বসন্তে বিভ্রাট!
রঙের উত্সবে স্পর্শের উষ্ণতা মিশে থাকেই। কিন্তু এত গরম দোল বাঙালি অনেক দিন দেখেনি।
আজ, বুধবার সকাল থেকেই ফাগ আর গুলালের জেগে ওঠার কথা। পাড়ায় যে বাড়িটা সবচেয়ে অভিজাত বলে পরিচিত, তারই জানলার ফাঁক বা ছাদের পাঁচিল টপকে ধেয়ে আসবে বালতি ভরা রং। বেলা গড়াতেই রঙে ভূত হয়ে শুরু হবে গলি ক্রিকেট।
কিন্তু এ বার যেন মাথা বাঁচানোই দায়। অন্য বার বাতাসে যে শিরশিরে ভাবটা থাকে, প্রথম বার ঝাপটে আসা রঙের ছোঁয়ায় যে ছ্যাঁক করে কেঁপে ওঠে শরীর, এ বার তা কোথায়? বরং রোদ্দুর যে ভাবে চোখ রাঙাচ্ছে, তাতে মাথার ঘাম পায়ে পড়ার জোগাড়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “অন্য বছর দোল হয় ফাল্গুনে। এ বছর হচ্ছে চৈত্রের মাঝামাঝি। তাই এই গরম।” তাঁদের পূর্বাভাস, আজ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৮ ডিগ্রি ও ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকবে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩ ডিগ্রি বেশি। দক্ষিণবঙ্গে ঝড়বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।.তবে বিকেলের দিকে উত্তরবঙ্গ পেতে পারে কালবৈশাখী।
রাজ্যের অন্যতম চরমভাবাপন্ন জেলা পুরুলিয়ায় মঙ্গলবারই ছিল বেশ গরম। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ২০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গরম উপেক্ষা করেই উত্সবের প্রস্তুতি চলছে। দেখা মিলছে পলাশের। টানা ছুটির সুযোগে পর্যটকের ভিড় জমতে শুরু করেছে অযোধ্যা পাহাড়েও।
বাঁকুড়ায় দোলের দিন পারদ ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে, আশঙ্কা হাওয়া অফিসের। বিষ্ণুপুর রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের খেদ, “বসন্তের চেনা ছবিটা মোটেই পাচ্ছি না।” বীরভূমের শ্রীনিকেতন আবহাওয়া দফতর জানায়, এ দিন শান্তিনিকেতনের তাপমাত্রা ছিল প্রায় পুরুলিয়ার মতোই। তবে তাতে কী? প্রতি বারের মতোই ফের বসন্ত উত্সবে মাততে চলেছে শান্তিনিকেতন।
সূর্যের তাপ বাড়লেও নিম্নচাপ অক্ষরেখার কারণে উত্তরবঙ্গ এখনও রয়েছে কিছুটা স্বস্তিতে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল শিক্ষক সুবীর সরকার জানান, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখনও ৩৩-৩৪ ডিগ্রির আশেপাশে রয়েছে। মাঝে-মধ্যেই হাওয়া বইছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “গত সপ্তাহ থেকেই একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরবঙ্গ এবং সিকিম থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেটি বরাবর ঘুর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। দোলের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।” |