সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা পেতে আমজনতাকে সাহায্য করার লক্ষ্যে ওঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল। কথা ছিল, ওঁরা সরকারি হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁর বাড়ির লোককে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাবেন, ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন, দালালদের রমরমা ঠেকাবেন। গালভারী নামও দেওয়া হয়েছে ওঁদের রোগী সহায়ক। কার্যক্ষেত্রে তাঁদের প্রায় ঠুঁটো করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এবং এ ক্ষেত্রে যেমন আঙুল উঠছে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের দিকে, তেমন চিকিৎসকদের একাংশকেও দায়ী করা হচ্ছে।
যেমন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। ওখানকার রোগী সহায়কদের অভিযোগ: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের নির্ধারিত কাজ করতেই দিচ্ছেন না। রোগীর পরিজনকে সাহায্য করার কাজে লাগানোর পরিবর্তে প্রতি দিন তাঁদের টিকিট কাউন্টারে বসতে বাধ্য করা হচ্ছে। “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসক কেউ আমাদের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেন না। কথা বেশির ভাগ ডাক্তারবাবু শোনেন না। রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে তাঁরা দেখাও করেন না।” মন্তব্য এক সহায়কের।
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও প্রায় একই ছবি। ওখানকার রোগী সহায়কদের বক্তব্য, রোগীর ডিসচার্জ লিখতে চিকিৎসক দেরি করলে কিংবা রোগীর ঠিক কী হয়েছে তা বলতে না-চাইলে রোগীর বাড়ির লোক তাঁদের কাছে এসে জবাবদিহি চান। “কিন্তু আমরাই বা কী বলব? অনেক ডাক্তারবাবু তো আমাদের সঙ্গে দেখাই করেন না! তথ্যও দেন না।”
সহায়কদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ-চিকিৎসকদের এ হেন অসহযোগিতার জের তাঁদেরই সামলাতে হচ্ছে। চাহিদামতো তথ্য জোগাতে না-পারায় হামেশা তাঁদেরই খামোকা রোগীর পরিজনের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল ও বারাসত হাসপাতালের রোগী সহায়কদের অনেকের মুখেও এই আক্ষেপ “ডাক্তারবাবুরা ঠিক সময়ে রাউন্ডে আসছেন না। রোগীর বাড়ির লোককে কিছু জানাচ্ছেন না। ওঁদের হাতের সামনে না-পেয়ে মানুষের রাগ এসে পড়ছে আমাদের উপরে।” পাশাপাশি উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের রোগী সহায়কদের অভিযোগ: গত এগারো মাস যাবৎ তাঁরা বেতন পাননি। অথচ তার পরেও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ খারাপ ব্যবহার করছেন, বাড়তি কাজ চাপাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গে আপাতত চালু হওয়া ২২টি রোগী সহায়তা কেন্দ্রের কর্মীদের অভিযোগ কম-বেশি এমনই। কাজ করতে গিয়ে পদে পদে তাঁদের কী রকম বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে, সম্প্রতি এমআর বাঙুর হাসপাতালে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ শিবিরে তার ফিরিস্তি স্বাস্থ্য-কর্তাদের সামনে এ ভাবেই পেশ করেছেন রোগী সহায়কেরা। একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রের দেওয়া গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের টাকায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রস্তাবিত সংখ্যক রোগী সহায়তা কেন্দ্রের অর্ধেকও চালু করা যায়নি। ২০১১-১২ অর্থবর্ষের মধ্যে যেখানে অন্তত ৪৬টি সরকারি হাসপাতালে এই কেন্দ্র শুরু করার কথা ছিল, সেখানে ২০১৩-র মার্চ পর্যন্ত চালু হয়েছে সাকুল্যে ওই বাইশটি!
স্বাস্থ্য-কর্তৃপক্ষ কী বলেন? রোগী সহায়কদের অভিযোগ পেয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলছেন, “সরকারি হাসপাতাল, বিশেষত মেডিক্যাল কলেজগুলোয় রোগী সহায়তা কেন্দ্র তৈরির জন্য আলাদা জায়গা বার করাই মুশকিল। কোথাও কোথাও জায়গা পেলেও তা ঠিকঠাক করে সহায়তা কেন্দ্র চালু করতে একটু বেশি সময় লাগছে।” তবে রোগী সহায়কদের নির্দিষ্ট কাজ করতে না-দিয়ে অন্য কাজে লাগানোটা যে ‘অত্যন্ত অন্যায়’, অধিকর্তা তা স্বীকার করতে দ্বিধা করছেন না।
এই অন্যায়ের প্রতিকার হবে কী ভাবে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “প্রতিটি হাসপাতালকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।” |