|
|
|
|
তারাবাজি |
রংবাজ
এঁরা কেউ দোল খেলার জন্য নজর কাড়েননি। তবে এঁদের ব্যক্তিগত জীবন যথেষ্ট রঙিন।
নানা রঙের দিনগুলি কেমন ছিল? শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
|
এলিজাবেথ টেলর
রঙিন মেজাজের নারীদের লিস্টে প্রথমেই নাম থাকবে হলিউড অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরের। আটটা বিয়ে। তার মধ্যে স্যার রিচার্ড বার্টনকে দু’বার বিয়ে করেছিলেন টেলর। এই ধরনের মহিলা আজকাল কোথায় দেখা যায়! ডিজাইনার রীতু কুমারের মতে, “সত্যিই লিজ টেলর রঙিন ছিলেন। ইতিহাস তো সব সময় রিপিট করে না। তাই হয়তো ওই রকম এক জন কালারফুল মহিলাকে আমরা আর দেখতে পাইনি।”
তবে আমাদের দেশের মহিলাদের কথা যদি বলা হয় তবে প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে মহারানি গায়ত্রী দেবীর, বলেন রীতু। “ভাল করে চিনতাম ওঁকে। ওঁর মা ইন্দিরা দেবী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন। অসম্ভব সুন্দরী মহিলা ছিলেন। এবং দারুণ শৌখিনও। মেয়ে গায়ত্রীও সেই ধারাই পেয়েছিলেন। উনি রঙিন শাড়ি না পরেও খুব রঙিন ছিলেন। ছোটবেলায় শিকার করতে যেতেন কুচবিহারে। তার পর কলকাতায় থাকতেন। গাড়ি চালানো, পোলো ম্যাচ দেখা, পার্টি করা সে একদম আলাদা এক জীবন। যাকে বলে খুব কসমোপলিটান,” বললেন রীতু।
বিয়ের পর চলে যান জয়পুর। “কত গল্প শুনেছি! জ্যাকলিন কেনেডিও এসেছিলেন ওঁর বাড়িতে। তবে জীবনের নানা ওঠাপড়াও সামলাতে হয়েছে তাঁকে। জেলও খেটেছিলেন। এই মানুষটি আমার চোখে বহুমুখী-বহুবর্ণময় এক চরিত্র। তাঁর সেই স্মৃতি আজও আমার কাছে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে,” বলেন রীতু।
|
|
উস্তাদ বিলায়েত খান
‘রং দিয়ে যায় চেনা’ উদ্ধৃতিটি বোধহয় উস্তাদ বিলায়েত খানের জন্যই লেখা! স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পণ্ডিত বিজয় কিচলু বললেন, “আমার সঙ্গে ওঁর যখন প্রথম পরিচয় হয়, তখন উনি রোজ সন্ধেবেলায় থ্রি-পিস স্যুট পরতেন। মুখে থাকত একটা পাইপ। সঙ্গে থাকত এক টিন ৫৫৫ ব্র্যান্ডের সিগারেট। পালা করে পাইপ আর সিগারেট খেতেন। প্রায় প্রতি সন্ধেতে উনি গ্র্যান্ড হোটেলের নাইট ক্লাবে যেতেন। অসাধারণ বলরুম ডান্সার ছিলেন উনি। ওঁর নাচ নিয়ে আমাকে অনেক গল্প বলতেন। বলেছিলেন এক বার কী ভাবে বেলজিয়ামে এক নাচের প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন।”
শৌখিন মানুষ ছিলেন তিনি। “দর্জিকে বাড়িতে ডেকে নিজের মাপ মতো পছন্দসই কাটের পাজামা-পাঞ্জাবির জন্য কাপড় কেটে দিতেন। তার পর দর্জি সেটা নিয়ে গিয়ে সেলাই করে আনত। রান্না করতে আর মানুষকে খাওয়াতে খুব ভালবাসতেন। শেষের দিকে ভালবাসতেন তাস খেলতে। ওঁর সঙ্গে আমি কত বার তিনপাত্তি খেলেছি। তবে সব থেকে ভালবাসতেন গাড়ি। এক বার তো আফগানিস্তানের রাজা ওঁকে একটা মার্সিডিজ উপহার দিয়েছিলেন। সেটা ওঁর এতই পছন্দ ছিল যে নিজে চালিয়ে মুম্বই থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন একটা প্রোগ্রাম করতে,” জানালেন পণ্ডিতজি।
|
|
এম এফ হুসেন
শিল্পী বলেই এম এফ হুসেন রঙিন ছিলেন না। শিল্পী যোগেন চৌধুরীর ভাষায় হুসেন রঙিন, কারণ উনি ক্যানভাসের রংটা জীবনের রঙে মিশিয়ে দিতেন। আদবকায়দাতে রঙিন। খালি পায়ে ঘুরতেন। নিজের ডিজাইন করা আকর্ষণীয় পোশাক পরতেন।
‘‘ওঁকে চিনি সত্তরের দশক থেকে। শান্তিনিকেতনেও গিয়েছিলেন পুরস্কার নিতে। বসন্ত উত্সবে ওঁকে কখনও দেখিনি। এলে আমি নিশ্চিত, মেয়েরা ওঁকে আপাদমস্তক রাঙিয়ে দিত। তাঁর সাদা দাড়ি হয়ে উঠত রঙিন,” বললেন যোগেনবাবু।
মহিলা মহলে হুসেন জনপ্রিয় ছিলেন। পছন্দ করতেন সুন্দরী মহিলাদের। মাধুরী, তব্বুকে নিয়ে ছবি করেছিলেন। এই অভিনেত্রীদের ছবি মুক্তি পেলে গোটা সিনেমা হলটা একা বুক করে নিজে ছবি দেখতেন। তার পর যোগেনবাবু বলেন কলকাতাতে ‘গজগামিনী’ দেখানোর সময়ের এক মজার ঘটনা। “হুসেন এসেছিলেন। মিডিয়ার প্রচুর লোকজনও উপস্থিত। অনেকেই আমাকে ঠেলে দিচ্ছিলেন হুসেনের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য। হঠাত্ উনি সামনে থেকে দু’তিন জন অল্পবয়সি সুন্দরী মেয়েকে ডেকে নিলেন। হুসেন জানতেন যে ছবিগুলো খবরের কাগজে ছাপবে। বুঝতেন আমার সঙ্গে ছবি তোলার থেকে অল্পবয়সি সুন্দরীদের সঙ্গে ছবিটা বেশি আকর্ষণীয় হবে। এটা বুঝতে পেরে সরে আসি। ওঁর সঙ্গে বহু ছবি তুলেছি। তবে আজও এই ঘটনাটা মনে পড়লেই মজা পাই,” বললেন তিনি।
|
|
কিশোর কুমার
রঙিন মানুষ বলেই অনুরাগ বসু কিশোর কুমারকে নিয়ে ছবি বানাবেন বলে ঠিক করেছেন। শু্যটিং শুরু হবে এই বছরের শেষে বা সামনের বছরের গোড়ার দিকে। কিশোর কুমারের গান ও সিনেমার জনপ্রিয়তা আজও যে রকম অক্ষুণ্ণ, ঠিক সে রকমই কৌতূহল তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। কত রকমের গল্প রয়েছে তাঁকে ঘিরে! “উনি তো গাছের সঙ্গে গল্প করতেন,” বললেন অনুরাগ। প্রত্যেকটা গাছের একটা নাম দিতেন, যেমন জনার্দন, রঘুনন্দন, গঙ্গাধর, জগন্নাথ, ঝটপটাঝটপটপট! আরও কত কী। পরিচালকের মতে, “গ্রামের দিকে একটা ধারণা আছে যে গাছের সঙ্গে কথা বললে গাছ ভাল করে বেড়ে ওঠে। সেটা মাথায় রেখে হয়তো উনি গাছের সঙ্গে কথা বলতেন”। আরও বললেন, “ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তেমন পছন্দ ছিল না। নিজের দু’চার জন বন্ধুর সঙ্গেই মিশতেন। আমি ছবিটি করার জন্য অনেক সাক্ষাত্কার নিয়েছি। রুমা গুহ ঠাকুরতা, লীনা চন্দ্রভরকর, সবার সঙ্গেই কথা বলেছি। সবাই একটাই কথা বলেছেন মানুষ কিশোর কুমারকে তাঁরা ভালবেসেছিলেন কারণ তিনি ছিলেন ভেতর থেকে রঙিন। ভাল মনের মানুষ ছিলেন তিনি। তবে যাঁরা তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতেন না, তাঁরা হয়তো ওঁর স্ক্রিন ইমেজটা দেখেই ওঁকে রঙিন বলতেন।” শেষ বার যখন কলকাতায় প্রোগ্রাম করতে এসেছিলেন স্টেজে উঠে ডিগবাজি খেলেন। এটাও কি তাঁর রংবাজির নিদর্শন নয়?
|
|
|
|
|
|
|