্জুনের রসবোধ দারুণ। সেটাই ওর অভিনয়ে ধরা পড়ে। |
|
|
|
রণবীর কপূরের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি।
কোনও স্টারসুলভ
ইগো নেই ওর মধ্যে |
রণবীর ইনটেন্স অভিনেতা।
ওর ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’
দেখে আমি অভিভূত |
অর্জুনের রসবোধ দারুণ।
সহজে অন্যকে হাসাতে পারে।
সেটাই ধরা পড়ে ওর অভিনয়ে |
|
দুই রাজকুমারের সঙ্গে কাজ করছেন?
হ্যাঁ। মে মাস থেকে রাজকুমার হিরানির ‘পিকে’র শ্যুটিং শুরু। রাজকুমার সন্তোষীর ‘ফটা পোস্টার নিকলা হিরো’র শ্যুটিং প্রায় শেষ। শাহিদ কপূর হিরো। এতে আমি দ্বৈত ভূমিকায়। জীবনে এই প্রথম।
আপনি ব্ল্যাক কমেডিতে দক্ষ। সেক্স কমেডির চলটা কেমন লাগে?
সেক্স কমেডি নিয়ে আমার আপত্তি নেই। তবে তাতে যদি শুধু সেক্স থাকে তা হলে তো পর্ন দেখাই ভাল!
অনুরাগীরা কি আপনাকে বলে, ‘অমুক দৃশ্যটা করে দেখান প্লিজ’?
এটা তো প্রায়ই হয়। আমার বন্ধু মনোজ বাজপেয়ী এক পার্টিতে গিয়েছিল। সেখানে এক সার্জেন একটা দৃশ্য অভিনয় করে দেখাতে বলেছিলেন। মনোজ উত্তরে বলে, “আমি অভিনয় করে দেখাব। আপনি একটা সার্জারি করে দেখাবেন তো?” আমাকে কেউ কোনও দৃশ্য অভিনয় করে দেখাতে বললে আমিও তাই বলি।
স্ত্রী বাঙালি। বাংলা ছবি করবেন না?
নিশ্চয়ই। বাড়িতে শুক্তো আর চচ্চড়ি খাই। আমার ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ভাল লাগে। ‘আবহমান’-এ দীপঙ্কর দের চরিত্রটা কী অসাধারণ ছিল! ও রকম চরিত্র বাংলা ছবিতে পেলে আমি তো প্রতি মাসে কলকাতা যেতে রাজি। আর ভাষা? আমি তো তামিলে ‘হে রাম’ করেছি, যদিও ভাষাটা বুঝি না।
শেষে বলুন তো, কোনও দিন জিমে গিয়েছেন আপনি?
আমি দায়িত্ব নিয়ে জিম মালিকদের আরও ধনী করতে সক্ষম হয়েছি। প্রতি মাসে টাকা দিই তবে ঠিক মতো জিমে যাই না। খুব কম মানুষ জানেন আমি রোজ তিন ঘণ্টা টেবিল টেনিস খেলি। |
|
|
|
|
|