মানুষ থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে চাইলে পুলিশকে অভিযোগ নিতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটাই নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গরফা থানা দেখিয়ে দিল নেতা-মন্ত্রীর সুপারিশ ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে অভিযোগ দায়ের করা কত কঠিন।
গত কালই কলকাতার নগরপাল সুরজিৎ করপুরকায়স্থ পুলিশকে মাথা উঁচু করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, রং না দেখে অপরাধ অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের বক্তব্য স্পষ্ট করে দিল, ওজনদার নেতা-মন্ত্রীর ফোন ছাড়া আম-আদমির নালিশ নিতে কতটা অনীহা থানার। মন্ত্রী জাভেদ আজ স্বীকার করেছেন, তাঁর হস্তক্ষেপে ধানবাদের এক বাসিন্দা তাঁর মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করতে পেরেছেন গরফা থানায়। তার আগে দক্ষিণ কলকাতার ওই থানা অভিযোগ নেয়নি। তবে অস্বস্তি এড়াতে মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমি ফোন না করলেও থানা এফআইআর নিত। হয়তো একটু দেরি হত। তবে ওই পরিবারটি যদি আমার কোনও সাহায্য চায় আমি সাহায্য করব।”শ্বশুরবাড়িতে মেয়ে খুন হয়েছে, এই অভিযোগ দায়ের করতে গত ২২ মার্চ গরফা থানায় যান ধানবাদের ঝরিয়ার বাসিন্দা মদনমোহন দত্ত। তাঁর অভিযোগ, অনেক বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও থানা প্রথমে এফআইআর নেয়নি। ২১ মার্চ রাতে মেয়ে ঝিমলি ফোন করে জানিয়েছিলেন তাঁকে মারধর করা হয়েছে। মদনমোহনবাবু ওই রাতেই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিই। ২২ তারিখ ভোরবেলা তিনি ফোন পান, রুবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে মেয়েকে। বলা হয়, ঝিমলি গলায় দড়ি দিয়েছিলেন। কলকাতায় পৌঁছে মদনমোহনবাবু জানতে পারেন মেয়ে মারা গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “আমি নিশ্চিত মেয়েকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওর মৃতদেহ যখন আমি দেখি,
|
ঝিমলি দাস |
তখন ওর পিঠে কালসিটের দাগ ছিল। ওই দিনই গরফা থানায় গিয়ে এফআইআর করতে চাই। কিন্তু থানা কিছুতেই অভিযোগ নিতে চায়নি। বরং আমার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করা হয়। আমি যে মেয়ের বাবা তার প্রমাণ চাওয়া হয়েছে বার বার। এমনকী, আমি আমার মেয়েকে খুন করেছি এমনও সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন পুলিশ অফিসাররা।”
মদনমোহনবাবুর অভিযোগ, “মেয়ের শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয় সেনাবাহিনীতে আছেন। তিনি থানায় সেনাবাহিনীর লোকজন এনে আমায় ভয় দেখিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত একটি সূত্র মারফত মন্ত্রী জাভেদ খানের দ্বারস্থ হই। মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত থানা অভিযোগ নেয়।”
২০০৯-এ কসবার নিউ পার্কের পি মজুমদার রোডের এ ব্লকের বাসিন্দা অভিষেক দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় টাকার দাবিতে ঝিমলির উপর শারীরিক নির্যাতন করা হত শ্বশুরবাড়িতে। আজ ঝিমলির পারলৌকিক কাজকর্ম হয় তাঁর বাপের বাড়িতে। পাড়ার মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ঝরিয়ার বাঙালি অধ্যুষিত পোদ্দার পাড়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে ঝাড়খণ্ডের উচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করেছেন সেখানকার মানুষ।
মদনমোহনবাবুর অভিযোগ, “রুবি হাসপাতাল যে মেয়েকে মৃত অবস্থায় পেয়েছে তা-ও তারা লিখে দিয়েছিল। পুলিশ তবু কোনও মামলা চালু করেনি। জামাইকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও শ্বশুরবাড়ির অন্য কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। আমার মেয়ের একটি দেড় বছরের বাচ্চা রয়েছে। তার সঙ্গেও আমাদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
গরফা থানার তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, “মৃতার শ্বশুরবাড়িতে তালা দেওয়া আছে। তাই এখনও পর্যন্ত স্বামী ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতে দিন ১৫ লাগবে। সেই রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।” |