শহরের অধিকাংশ বাজারেই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। নেই জলের জোগানও। সম্প্রতি কলকাতার সব ক’টি সরকারি ও বেসরকারি বাজার সমীক্ষা করে এমনই তথ্য পেয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে মোট বাজার ৩৫৮টি। এর মধ্যে পুরসভা পরিচালিত ৪৬টি। শিয়ালদহে সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসে পুর-প্রশাসন।
অগ্নিদগ্ধ বাজারের হাল দেখে ঘটনার দিনই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “বাজারের ভিতরে রান্না করা যাবে না। রাতে লোক থাকাও বন্ধ করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই শহরের সমস্ত বাজারের হাল দেখতে বিশেষ দল গঠন করেছিল পুর-প্রশাসন। তাতে পুরসভার বাজার দফতরের অফিসার-সহ সিইএসসি ও দমকলের কর্মীরাও ছিলেন। পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ বলেন, “কলকাতার ১৫টি বরোর সব ক’টি বাজারে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কি না, ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ের অবস্থা কেমন, সিঁড়ি আছে কি না, আগুন নেভাতে জলের জোগান কেমন, বাজারে রান্না হয় কি না এবং রাতে বাজারের ভিতরে লোকজন শুয়ে থাকে কি না এ সব খতিয়ে দেখতেই মূলত সমীক্ষা চলে। তিনি জানান, ১৫ দিন ধরে চলা ওই সমীক্ষা গত ১৮ মার্চ শেষ হয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে মঙ্গলবার পুরসভায় বৈঠক বসে। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ তারক সিংহ, পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ-সহ দমকল, সিইএসসি ও পুলিশের পদস্থ কর্তারা। |
মেয়রের বক্তব্য, “সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে পুরসভার ৪৬টি বাজারের ব্যবস্থা ভালই। কিন্তু শহরের অন্যান্য বেশ কয়েকটি বাজারে অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা মোটেই ভাল নয়।” দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, “ওই সব বাজারে নোটিস পাঠানো হবে। তার পরেও যদি অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা যথাযথ না হয়, তা হলে ওই বাজারের কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শহরের বাজারগুলির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে যে টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে এ দিন বৈঠকে জানিয়েছেন, বেসরকারি ছোট বাজারগুলির পক্ষে দমকলের নিয়মনীতি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। রাজ্য সরকার তাদের কিছু আর্থিক সুবিধা দিলে দমকলের নিয়ম মেনে তারাও ব্যবস্থা নিতে পারে। রবীন্দ্রনাথবাবুর মতে, ব্যবসায়ীদের যে পদ্ধতিতে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেই সহজ পদ্ধতিতে ফায়ার লাইসেন্সও দেওয়া উচিত।
মেয়র যে দাবিই করুন না কেন, পুরসভার সমীক্ষায় কিন্তু বলা হয়েছে, পুরসভার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা একেবারেই ভাল নয়। বাজারগুলি নিয়ে সমীক্ষার রিপোর্টে রীতিমতো কপালে ভাঁজ পড়েছে কর্তাদের। প্রায় সব বাজারই বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন দমকলের এক অফিসার। |