পরীক্ষা চলছে ভিতরে। সেই সময়েই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে তারস্বরে বক্স বাজিয়ে, নাচানাচি করে, আবির মেখে পালন করা হল বসন্তোৎসব! এবং অভিযোগ সেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র বিরুদ্ধেই। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার।
শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে উৎসব উদ্যাপন বন্ধ হলেও প্রশ্ন উঠেছে ওই ছাত্র সংগঠনের সচেতনতা নিয়ে। টিএমসিপি-র দাবি, ক্যাম্পাসের ভিতরে নয়, বাইরেই এ-সব করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে একাদশ-দ্বাদশের পরীক্ষা চলছিল পাশের হিন্দু-হেয়ার স্কুলেও। ক্যাম্পাসের ভিতরের উৎসবে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়েছে, একই ভাবে ক্যাম্পাসের বাইরে বক্স বাজালে হিন্দু-হেয়ারের পরীক্ষার্থীদেরও তো সমস্যা হওয়ার কথা! তা হলে? এর উত্তর নেই টিএমসিপি নেতৃত্বের কাছে।
স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে দোলের আগের দিন রং মাখানো নতুন ঘটনা নয়। প্রতি বছরই তা হয়। রবীন্দ্রভারতীর দু’টি ক্যাম্পাসে কয়েক দিন আগে থেকেই আবির খেলা চলছে। কিন্তু ক্লাস চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বক্স বাজিয়ে, নেচে বসন্তোৎসব উদ্যাপনের নজির কার্যত বিরল। কী হয়েছিল এ দিন? |
চলছে নাচ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে। —নিজস্ব চিত্র |
দুপুরে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ হলের সামনে গাছের ডালে ঝোলানো রয়েছে ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ’-এর ব্যানার। তাতে লেখা ‘হ্যাপি হোলি’। আর সেই ব্যানারের সামনে রাখা বক্সে বাজছে ইংরেজি গান। তার তালে তাল মিলিয়ে নাচতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। নাচের ফাঁকে ফাঁকে চলছে বন্ধুদের রং-আবির মাখানো এবং ছবি তোলা। শুধু আশুতোষ হলের সামনেই নয়। দ্বারভাঙা হল, শতবার্ষিকী হলের সামনেও চলে একই রকম মাতন। ভিতরে তখন ক্লাস হচ্ছে, পরীক্ষাও চলছে। তা হলে এ ভাবে গান বাজিয়ে দোলখেলা চলছে কেন?
উৎসব পালনে ব্যস্ত ছাত্রছাত্রীদের জবাব, “দোলের দিন আসতে পারব না। তাই এ দিনই খেলে নিলাম।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এ দিন ছিল ফাইন আর্টসের পরীক্ষা। ১৪২ জন পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, “প্রথমে বুঝতে পারিনি, কী হচ্ছে। তার পরে জানতে পারলাম ঘটনাটা কী।” এমনটা হল কী করে? উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মতি নিয়েও কেউ কিছু করেনি। এমনটা ঘটছে জানতে পেরেই তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিই।”
শিক্ষক-অধ্যক্ষদের শারীরিক ভাবে নিগৃহীত করে, রাতভর ঘেরাও করে, এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কাকে ভাড়া দেওয়া হবে, তা নিয়ে উপাচার্যকেই রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি। এ বার পঠনপাঠন, পরীক্ষা চলাকালীন তারস্বরে চটুল গান বাজিয়ে আর উদ্দাম নাচানাচি করে নতুন বিতর্ক তৈরি করল তারা। যদিও সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, “কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরেই গোটা ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে অবিলম্বে তা বন্ধের নির্দেশ দিই। পড়ুয়ারা তা বন্ধও করে দেন।” |