কাও কোথায় এলাকা জানে, জানে না পুলিশ
ধাপা-মাঠপুকুর কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাওকে ধরতে পুলিশের ‘ব্যর্থ’ হানার নজির ক্রমশ বাড়ছে। অথচ বাইপাস সংলগ্ন গড়িয়া থেকে মহিষবাথানের বিভিন্ন জায়গায় যে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে, এমনটা শোনা যাচ্ছে এলাকায় গেলেই। কিন্তু ‘খবর’ পেয়ে পুলিশ যেখানে যেখানে পৌঁছচ্ছে, তার আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন শম্ভু।
এলাকার খবর, সোমবার রাতে পূর্ব-যাদবপুর থানার মুকুন্দপুরে একটি লজে বেশ খোশ মেজাজেই ছিলেন শম্ভু। রাতে মুকুন্দপুরের একটি হোটেল থেকে প্রিয় মটর পনির, রুটি ও কলা আনিয়ে লজে বসে খেয়েছেন। কিছুটা হাল্কা মেজাজে লজের কর্মচারীদের সঙ্গেও কথাও বলেছেন শম্ভু। তার পর ভোরে ট্যাক্সিতে চেপে এলাকা ছেড়েছেন। কয়েক জন স্থানীয় ব্যবসায়ীও শম্ভুনাথকে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। এ দিকে, ওই রাতে মুকুন্দপুর এলাকায় পূর্ব-যাদবপুর থানার পুলিশের একাধিক টহলদারি ভ্যানকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকী, মঙ্গলবার রাতেও শম্ভুকে কামারডাঙায় দেখা যায় বলে এলাকা সূত্রে খবর।
গত শনিবার রাতে সন্তোষপুর এলাকায় এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে রাতে শম্ভু আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে খবর মিলেছিল। গভীর রাতে ওই বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা আগেই কোনও ভাবে পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে ওই ডেরা ছেড়েছিলেন শম্ভু।
কয়েক দিন আগে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলরের খোঁজে তল্লাশি হয় উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়াতে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ ওই অভিযানের কথা অস্বীকার করলেও পুলিশ সূত্রেই খবর, কয়েক দিন আগে সেখানে হানা দেওয়ার কিছু আগেই পালিয়ে যান ধাপা-মাঠপুকুর কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কাউন্সিলর। সঙ্গে ছিলেন আর এক অভিযুক্ত অজয় দুলুই।
উলুবেড়িয়ার যে বাড়িতে শম্ভুনাথ লুকিয়েছিলেন, সেটি ধাপা-মাঠপুকুর কাণ্ডের ওই অন্য অভিযুক্তের আত্মীয়ের বাড়ি বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই অভিযুক্তের এক আত্মীয়কে অস্ত্র আইনে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছেন গোয়েন্দা বিভাগের গুণ্ডাদমন শাখার অফিসাররা। তাঁকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করে পুলিশ। আদালত ধৃতকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
মাঠপুকুরের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই শম্ভুকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তবু তাঁকে গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। সোমবার রাতে পূর্ব-যাদবপুর থানার একাধিক অফিসার হাজির ছিলেন। তা সত্ত্বেও ঢিলছোড়া দূরত্বে লজে শম্ভুর উপস্থিতির বিষয় টের পায়নি পুলিশ। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মুকুন্দপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ওই লজে শম্ভুকে খাবারও পৌঁছে দেওয়া হয়। এবং সবই ঘটেছে পুলিশি টহলদারি মধ্যেই। পুলিশের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, শম্ভুকে ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের মধ্যে যে সমন্বয় প্রয়োজন, তা কি হতে দিচ্ছে না কোনও চক্র?
পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছে, ইকবালকে ধরার ক্ষেত্রে যেমন কিছু ছিদ্র পুলিশকে তদন্তে সাহায্য করেছিল, শম্ভু কাওয়ের ক্ষেত্রে তেমন কিছু মিলছে না। পরিবার ও ঘনিষ্ঠ যে সব লোকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হবে বলে মনে করেছিল পুলিশ, তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন না শম্ভু। অথচ বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে সাধারণ ভাবেই এলাকায় ঘুরছেন শম্ভু।
মাঠপুকুরে একটি বহুতল নিয়ে গোলমালের সময়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অধীর মাইতিকে খুনের এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শম্ভু-সহ বাকি সাত অভিযুক্তকে এখনও ধরা যায়নি। ইতিমধ্যে গত শনিবার প্রগতি ময়দান থানার ওসি ইন্দ্রনীল চৌধুরীকে বদলি করা হয়। অতিরিক্ত ওসি দেবাশিস চক্রবর্তীকে থানার চার্জ দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সরোজকুমার ঘোষ প্রগতি ময়দান থানার ওসি-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের কাছে খবর আসছে যে, আদালতে আগাম জামিনের বিষয়েও ভাবছেন শম্ভু। ঘনিষ্ঠ কয়েক জন মারফত বালিগঞ্জে স্টেশন এলাকার জামির লেনের বাসিন্দা এক অতি ঘনিষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন তিনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.