দেবযানী অপমৃত্যু মামলা
চার বছর জেল প্রাক্তন এসএফআই নেতার
গায়ে বিবর্ণ টি-শার্ট আর আকাশি রঙা ট্র্যাকস্যুট। পায়ে চপ্পল। জেল হেফাজত থেকে বেরিয়ে পুলিশ বেষ্টিত হয়ে এজলাসে ঢোকার আগে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাচু মুখে তাকিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, “জামিন পাব তো?”
কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তর পেয়ে গেলেন অর্ক পোদ্দার। বাঁকুড়ার এসএফআই নেত্রী দেবযানী নন্দীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে চার বছর জেল হল ওই জেলারই প্রাক্তন এসএফআই নেতা অর্কের। মঙ্গলবার বিষ্ণুপুর ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক প্রসাদকুমার রায় এই সাজা শোনান। সোমবার অর্ককে দোষী সাব্যস্ত করে জেল হাজতে পাঠিয়েছিলেন বিচারক। তাই সাজা হওয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল। তবু মনের কোণে একটা কোথাও একটা আশা ছিল ওই যুবকের। সে জন্যই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিলেন, জামিন পাবেন কি না। মামলার সরকারি আইনজীবী গুরুপদ ভট্টাচার্য বলেন, “বিচারক ৩০৬ ধারায় অর্ককে দোষী সাব্যস্ত করে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ১০ হাজার টাকার জরিমানা। অনাদায়ে আরও এক বছর কারাবাসের নির্দেশ দিয়ে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন।”
দেবযানী। পারিবারির অ্যালবাম থেকে পাওয়া।
২০০৮ সালে এসএফআইয়ের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন অর্ক। বাঁকুড়ার জয়পুরের চাতরা রামাই পণ্ডিত কলেজের ভূগোল অনার্সের ছাত্রী স্থানীয় গেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা দেবযানী ছিলেন সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি। পুলিশ সূত্রের খবর, এক সঙ্গে ছাত্র সংগঠন করার সময়ে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। সংগঠনের কাজে তাঁরা এক সঙ্গে দিল্লিও গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পরে দু’জনের দূরত্ব বাড়ে। ২০০৮ সালের ৫ অগস্ট দেবযানীর মৃতদেহ মেলে আসানসোলের কালিপাহাড়ি স্টেশনের কাছে রেললাইনের ধারে। অর্কর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন দেবযানীর বাবা, সিপিএম নেতা বৈদ্যনাথ নন্দী।
ওই বছর ১৬ সেপ্টেম্বর বিষ্ণুপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করার পরে দু’মাস জেল খেটেছিলেন অর্ক। তার পর থেকে তিনি জামিনে মুক্ত ছিলেন। এ দিন সাজা শোনার পরে দৃশ্যতই ভেঙে পড়েন তিনি। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে ফেলেন, “আমার বাবা-মা অসুস্থ। আমি একমাত্র ছেলে। ওদের কে দেখবে? আমাকে বাঁচান স্যার! আমি নির্দোষ।” সাজা শোনার পরে প্রিজন ভ্যানে জেল হাজতে যাওয়ার রাস্তাতেও চোখের জল বাঁধ মানেনি।
রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অর্ক।
এজলাসের দ্বিতীয় সারির আসনে বসেছিলেন ২১ বছরের মেয়েকে হারানো পঞ্চাশোর্ধ্ব বৈদ্যনাথবাবু। তাঁর কথায়, “বিচার ব্যবস্থার উপর আমার বরাবরই আস্থা আছে। চার বছরের বেশি জেলের বাইরে থাকলেও এ বার চার বছর জেলে কাটাক। আমি এই রায়ে খুশি।” কাঁধের ঝোলা ব্যাগ থেকে মেয়ের পুরনো ছবি দেখাতে দেখাতে বৈদ্যনাথবাবু বলেন, “ভূগোল অনার্সে ৫৯ শতাংশ নম্বর ছিল। এত দিনে আমার মেয়ে হয়তো মাস্টারি করত। সাংবাদিকতা নিয়ে পড়বে বলে অর্কর সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফর্মও তুলতে গিয়েছিল।” তাঁর ক্ষোভ, মেয়ের মৃত্যুর জন্য বিচার চেয়ে বিভিন্ন মহলে দরবার করেছেন। নিজে পার্টি করা সত্ত্বেও স্থানীয় মানুষ ছাড়া কারও সাহায্য পাননি।
আদালত চত্বরে নিজেদের আইনজীবীর পাশে বসেছিলেন অর্কর বাবা, পেশায় সরকারি পশু চিকিৎসক প্রবীর পোদ্দার। ভাঙা গলায় শুধু বললেন, “ছেলে নির্দোষ। হাইকোর্টে যাচ্ছি। এর বেশি এখন আর কিছুই বলতে পারছি না।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সম্পাদক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা আরও কঠোর সাজা চেয়েছিলাম। তবে, যা সাজা হয়েছে, তাতে আমরা খুশি। দেবযানীর পরিবার অন্তত বিচার পেল।” তাঁর অভিযোগ, সেই সময় সিপিএম এই ঘটনাটিকে আড়াল করার অনেক চেষ্টা করেছিল। অর্কর বিরুদ্ধে অভিযোগও লঘু করা হয়েছে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক ধর্মেন্দ্র চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “অর্ককে অনেক আগেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তাঁর সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর কী সাজা হল, সে নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্যও নেই।”

ছবি: শুভ্র মিত্র।

পুরনো খবর :



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.