একশো দিনের কাজে চাহিদা মত টাকা না মেলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর কর্তৃপক্ষের থেকে ২ কোটি টাকা ধারে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এনআরইজিএস প্রকল্পে জেলা আধিকারিকরা। ৩১ মার্চের মধ্যে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা হলেও নতুন বরাদ্দ না মেলায় কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে বুঝতে পারছেন না তাঁরা। শুধু ধারে নেওয়া টাকা শোধের চিন্তা নয়। জবকার্ডধারীদের পারিশ্রমিক বাবদ ৪ কোটি টাকা এবং নানা সামগ্রী কেনার খরচ বাবদ ২ কোটি টাকা বকেয়া। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ধারের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দ্রুত নতুন বরাদ্দের ৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। তা হাতে পেলে সমস্যা থাকবে না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর মাস থেকে একশো দিনের প্রকল্পে পর্যাপ্ত বরাদ্দ মিলছে না। ফেরুয়ারিতে আর্থিক সমস্যা এতটাই চরমে উঠেছিল যে সেই সময়ে জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে ২ কোটি টাকা ধার নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। কিন্তু তারপরে নতুন বরাদ্দ না মেলায় ধারের টাকা শোধ করা সম্ভব হয়নি। আর্থিক সমস্যায় প্রকল্পের কাজের গতি থমকে যেতে বসেছে।
সিপিএমের পরিচালিত মাথাভাঙার পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কাজল রায় গত শুক্রবার ওই প্রকল্পের কাজের প্রয়োজনীয় টাকার জন্য জেলাশাসকের দফতরের সামনে অবস্থান করেন। তাঁর অভিযোগ, টাকার অভাবে এলাকায় ১০টি প্রকল্পে কাজ বন্ধ। বকেয়া মজুরি চেয়ে জবকার্ডধারীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। প্রশাসনের কর্তাদের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে লাভ হয়নি। শুধু পচাগড় নয়। অন্য গ্রাম পঞ্চায়েতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসের কয়েকজন কর্তা জানান, ৩১ মার্চের মধ্যে ধারে নেওয়া টাকা শোধ করা জরুরি। সেটা না হলে চলতি আর্থিক বছরের ‘ওপেনিং ব্যালেন্স ক্লোজিং ব্যালেন্স’ মেলাতে সমস্যায় পড়বেন ডিআরডিসি কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও পণ্য সরবরাহকারী এবং ৫০ হাজারের বেশি জবকার্ডধারীর বকেয়া মেটানো না গেলে আইনি জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার অম্লান তালুকদার বলেন, “ধারের টাকা শোধ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ টাকা চাওয়া হয়েছে।” ডিআরডিসি-র প্রোজেক্ট ডাইরেক্টর কুমার ভূষাল বলেন, “আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পাওয়া যাবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জবকার্ডধারী পরিবারের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৯১ হাজার। ২০১১-২০১২ বছরে ৮৭ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। আবেদনকারীরা গড়ে ১৪ দিন কাজ করেছে। এ বার মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ৮৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গড়ে ২৭ দিন কাজ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের ৯৫ শতাংশ টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটও জমা পড়েছে। টাকার সমস্যায় এই বছরে জবকার্ডধারীদের ৪০ দিন কাজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। |