জোটের জটে প্রশ্নে পুর পরিষেবা |
সৌমিত্র কুণ্ডু ও জয়িতা সরকার • শিলিগুড়ি |
মেয়রের ওয়ার্ডেই বেলা ২ টার আগে রাস্তা থেকে আবর্জনা তোলা হয় না। বিধান মার্কেট, হিলকার্ট রোড-সহ শিলিগুড়ি পুরসভার অন্য নানা ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরও একই অভিযোগ। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলিতে মশা মারার তেল নেই। মশার দাপটে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। অনেকেই বারবার কাউন্সিলরদের তা জানিয়েছেন। অথচ কাজ হয়নি। পুরসভার মাতৃসদনে চিকিৎসকের সমস্যা। বাসিন্দারা সুষ্ঠ পরিষেবা পান না বলে অভিযোগ তুলেছেন।
পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় গলি রাস্তাগুলির ভেঙেচুরে গিয়েছে। ২৬৭ টি অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। গত সাড়ে ৩ বছর ধরে সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ। বস্তুত, পুর পরিষবা নিয়ে বিরক্ত বাসিন্দারা তাই বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে জোটের পুরবোর্ড গঠন নিয়ে শুরু থেকেই কংগ্রেস-তৃণমূলে কোন্দল প্রকাশ্যে আসা এবং এখনও তা চলতে থাকায় তারা আশাহত হয়েছেন।
শহরের প্রবীণ বাসিন্দা বিদ্বজ্জনদের অনেকেই তাই বেহাল পরিষেবা নিয়ে মুখ খুলেছেন। লেখক হরেন ঘোষ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। তিনি বলেন, “মশার উপদ্রব গত কয়েক মাস ধরে মাত্রা ছাড়িয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ কী করছেন বুঝতে পারছি না। অবৈধ নির্মাণ নিয়েও শহরের বিভিন্ন এলাকায় নানা অভিযোগ উঠেছে। কোনও ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” সুভাষপল্লি এলাকার বাসিন্দা তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোতোষ বসুও পুর পরিষেবার হাল দেখে হতাশ। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নাগরিক পরিষেবার মান বাড়বে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তা তো বাড়েইনি। উল্টে বহু ক্ষেত্রে পরিষেবা তলানিতে পৌঁছেছে। অনেক মানুষই এ কথা ঘরোয়া আলোচনায় বলে থাকেন। এ ভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না।”
বস্তুত, ট্রেড লাইসেন্স, জলের সংযোগ নেওয়া, বিল্ডিং প্ল্যান পাস করানো সব কিছুতেই চূড়ান্ত গড়িমসি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তো লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। উপরন্তু, পুরবোর্ডে ক্ষমতাশীল কাউন্সিলরদের একাংশের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা অপব্যবহারের অভিযোগও সামনে এসেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে লেনদেনের অভিযোগ শুনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও বিল্ডিং প্ল্যান পাশের ক্ষেত্রে কয়েকজন কাউন্সিলর কেন নানা অছিলা খাড়া করেছেন তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমনকী বামেদের তরফে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা নুুরুল ইসলামও পুরসভায় অবাধ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন।
এমন নানা বিধ ‘ক্ষোভ’, ‘উদ্বেগ’, ‘সন্দেহ’ নিয়েই সাড়ে ৩ বছর পার করে দিয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূলের বোর্ড। বাকি দেড় বছরে কী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। |